তাপপ্রবাহেও রাবিতে সশরীরে ক্লাস, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা
৩০ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:১০
রাজশাহী: প্রতিদিনই তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড গড়ছে। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজগুলোর ছুটি ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হচ্ছে। চলমান এই তাপপ্রবাহের কারণে ইতোমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্বিদ্যালয় অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেননা গরমে শিক্ষার্থীদের পানিশূন্যতা ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা দেখা দেয়। এ ছাড়া, লোডশেডিংয়ের কারণে ক্লাসের ফ্যান ও এসি বন্ধ থাকায় বিঘ্নিত হয় স্বাভাবিক পড়াশোনা।
কিন্তু এসব যেন চোখেই পড়ছে না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশনের। গ্রীষ্মের ছুটি পিছিয়ে ঈদুল আজহার ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে চলমান দাবদাহে সশরীরে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিষ্ঠানটি। ফলে, সশরীরে ক্লাস করতে করতে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ক্লাস করতে আসা শিক্ষার্থীরা তীব্র গরমে অতিষ্ঠ। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ঘাড়ে ঝোলানো ব্যাগ পিঠের ঘামে ভিজে চুপচুপ করছে। ক্লাসে যাওয়া-আসার সময় অনেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এমন অসুস্থ হওয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথাও হয় এই প্রতিবেদকের।
শিক্ষার্থীরা জানান, আবহাওয়া অধিদফতর হিট এলার্ট জারি করলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সশরীরে ক্লাস নিয়ে যাচ্ছে। যা শিক্ষক-শিক্ষার্থীর জন্য ঝুঁকি। যেখানে প্রাপ্তবয়স্ক লোকজন বাসা থেকে বাহির হচ্ছে না, সেখানে শিক্ষার্থীরা কিভাবে ক্লাস করতে যাবে? যতক্ষণ না একজন শিক্ষার্থী মারা যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের টনক নড়বে না। প্রশাসনের উচিত ক্লাসগুলো অনলাইনে নিয়ে আসা।
তীব্র গরমে ক্লাস করায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান শোভন। সারাবাংলাকে বলেন, ‘রোদের মধ্যে ক্লাসে যাতায়াতের কারণে প্রচণ্ড পিপাসা লাগতো। আর বোতলের পানি তো গরম হয়ে থাকে। তৃষ্ণা লাগলে এটাই খেয়েছি। এখন জ্বর-সর্দি, ডায়রিয়ায় একসঙ্গে আক্রান্ত হয়েছি। ক্যাম্পাস খোলা রাখার উদ্দেশ্য হলো পড়াশোনা। কিন্তু সেটা তো হচ্ছে না। শুধু শুধু ক্যাম্পাস খোলা রেখে আমাদের কষ্ট করানো হচ্ছে।’
এ বিষয়ে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আবদুল মজিদ অন্তর সারাবাংলাকে বলেন, ‘চলমান তাপদাহের কারণে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। গরমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত অনলাইনে ক্লাস চালু করা।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক ডা. মো. তবিবুর রহমান শেখ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গরমের কারণে রোগের তেমন প্রাদুর্ভাব নেই। এমনিতে রোদে বের হওয়ায় সর্দি-জ্বর নিয়েই বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা আসছেন। এ সময় রোদে বের হলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’
তাপপ্রবাহে ক্লাস চালু রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি প্রশাসনের নজরে আনব। তবে ক্লাস-পরীক্ষার বিষয়ে বিভাগগুলো প্রয়োজন মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সেটা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবকিছু প্রশাসনের ওপরে ছেড়ে দিলে কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।’
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৪ এপ্রিল বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে গ্রীষ্মকালীন ছুটি পিছিয়ে ঈদুল আযহার ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে ছুটির আগ পর্যন্ত কোনো বিভাগ প্রয়োজন মনে করলে অনলাইনে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু সব পরীক্ষা সশরীরে অনুষ্ঠিত হবে।
সারাবাংলা/পিটিএম