নারীর প্রতি সহিংসতায় কঠোর সাজার দাবিতে উত্তাল অস্ট্রেলিয়া
২৮ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:০৮
নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে অস্ট্রেলিয়া। দেশটিতে কেবল চলতি বছরেই সহিংসতার শিকার হয়ে অন্তত ২৭ নারীর মৃত্যুর ঘটনায় পথে নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। ঘেরাও হয়েছে সংসদ। চলমান পরিস্থিতিতে নারীর প্রতি পুরুষের সহিংসতা বন্ধের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ।
দ্য গার্ডিয়ান ও বিবিসির খবরে বলা হয়, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে কঠোর সাজার দাবিতে গত কয়েক দিন ধরেই বিক্ষোভ ও সমাবেশ করছেন হাজারও মানুষ। শনিবার অ্যাডিলেডে প্রায় তিন হাজার বিক্ষোভকারী সংসদ ভবন ঘেরাও করেন। শুক্র ও শনিবার ব্রিসবেন, মেলবোর্ন, দ্য গোল্ড কোস্ট ও নিউক্যাসেলেও ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। রোববার বিক্ষোভ হয়েছে রাজধানী ক্যানবেরাতেও।
চলতি এপ্রিলেই সিডনি শপিং সেন্টারে ছুরিকাঘাতে ছয়জন নিহতের ঘটনায় পাঁচজনই ছিলেন নারী। নিউ সাউথ ওয়েলসের পুলিশ কমিশনার ক্যারেন ওয়েব জানিয়েছিলেন, হামলাকারী পুরুষদের এড়িয়ে নারীদের আঘাত করার বিষয়েই মনোযোগী ছিলেন।
ডেসট্রয় দ্য জয়েন্ট নামের একটি সংগঠনের তথ্য বলছে, এ বছরের ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ১১৯ দিনে অন্তত ২৭ জন নারী সহিংসতার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
পারিবারিক সহিংসতা ছাড়াও প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতের মতো ঘটনার শিকারও হয়েছেন নারীরা। এ প্রেক্ষাপটেই নারীর প্রতি সহিংসতা রুখতে অপরাধীদের কঠোর সাজার দাবি তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা। তারা নারীর প্রতি সহিংস পরিস্থিতিকে জাতীয় জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
এই আন্দোলনকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে অস্ট্রেলিয়া সরকারও। প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পদে দায়িত্বশীলরাও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। তারাও নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সেটি বাস্তবায়নের জন্যই প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ বুধবার কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।
অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, নারীদের বিরুদ্ধে পুরুষের সহিংসতার বিষয়ে আগামী বুধবার (১ মে) জাতীয় মন্ত্রিসভার একটি জরুরি বৈঠক হবে। কেন্দ্রীয়সহ দেশব্যাপী সব সরকারকেই অবশ্যই (আইন) পরিবর্তন করতে হবে। অপরাধীদের কীভাবে থামানো যায়, সে বিষয়ে আরও মনোযোগ দিতে হবে।
অধিকার সংগঠন ‘হোয়াট ওয়্যার ইউ ওয়ারিং’ আয়োজিত ‘নো মোর’ শীর্ষক সমাবেশে আলবেনিজ বলেন, ‘সমাজ ও অস্ট্রেলিয়াকে আরও ভালো করতে হবে। আমাদের সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের আইনি ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, পুরুষরা তাদের আচরণ পরিবর্তন করছে।’
অজি প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এটি (বর্তমান আইন) ভুক্তভোগীদের রক্ষার জন্য যথেষ্ট নয়। আমাদের অপরাধীদের দিকে নজর দিতে হবে, প্রতিরোধে মনোযোগ বাড়াতে হবে। আমাদের দেরি করার সুযোগ নেই। এক মাস বা দুই মাস নয়, আমাদের গুরুত্ব দিয়ে এখনই বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে। সপ্তাহ থেকে সপ্তাহে, মাস থেকে মাসে, বছর থেকে বছরে পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে।’
ভিক্টোরিয়াতে ফেডারেল অ্যাটর্নি জেনারেল মার্ক ড্রেফাস ও প্রাদেশিক সরকারের প্রধান জাসিনতা অ্যালানও বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন। অ্যালান বলেন, ‘আমাদের নারীর সুরক্ষা নিয়ে কথা বলা বন্ধ করতে হবে, বরং পুরুষদের সহিংসতা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এখানে আমরা অনেকেই আছি যারা বছরের পর বছর ধরে এই দাবি করে যাচ্ছি।’
ক্যানবেরার বিক্ষোভ মিছিলে প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ ছাড়াও নারীবিষয়ক মন্ত্রী কেটি গ্যালাহার, সমাজসেবাবিষয়ক মন্ত্রী আমান্ডা রিশওয়ার্থসহ কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ অংশ নেন। লেক ব্লুবেরি গ্রিফিন থেকে সংসদ ভবন পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার র্যালিতে অংশ নেন তারাও। তারা সবাই এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
সারাবাংলা/এনএস