শুধু ডান-বাম নয়, সবপন্থিই এক হয়েছে: ফখরুল
১ মে ২০২৪ ২০:২৯
ঢাকা: আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্যের জবাবে বিএনপির মহাসিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শুধু ডান আর বাম নয়, সবপন্থিই এক হয়েছে।
বুধবার (১ মে) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মহান মে দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল এ সমাবেশ আয়োজন করে। সমাবেশ শেষে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের দুঃখ হয়, কষ্ট হয়- যখন আমরা দেখি, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তিনি তার বক্তব্যে বলেন, কী এমন ঘটল যে, বাংলাদেশে অতি বাম, অতি ডান একসঙ্গে তারা আমাকে উৎখাত করতে চায়? সমস্যাটা ওই জায়গাতেই। আপনারা বুঝতে পারেন না যে, কী ঘটেছে। অথবা বুঝেও না বোঝার ভান করেন। আজ শুধু অতি বাম, অতি ডান নয়, বাংলাদেশের সমস্ত মধ্যপন্থি শুধু নয়, সমস্ত মানুষ- যেকোনো পন্থার-ই হোক, তারা মনে করছে যে, এই আওয়ামী লীগ তাদের ন্যূনতম যে অধিকার, সেই অধিকারটুকু কেড়ে নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘উনি (শেখ হাসিনা) আরেকটা কথা বলেছেন, আমাদের অপরাধ কী? আপনাদের অপরাধ আপনারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছেন। সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। জনগণের যে ন্যূনতম অধিকার- পাঁচ বছর পর পর প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে, পার্লামেন্ট গঠন করবে, সেই অধিকারটুকু আপনারা কেড়ে নিয়েছেন। এখন এটাকে (নির্বাচন) একটা তামাশায়, পরিণত করেছেন। আপনারা বলেন যে, এটা একটা ডামি ইলেকশন, ডামি ক্যান্ডিডেট, ডামি এমপি, ডামি মন্ত্রী।’
এর আগে, মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, এ দেশের অতি বাম, অতি ডান— সবাই এখন এক হয়ে গেছে, এটা কীভাবে হলো, আমি জানি না। এই দুই মেরু এক হয়ে সারাক্ষণ শুনি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে হবে। অপরাধটা কী আমাদের?’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে এমন একটি সময় আমরা মে দিবস পালন করছি যখন সারাদেশের মানুষ তাদের ন্যূনতম অধিকার থেকে বঞ্চিত। গোটা জাতি দানবের শাসনে কবলিত। দেশনেত্রী আজ বন্দী। যে মানুষটি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেও নির্বাসিত। আজকে এই দিনেও মানুষ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে রাজপথে সংগ্রাম করছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার সংসদে বিল পাস করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করতে চায় না। তারা জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে কণ্ঠ রোধ করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। আজ অধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে শুধু বিএনপির নয়, সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক শক্তি এক হয়েছে। বিএনপিকে ধ্বংস করা যাবে না। বিএনপি হচ্ছে ফিনিক্স পাখির মত। বিএনপি অতীতেও পরাজিত হয়নি, ভবিষ্যতেও পরাজিত হবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চলমান আন্দোলন বিএনপির একার সংগ্রাম নয়, সবার। আমরা জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাই। শ্রমিকরা আজ পদে পদে লাঞ্ছিত হচ্ছে। তাদের সন্তানরা ভালো স্কুলে লেখা-পড়া করতে পারে না, ভালো খেতে পারে না। আর এই বৈষম্য সৃষ্টি করেছে সরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ ফের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। নিজেদের লোকদের সুবিধা দিতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। মানুষকে কীভাবে অশান্তিতে রাখা যায়, কষ্টে রাখা যায় সরকার তাই করছে। ৬০ লাখ বিরোধী নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। বিরোধী নেতাকর্মীদের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে হামলা হচ্ছে, দোকানপাট লুট হচ্ছে। এখন আর চুপ থাকলে চলবে না। সব রাজনৈতিক দলের অধিকার ফিরিয়ে আনতে রাজপথে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
সমাবেশ শেষে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি নয়াপল্টন থেকে শুরু করে বিজয়নগর হয়ে পল্টন মোড় ঘুরে দৈনিকবাংলা হয়ে ফকিরাপুল মোড় হয়ে আরামবাগ ঘুরে পুনরায় নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। তীব্র তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সমাবেশে অংশ নেন।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ-শ্রম বিষয়ক হুমায়ুন কবির খান, ফিরোজ মোল্লা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, জাসাসের সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাজাহারুল ইসলাম শিবাসানু, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা সেলিম রেজা ,মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, শ্রমিক দল নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মজুমদার, মনজুরুল ইসলাম মঞ্জু, সুমন ভূঁইয়া, বদরুল আলম সবুজ, শাহ আলম রাজা প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম