Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে রোহিঙ্গারা শ্রমবাজারে, সংকটে স্থানীয়রা

ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১ মে ২০২৪ ১০:২৩

কক্সবাজারের শ্রমবাজারে এখন রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি নিয়মিত। এতে সংকটে পড়ছেন স্থানীয় শ্রমজীবীরা। ছবি: সারাবাংলা

কক্সবাজার: মিয়ানমার থেকে বল প্রয়োগে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী শরণার্থী হিসেবে সার্বিক সুবিধা পাওয়ার পরও হানা দিচ্ছে কক্সবাজারের শ্রমবাজারে। নিজেদের জন্য নির্ধারিত ক্যাম্প থেকে অবৈধ উপায়ে বের হয়ে তারা যুক্ত হচ্ছে নানা ধরনের শ্রমে। স্থানীয় শ্রমজীবীরা বলছেন, দুর্মূল্যের এই বাজারে রোহিঙ্গাদের কারণে একদিকে তাদের কাজের সুযোগ কমছে, অন্যদিকে রোহিঙ্গারা কাজের দামও কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

সরকারি বিভিন্ন দফতরের তথ্যে জানা যায়, কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য মাথাপিছু রেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। এর পাশাপাশি তাদের জন্য বাড়তি আয়েরও কিছু সুযোগ রয়েছে। ক্যাম্পসহ আশপাশের এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন অনেক রোহিঙ্গা। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় কারও কারও চাকরির সুযোগ হয়েছে। ক্যাম্পে এসব সংস্থার কায়িক শ্রমভিত্তিক কার্যক্রমেও রোহিঙ্গাদেরই নিযুক্ত করা হয়।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়দের অভিযোগ, এরপরও বাড়তি অর্থ উপার্জন করতে রোহিঙ্গারা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চেক পোস্ট পেরিয়ে ক্যাম্প থেকে শহরে প্রবেশ করছে কাজের সন্ধানে। তারা শ্রমের দাম কমিয়ে দিচ্ছে। স্থানীয় শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘাতেও জড়াচ্ছে। তাদের কারণে শ্রমবাজার অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।

শহরের ঘুমগাছ তলার শ্রমবাজারের দিনমজুর আব্দুল কাদের সারাবাংলাকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে আমরা অতিষ্ঠ। তারা খুব ভোরে বা আগের দিন রাতেই ক্যাম্প থেকে বের হয়ে চলে আসে এবং শ্রমবাজারে যুক্ত হয়। ৮০০ বা হাজার টাকার কাজ ৪০০ টাকা দিয়ে পর্যন্ত করে। এতে তাদের কোনো সমস্যা হয় না। কারণ তারা ক্যাম্পে সব পাচ্ছে। এটা তাদের কাছে বাড়তি লাভ। কিন্তু সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের। একদিকে কাজের রেট কমে যায়, অন্যদিকে কাজ পাওয়া যায় না।’

বদিউল আলম নামে আরেক দিনমজুর বলেন, ‘শুরুর দিকে রোহিঙ্গারা শ্রমবাজারে খুব একটা আসত না। কিন্তু এখন তারা নিয়মিতই আসে। তারা এখন অনেক বেশি মারমুখী হয়ে উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে সংঘবদ্ধ হয়ে ঝগড়া করে।’

স্থানীয় শ্রমবাজারে রোহিঙ্গাদের যুক্ত হওয়া নিয়ে স্থানীয় শ্রমজীবীদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেল ঘুমগাছ তলাতেই। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) এখানকার শ্রমবাজারে স্থানীয় শ্রমিকদের পাশাপাশি দেখা গেল বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকেও।

তাদের একজন আব্দুর রহমান এসেছেন কুতুপালং ক্যাম্প থেকে। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পে যে রেশন পাই, তা দিয়ে ১২ সদস্যের সংসার ঠিকমতো চলে না। তাই কাজের জন্য শহরে আসতে হয়েছে।’ বেশ কিছুদিন ধরেই তারা এই শ্রমবাজারে আসছেন বলে জানান তিনি।
শহরের সমিতি পাড়ার শুঁটকি পল্লিতেও শ্রমিক হিসেবে স্থানীয়দের পাশাপাশি কাজ করছেন রোহিঙ্গা নারীরা। তাদের একজন রাবেয়া বেগম জানালেন, তার স্বামী মারা গেছেন এক বছর আগে। পাঁচ সন্তান নিয়ে ক্যাম্পে দিন চালাতে কষ্ট হয় বলেই শুঁটকি পল্লিতে কাজের সন্ধানে এসেছিলেন।

রাবেয়া বলেন, ‘যে রেশন পাই, তা দিয়ে সংসার চলছে না। তাই পুরাতন এক রোহিঙ্গা আত্মীয়ের সহযোগিতায় শুঁটকি পল্লিতে কাজ নিয়েছি। দিনে চার থেকে পাঁচ শ টাকা আয় হয়। তা দিয়ে এখন সংসার চলে যায়।’

শ্রমবাজারে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ প্রসঙ্গে কক্সবাজার দিনমজুর ঐক্য পরিষদের সভাপতি ছৈয়দ আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে রোহিঙ্গারা আমাদের কাছে আতঙ্ক। তারা শ্রমবাজারে ঢুকে পড়েছে। নানা ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রমেও জড়িয়ে পড়ছে। তারপর আবার ক্যাম্পে ফিরে যাচ্ছে। তাদের অপকর্মের দায়ভার নিতে হচ্ছে আমাদের। প্রশাসন কঠোর হলে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে অবৈধভাবে শহরে আসতে পারে না। এ ছাড়া স্থানীয় কিছু মানুষও আছে, যাদের কারণে রোহিঙ্গারা প্রশ্রয় পায়। তারা কম টাকায় রোহিঙ্গাদের কাজে লাগিয়ে ঝুঁকি তৈরি করছে। আর ভুগতে হচ্ছে আমাদের শ্রমিকদের।’

রোহিঙ্গাদের স্থানীয় শ্রমবাজারে যুক্ত হওয়া ঠেকাতে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এ সমস্যা সমাধানের উপায় হচ্ছে একজন রোহিঙ্গাও যেন ক্যাম্প থেকে বের হতে না পারে। শহরে যেসব রোহিঙ্গা অবৈধভাবে অবস্থান করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না করে ক্যাম্প থেকে অবৈধভাবে বের হয়ে আসা আসা রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো প্রক্রিয়া কোনোভাবেই সঠিক নয়। তাদের ধরে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে, জেল-জরিমানা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।’

মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, ‘এ ছাড়া যেসব স্থানীয় লোকজন রোহিঙ্গাদের ঘর ভাড়া দেয়, গৃহ পরিচারিকা হিসেবে রাখে, শ্রমের কাজে ব্যবহার করে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারও বাড়াতে হবে।’

জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্থানীয় শ্রমবাজারে রোহিঙ্গাদের যুক্ত হওয়ার খবর প্রশাসনের কাছে রয়েছে। রোহিঙ্গাদের অনেকেই নানা কৌশলে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্প থেকে শহরে আসার চেষ্টা করে। প্রশাসনও অভিযান অব্যাহত রেখেছে। যখনই খবর মিলছে, অভিযান চালিয়ে তাদের ধরে পুনরায় ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসন এ ক্ষেত্রে তৎপর রয়েছে।’

সারাবাংলা/টিআর

কক্সবাজার রোহিঙ্গা শ্রমবাজার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর