Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজশাহীতে ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ শ্রমিক নেতার, বিক্ষোভ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১ মে ২০২৪ ২১:২০

রাজশাহী: রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহতাব হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে শ্রমিকদের চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থার দাবিত বুধবার (১ মে) সকাল ১১টায় রাজশাহী বাস টার্মিনাল এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা।

এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা রাজশাহী বাস টার্মিনালের সামনের প্রধান সড়ক বাস ও বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেন। এতে করে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালালেও ব্যর্থ হয়। পরে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন অর্থ আত্মসাতের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে বেলা ১২টার দিকে শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে যান।

এর আগেও সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে শ্রমিক অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। নানা অনিয়মের অভিযোগ তোলায় ২০২২ সালে বহিষ্কার হন তৎকালীন সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম জনি।

তিনি বলেন, সংগঠনের আয় হলেও জমার খাতায় কারচুপি হয়। প্রতিদিন রাজশাহীর মিনিবাস থেকে আঞ্চলিক কমিটির নামে প্রায় ২০০ গাড়ি থেকে ২০ টাকা করে নেওয়া হয়। ঢাকার লোকাল গাড়ি থেকে ৩১০ টাকা করে তোলা হয়। কিন্তু খাতায় জমা হয় মাত্র ১০০ টাকা। ঢাকার কোচ থেকে প্রতিদিন হাজার টাকা আদায় করা হলেও জমার খাতায় নেই।

রাজশাহীর বাইরে বগুড়া ও রংপুর অঞ্চলের গাড়িপ্রতি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা তোলা হলেও জমা হয় না। ১০১ জন শ্রমিকের নামে ৩০ টাকা করে তোলা হয়। জমার খাতায় যোগ হয় মাত্র ২০ টাকা করে।

শ্রমিকরা বলেন, ২০১৯ সালে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের পর থেকেই মাহাতাব সাধারণ শ্রমিকদের নানাভাবে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত, হয়রানিসহ শ্রমিকদের জমি বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ করে ব্যক্তিগত সম্পদ গড়ে তুলেছেন। এসবের প্রতিবাদ করলেই সাধারণ শ্রমিকদের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি সদস্য পদ স্থগিত করা হয়।

মাহাতাব হোসেন চৌধুরী সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত ছাড়া বেআইনিভাবে আনুমানিক ৭০০ কার্ড বিক্রি করেন। বর্তমানে এসব কার্ডের মূল্য দাঁড়ায় ২১ লাখ টাকা; যার পুরোটাই আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়াও রাজশাহী বাইপাস সংলগ্ন ললিতাহার মৌজার মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ১৯ কাঠা জমির (দলিল নম্বর-৯৪১৭) মধ্যে ১৬ কাঠা বিক্রি করেছেন পানির দামে। মাত্র এক কোটি ৬০ লাখ টাকা মূল্য দেখিয়ে বাকি অন্তত ১০ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন মাহাতাব হোসেন।

বাস টার্মিনালের পাশে মেইন রোড সংলগ্ন শিরোইল মৌজায় অবস্থিত শ্রমিক ইউনিয়নের এক তলা আরসিসি পাকা বিল্ডিং হাশেম আলীর কাছে সম্প্রতি এক কোটি টাকায় বিক্রয় করেন মাহাতাব হোসেন চৌধুরী। কিন্তু ওই বিল্ডিং ও জমির বর্তমান মূল্য আট কোটি টাকা। যা একক ভাবে আত্মসাত করেন।

রাজশাহীতে প্রতিদিন বাস থেকে চাঁদা ওঠে অন্তত ৫০ হাজার টাকা; যা এক বছরে এক কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিন বছরে পাঁচ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবুও শ্রমিকরা শিক্ষা, ভাতা, কন্যা দায়, মৃত্যুকালীন টাকার অধিকার থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত। এ অর্থও সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী আত্মসাত করেছেন।

এ বিষয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরীকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি।

রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হামিদুল আলম সাজু জানান, রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী দীর্ঘদিন থেকে শ্রমিকদের টাকা আত্মসাৎ করে আসছিলেন। তার কাছে শ্রমিকদের পাওনা চার কোটি টাকার বেশি। তাকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও শ্রমিকদের অর্থ ফেরত না দেওয়ায় প্রতিবাদস্বরূপ তারা আজকের এই কর্মসূচি।

সারাবাংলা/এনইউ

টপ নিউজ রাজশাহী


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর