‘সত্যিকারের বামপন্থিরা এই সরকারের পতন ঘটাতে পারে’
১ মে ২০২৪ ১৩:৫৬
ঢাকা: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, সত্যিকারের বামপন্থিরা বর্তমান দুঃশাসন থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্তি করবে। দেশের জনগণ এই সরকারের পতন চায়। একমাত্র সত্যিকারের বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরাই এই সরকারের পতন ঘটাতে পারে। তাই দেশের শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করার আহ্বান জানান তিনি।
বুধবার (১ মে) আন্তর্জাতিক মে দিবস উপলক্ষে পুরানা পল্টন সিপিবি কার্যারয়ের সামনে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এসব কথা বলেন।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘উপায় নেই। বাঁচতে হলে লড়াই করতে হবে। শ্রমিক শ্রেণি ও দেশের মানুষের মুক্তির জন্য আজ শাসক শ্রেণির বিরুদ্ধে ঐক্য ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। শ্রমিকদের দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হবে। দেশে শ্রমিকদের সরকার গঠন করতে হবে।’
পাকিস্তান আমলের শাসনের কথা তুলে ধরে সিপিবির এই নেতা বলেন, ‘ওই সময় শ্রমিকরা মে দিবস পালন করতে রাজপথে নামতে সাহস পেত না। তখন ছাত্র সমাজ মিছিল করে শ্রমিকদের কাছে গিয়ে বলত- আসুন আপনারা মাঠে নামুন, ছাত্ররা আপনাদের সঙ্গে আছে। তখন শ্রমিকরা রাজপথে নামে। আজ দেশের ছাত্র সমাজ চুপ করে আছে। তাই শ্রমিকদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে ছাত্রদের সাহস দিতে হবে, দেশের শ্রমিক সমাজ আপনাদের পাশে আছে। আসুন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করতে রাজপথে সামিল হই।’
তিনি আরও বলেন, ‘নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের জনগণ। আজ দেশের জনগণের জীবনের নিরাপত্তা নেই। শ্রমিকদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা নেই। শ্রমিকদের জন্য একটি শ্রম আইন করা হয়েছে। এই আইনটি শ্রমিকদের জন্য কালো আইনে পরিণত হয়েছে। বর্তমান শ্রম আইনটি শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করে না। যে আইন শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করে না। সে আইন শ্রমিক সমাজ মানে না।’
সরকার জনগণের কর্মসংস্থানের মৌলিক অধিকারকে সংকুচিত করছে উল্লেখ করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘সরকার বেকারত্ব দূর ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বললেও বাস্তবে চরম কর্মহীনতা দেশের প্রধান সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে করেই হোক ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে। সেজন্য এমন ব্যবস্থা সৃষ্টি করেছে ভোট আপনি যেখানেই দেন প্রধানমন্ত্রী হবেন শেখ হাসিনা।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- অতিবাম ও ডানরা নাকি তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চাইছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই তো কিছু নামধারী বামদের সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করছেন। হেফাজতকে মদদ দিচ্ছেন। এদিকে জামায়াতের জন্য দরজা খোলা রেখেছেন। তবে একমাত্র সত্যিকারের বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরাই এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারে। সরকারের পতন ঘটাতে পারে।’
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আরও বলেন, ‘সংবিধানের ঘোষণা বাস্তবায়নে জীবিকা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বিকল্প ব্যবস্থা না করে কোনো ব্যক্তির ন্যায়সংগত কর্মসংস্থানের অধিকার হরণ করা যায় না। অথচ অগণতান্ত্রিক পথে সরকার মানুষের জীবিকা উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখেছে। সময় এসে গেছে দেশের জনগণও সরকারকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদের চূড়ান্ত সংগ্রাম শুরু করবে।’
এসময় করখানা ভিত্তিক রেশন চালু, ছাঁটাই ও নির্যাতন বন্ধ, মজুরি চুরি বন্ধ, শ্রম আইনের শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী সকল ধারাবাতিল এবং শ্রমিকদের নুন্নতম মজুরি বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ৩০ হাজার টাকা প্রদানের দাবি করেন সিপিবির সাবেক এই সভাপতি।
অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন জলি তালুকদার ও লুৎফর রহমান আকাশ প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি লালা পতাকা মিছিল করে ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এনএস