মোট মৃত্যুর ৭০% অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি
২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:২১
ঢাকা: দেশে দিন দিন অসংক্রামক রোগের সংখ্যা বাড়ছে। সংখ্যাটা এমন যে দেশের মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশই ঘটে অসংক্রামক রোগে। এই রোগ কমিয়ে আনতে সরকারের লক্ষ্য থাকলেও বাজেট অপ্রতুল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানীর বিএমএ ভবনে প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা) আয়োজিত এক আলোচনায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
আলোচনায় লিখিত তথ্যে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, কিডনি রোগ, শ্বসনতন্ত্রের রোগ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংক্রামক রোগে বিশ্বে প্রতি বছর চার কোটি ১০ লাখ মানুষ মারা যায়, যা বিশ্বব্যাপী মোট মৃত্যুর প্রায় ৭৪ শতাংশ। বাংলাদেশেও অসংক্রমক রোগের প্রকোপ ভয়াবহ। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপে বাংলাদেশ নীরব মহামারি পরিস্থিতিতে রয়েছে। বাংলাদেশ এনডিসি স্টেপস সার্ভে ২০২২ অনুযায়ী, প্রতি চার জনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত।
তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ ৫৭ হাজার ২০০ মানুষের জীবন কেড়ে নেয় বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ, যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৭০ শতাংশ এবং যার ১৯ শতাংশই অকালমৃত্যু। এ পরিস্থিতি ঠেকাতে সরকার অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বহু খাতভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০২৫ প্রণয়ন করেছে। সেখানে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা অনুসরণ করে ২০২৫ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব ২৫ শতাংশ কমানোর জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরকারের হেলথ কেয়ার ফাইন্যান্সিং স্ট্র্যাটেজি ২০১২-২০৩২-এ ২০৩২ সালের মধ্যে জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বাজেট ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই সময়ের মধ্যে মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ে ব্যক্তিগত বা নিজ পকেট থেকে খরচের পরিমাণ ৩২ শতাংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে হৃদরোগসহ অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যুহার ২১ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এত উদ্যোগের পরও এই অসংক্রমক রোগের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর অন্যতম কারন পর্যাপ্ত বাজেট না থাকা। বিশ্বব্যাংকের ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ৪ দশমিক ২ শতাংশ অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যয় করা হয়, যা খুবই কম। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতও স্বাস্থ্য বাজেটের ২০ শতাংশ ব্যয় করে অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায়।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে মাথাপিছু বরাদ্দের পরিমাণও অত্যন্ত কম— বছরে মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য আট ডলার, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী বরাদ্দ ১.৫ ডলারের ১৮ ভাগের এক ভাগ। ক্রমবর্ধমান অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় অপর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য একটি গভীর উদ্বেগের বিষয় বলে উল্লেখ করেন তারা।
সীমিত স্বাস্থ্য বাজেট বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি দেশের জাতীয় বাজেটের অন্তত ১৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখার সুপারিশ করে। বাংলাদেশে ২০২৩- ২০২৪ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট বাজেটের মাত্র ৫ শতাংশ, গত অর্থবছরে যা ছিল ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বাজেট সবচেয়ে কম উল্লেখ করেন তারা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি) এনামুল হক বলেন, এ বিষয়ে আমাদের গবেষণার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বাজেটে বরাদ্দ কম আছে। আমরা এ নিয়ে কাজ করছি এবং সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। সরকার স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্ব দিয়ে নতুন নতুন হাসপাতাল নির্মাণ, ডাক্তার প্রস্তুত করা সত্ত্বেও অনেক মানুষ ভারতে চিকিৎসা নিতে যায়। আমরা এ বিষয়টিও অনুসন্ধান করছি যে এত মানুষ কেন ভারতে চিকিৎসা সেবা নিতে যাচ্ছে, কত টাকা ব্যয় করছে। এসব বিষয় খুঁজে দেখা হচ্ছে।
আলোচনায় আরও তুলে ধরা হয়, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকার এরই মধ্যে বেশকিছু নীতি পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে সেগুলো বাস্তবায়নে বাজেট বাড়ানো জরুরি। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপের মতো ভয়াবহ অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ দেওয়ার যে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বাস্তবায়নে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেট বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
গবেষণা অনুযায়ী, উচ্চ রক্তচাপের পরীক্ষা ও ওষুধের পেছনে ১ টাকা ব্যয় করলে সামগ্রিকভাবে ১৮ টাকার সুফল পাওয়া সম্ভব। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের একটি সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর রোগী প্রতি ১০ মার্কিন ডলারের কম খরচে উচ্চ রক্তচাপ ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
মোট মৃত্যুর ৭০% অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ঢাকা: দেশে দিন দিন অসংক্রামক রোগের সংখ্যা বাড়ছে। সংখ্যাটা এমন যে দেশের মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশই ঘটে অসংক্রামক রোগে। এই রোগ কমিয়ে আনতে সরকারের লক্ষ্য থাকলেও বাজেট অপ্রতুল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সোমবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানীর বিএমএ ভবনে প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা) আয়োজিত এক আলোচনায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। আলোচনায় লিখিত তথ্যে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, কিডনি রোগ, শ্বসনতন্ত্রের রোগ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংক্রামক রোগে বিশ্বে প্রতি বছর চার কোটি ১০ লাখ মানুষ মারা যায়, যা বিশ্বব্যাপী মোট মৃত্যুর প্রায় ৭৪ শতাংশ। বাংলাদেশেও অসংক্রমক রোগের প্রকোপ ভয়াবহ। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপে বাংলাদেশ নীরব মহামারি পরিস্থিতিতে রয়েছে। বাংলাদেশ এনডিসি স্টেপস সার্ভে ২০২২ অনুযায়ী, প্রতি চার জনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ ৫৭ হাজার ২০০ মানুষের জীবন কেড়ে নেয় বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ, যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৭০ শতাংশ এবং যার ১৯ শতাংশই অকালমৃত্যু। এ পরিস্থিতি ঠেকাতে সরকার অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বহু খাতভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০২৫ প্রণয়ন করেছে। সেখানে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা অনুসরণ করে ২০২৫ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব ২৫ শতাংশ কমানোর জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারের হেলথ কেয়ার ফাইন্যান্সিং স্ট্র্যাটেজি ২০১২-২০৩২-এ ২০৩২ সালের মধ্যে জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বাজেট ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই সময়ের মধ্যে মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ে ব্যক্তিগত বা নিজ পকেট থেকে খরচের পরিমাণ ৩২ শতাংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে হৃদরোগসহ অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যুহার ২১ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এত উদ্যোগের পরও এই অসংক্রমক রোগের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর অন্যতম কারন পর্যাপ্ত বাজেট না থাকা। বিশ্বব্যাংকের ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ৪ দশমিক ২ শতাংশ অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যয় করা হয়, যা খুবই কম। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতও স্বাস্থ্য বাজেটের ২০ শতাংশ ব্যয় করে অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায়। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে মাথাপিছু বরাদ্দের পরিমাণও অত্যন্ত কম— বছরে মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য আট ডলার, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী বরাদ্দ ১.৫ ডলারের ১৮ ভাগের এক ভাগ। ক্রমবর্ধমান অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় অপর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য একটি গভীর উদ্বেগের বিষয় বলে উল্লেখ করেন তারা। সীমিত স্বাস্থ্য বাজেট বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি দেশের জাতীয় বাজেটের অন্তত ১৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখার সুপারিশ করে। বাংলাদেশে ২০২৩- ২০২৪ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট বাজেটের মাত্র ৫ শতাংশ, গত অর্থবছরে যা ছিল ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বাজেট সবচেয়ে কম উল্লেখ করেন তারা। আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি) এনামুল হক বলেন, এ বিষয়ে আমাদের গবেষণার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বাজেটে বরাদ্দ কম আছে। আমরা এ নিয়ে কাজ করছি এবং সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। সরকার স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্ব দিয়ে নতুন নতুন হাসপাতাল নির্মাণ, ডাক্তার প্রস্তুত করা সত্ত্বেও অনেক মানুষ ভারতে চিকিৎসা নিতে যায়। আমরা এ বিষয়টিও অনুসন্ধান করছি যে এত মানুষ কেন ভারতে চিকিৎসা সেবা নিতে যাচ্ছে, কত টাকা ব্যয় করছে। এসব বিষয় খুঁজে দেখা হচ্ছে। আলোচনায় আরও তুলে ধরা হয়, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকার এরই মধ্যে বেশকিছু নীতি পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে সেগুলো বাস্তবায়নে বাজেট বাড়ানো জরুরি। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপের মতো ভয়াবহ অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ দেওয়ার যে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বাস্তবায়নে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেট বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। গবেষণা অনুযায়ী, উচ্চ রক্তচাপের পরীক্ষা ও ওষুধের পেছনে ১ টাকা ব্যয় করলে সামগ্রিকভাবে ১৮ টাকার সুফল পাওয়া সম্ভব। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের একটি সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর রোগী প্রতি ১০ মার্কিন ডলারের কম খরচে উচ্চ রক্তচাপ ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সারাবাংলা/জেআর/টিআর