Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উৎপাদন কমে বন্ধের শঙ্কা, বৃষ্টির অপেক্ষায় জল বিদ্যুৎকেন্দ্র

প্রান্ত রনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩০ এপ্রিল ২০২৪ ১০:০৬

কর্ণফুলী জল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পানির সংকটে যা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। সারাবাংলা ফাইল ছবি

রাঙ্গামাটি: কাপ্তাই হ্রদের পানি কমতে থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন মাত্রায় নেমে গেছে কর্ণফুলী জল বিদ্যুৎকেন্দ্রে। ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম দেশের একমাত্র এই জল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। কিন্তু পানির অভাবে সেখানে উৎপাদন নেমে এসেছে মাত্র ৩০ মেগাওয়াটে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, কাপ্তাই হ্রদে পানি ক্রমাগত কমছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে জল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদনই বন্ধ হয়ে যাবে। অন্যদিকে বৃষ্টিপাত ছাড়া হ্রদে পানির স্তর বাড়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। ফলে জল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সচল থাকাসহ উৎপাদন পরিস্থিতি পুরোপুরিই নির্ভর করছে বৃষ্টিপাতের ওপর।

বিজ্ঞাপন

তীব্র তাপপ্রবাহের পাশাপাশি অনাবৃষ্টিতে কাপ্তাই হ্রদের পানি কয়েক দিন ধরেই কমছে। এর সঙ্গে সঙ্গে কমতে শুরু করে জল বিদ্যুতের উৎপাদনও। আগের কয়েক দিনের মতো সোমবারও (২৯ এপ্রিল) এই কেন্দ্রে মাত্র ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। এই পরিমাণকে সর্বনিম্ন পর্যায়ের বলে জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

কর্ণফুলী জল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এ টি এম আব্দুজ্জাহের সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদের পানির যে অবস্থা, তাতে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। আপাতত বৃষ্টিপাত ছাড়া হ্রদে পানি বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। যে কারণে বৃষ্টির ওপরই পরিস্থিতি নির্ভর করছে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাপ্তাই হ্রদের পানি দেশের একমাত্র জল বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর কর্ণফুলী নদীতে নির্গমন করা হয়। আবার কর্ণফুলী নদীর পানি শোধনাগারে পরিশোধন করে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম নগরে সরবরাহ করে থাকে ওয়াসা। কর্ণফুলী নদীর পানি বছরজুড়ে প্রবাহিত না হলে সমুদ্রের পানির গতিবেগ বেড়ে যাওয়ার সুযোগ থাকায় লবণাক্ততা বাড়তে পারে ওয়াসার পরিশোধিত পানিতে।

বিজ্ঞাপন

অর্থাৎ পরিস্থিতি অনেকটা এমন, চট্টগ্রাম নগরে পানি সরবরাহের সঙ্গে কর্ণফুলী জল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। ফলে বছরজুড়েই সচল রাখতে হয় এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে চট্টগ্রামে শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থাতেও দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব ফেলতে পারে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কর্ণফুলী জল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাপের রুল কার্ড (সময়সূচিভিত্তিক পানি ওঠানামার মাপ) অনুযায়ী, সোমবার (২৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে ৭৪ দশমিক ১৯ মিনস সি লেভেল (এমএসএল) পানি রয়েছে। তবে এই সময়ে স্বাভাবিকভাবে পানির থাকার কথা ৮২ দশমিক ৪০ এমএসএল। রুল কার্ডের হিসাবেই বর্তমানে ৮ এমএসএল পানি কম রয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত কিংবা বিকল্প উৎস থেকে (উজান) পানি না এলে হ্রদে পানি বাড়ার কোনো সুযোগ নেই।

ষাটের দশকে জল বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেওয়ার কারণে গড়ে ওঠে বিস্তীর্ণ কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ। পরে ১৯৬২ সালে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেওয়া অংশে চালু করা হয় দেশের একমাত্র জল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। কৃত্রিমভাবে হ্রদের পানি সংরক্ষণ করেই করা হয় উৎপাদন।

শুরুর দিকে কেন্দ্রটির উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৮০ মেগাওয়াট। পরে ধাপে ধাপে এর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে ২৪২ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়েছে। এ উৎপাদনের পুরোটাই যায় জাতীয় গ্রিডে। গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে পরিমাণ উৎপাদন ব্যয়, তা জল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে অনেক বেশি। জল বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন ব্যয়ের দিক থেকেও সাশ্রয়ী, মাত্র ৪০ পয়সা। যে কারণে এর উৎপাদন বাড়ানো গেলে ব্যয় কম হয় থাকে বিপিডিবির।

সারাবাংলা/টিআর

কর্ণফুলী কর্ণফুলী জল বিদ্যুৎকেন্দ্র কাপ্তাই হ্রদ জল বিদ্যুৎকেন্দ্র তাপপ্রবাহ পানির সংকট রাঙ্গামাটি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর