শহিদ মজিদ: মুক্তিযোদ্ধার গেজেটভুক্তির আবেদন নিষ্পত্তির নির্দেশ
২৮ এপ্রিল ২০২৪ ২১:২৪
ঢাকা: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার আব্দুল মজিদের নাম শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বেসামরিক গেজেটে তালিকাভুক্ত করতে তার ভাইয়ের করা আবেদন ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে বোরবার (২৮ এপ্রিল) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. মনিরুল ইসলাম মিয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করে আইনজীবী মো. মনিরুল ইসলাম মিয়া বলেন, ‘১৯৭১ সালে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ বিশুবাড়ী হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তার রোল নম্বর ছিল-৫১২ এবং ১৯৭১ সালে রাজশাহী বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। তার এসএসসির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছিল- ১০৩৪২০/৬৯। তিনি ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২৭ মার্চ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মজিবুর রহমান সরকারসহ পাক হানাদার বাহিনীর কবল হতে দেশকে মুক্ত করার জন্য ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বিখ্যাত কাটাখালী সেতু ভেঙে পাকবাহিনীর অগ্রযাত্রা প্রতিহত করতে গিয়ে সম্মুখ যুদ্ধে শহিদ হন। এরপর দীর্ঘ ৫০ বছরেও আব্দুল মজিদকে শহিদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।’
পরবর্তীতে ২০০৩ সালের ৯ এপ্রিল আব্দুল মজিদের ভাই গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরে শহিদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আব্দুল মজিদের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য তার ভাই মোফাজ্জল হোসেন আবেদন করেন। ওই আবেদন অনুসারে গোবিন্দগঞ্জের ইউএনও ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ২০০৪ সালের ১৭ আগস্ট একটি চিঠির মাধ্যমে ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট তারিখে আব্দুল মজিদ শহিদ মুক্তিযোদ্ধা এমন দাবির স্বপক্ষে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ও সাক্ষ্য প্রমাণাদিসহ উপস্থিত থাকতে বলা হয়। ওই চিঠি অনুসারে রিট পিটিশনার সব কাগজপত্র ও স্বাক্ষ্য প্রমাণাদি উপস্থাপন করেন।
এরপর ২০০৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় অভিমত ২০০৪ সালের ২২ ডিসেম্বর গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠানো হয়। এতে এতে বলা হয়, সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চারটি তালিকা থাকলেও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ভোটার তালিকাটি গাইবান্ধার সাব-জজ (২য় আদালত) কর্তৃক ১৯৯৫ সালের ৯ সেপ্টম্বর তারিখের এক আদেশে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের বক্তব্য সংশ্লিষ্টদের অভিমত এবং স্থানীয়ভাবে গোপনে অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিম্নোক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক বলে কমিটির সব সদস্য অভিমত প্রকাশ করেছেন। ওই তালিকায় শহিদ আবদুল মজিদের নাম তালিকার ৩ নম্বর ক্রমিকে ছিল।
কিন্তু দীর্ঘ ৫০ বছরে আব্দুল মজিদের নাম শহিদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করায় ২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আবেদন করা হয়। ওই আবেদন নিষ্পত্তি না করায় গত ২৩ এপ্রিল আব্দুল মজিদের ভাই হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। আজ ওই রিটের শুনানি শেষে সচিব বরাবর করা আবেদন ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম