Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নেমে গেছে পানির স্তর, খরায় ধানে চিটা নিয়ে শঙ্কা

আব্দুর রউফ পাভেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২ মে ২০২৪ ০৮:১১

নওগাঁয় এ বছর বোরো ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। তবে প্রচণ্ড খরায় জমিতে পানি রাখতে পারছেন না কৃষকরা। তাতে ফলন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ছবি: সারাবাংলা

নওগাঁ: কৃষিনির্ভর নওগাঁর প্রধান অর্থকরী ফসল ধান। চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো ধান আবাদও হয়েছে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। কিন্তু সেই ধান নিয়ে এখন দুশ্চিন্তার মুখে পড়েছেন চাষিরা। প্রচণ্ড খরায় এমনিতেই সেচ নিয়ে মুশকিলে পড়েছিলেন তারা। আগের বছরগুলোর তুলনায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এখন গভীর নলকূপ দিয়েও পানির দেখা মিলছে না। এদিকে ধানের শিষ বের হওয়োর সময় অতিরিক্ত তাপমাত্রা থাকায় ধানে চিটা দেখা দিতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে বিপাকে রয়েছেন কৃষকরা।

জেলার রাণীনগর, আত্রাই, সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর, মান্দা, মহাদেবপুর ও পত্নীতলা উপজেলায় এসব সমস্যা বেশি দেখা দিয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা এ সময় জমিতে পানি জমিয়ে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু দিনের বেলায় নলকূপে পানি ঠিকমতো উঠছে না। সারা রাত পানি দিয়েও সব জমি ভেজানো যাচ্ছে না। এ কারণেই অনেক কৃষকের জমির ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, চলতি মৌসুমে জেলায় এক লাখ ৯১ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্র ছিল। এর বিপরীতে আবাদ হয়েছে এক লাখ ৯২ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার ৪৯৫ হেক্টর বেশি জমিতে। কৃষি বিভাগ বলছে, এবার বোরোর আবাদ ভালো হয়েছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী ফসল তুলতে পারলে জেলায় ধান উৎপাদিত হবে ১২ লাখ ৫৬ হাজার ২১৫ মেট্রিক টন। এর বাজারমূল্য সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি।

এদিকে নওগাঁয় গত কয়েক দিন ধরেই চলছে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ। গত মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। বুধবারও (১ মে) সর্বোচ্চ মাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এই তীব্র তাপমাত্রায় অনেক জমিতেই ধানে চিটা দেখা দিতে শুরু করেছে। সেচ না দিতে পেরে ফলে চিটা দেখা দিচ্ছে অনেকের জমিতেই। কৃষি বিভাগের তথ্য তাই কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতে পারছে না।

কিছু কিছু জমিতে পানির অভাবে ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে বলেও খবর মিলেছে। ছবি: সারাবাংলা

পত্নীতলা উপজেলার জামগ্রামের কৃষক আব্দুল্যাহেল বাকি ১০ বিঘা জমিতে ব্রি-২৮, ব্রি-২৯ ও কাটারিভোগ ধানের আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, ‘সব জমিতে শিষ বের হয়েছে। কিন্তু ১০ দিন হলো নলকূপে পানি উঠছে না। পাশে একটা পুকুর ছিল। তা থেকেই জমিতে পানি দিচ্ছিলাম। সেই পুকুরের পানিও শেষ। এরই মধ্যে চলছে প্রচণ্ড খরা। শুনছি অনেকের জমিতেই ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। আমার জমিতেও একই অবস্থা হয় কি না, দুশ্চিন্তায় আছি।’

মান্দা উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের চাষি আলমগীর হোসেন পশ্চিম মাঠে ১৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘দিনের বেলায় নলকূপে পানি উঠতে উঠতে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রাতের বেলায় যা উঠছে, তা গত বছরের চার ভাগের এক ভাগ হবে। এত অল্প পানিতে পুরো জমি ভেজে না। যেটুকু ভিজছে, সূর্যের তাপে তা দিনে শুকিয়ে যাচ্ছে। এখন সেসব ধানে শিষ বের হচ্ছে, একই সঙ্গে শিষ মারাও যাচ্ছে। বৃষ্টি না হলে ধান রাখা কঠিন হবে।’

মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের সাবাইহাট এলাকার কৃষক আলম হোসেন ও মকছেদের জমি ঘুরেও দেখা যায়, কিছু কিছু অংশে ধান চিটা হয়ে গেছে। তাদের জমিতেও সেচের জন্য পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা নেই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর অবশ্য চলমান তাপপ্রবাহেও খুব একটা সমস্যা দেখছে না। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ধানের শিষ বের হওয়ার সময় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির ওপরে উঠলে ধান চিটা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এখন ধান পাকার মৌসুম। তাই তাপের প্রখরতায় তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।’

অধিদফতরের এই কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেন, ‘মাঠের ১০ শতাংশ ধান এরই মধ্যে কাটা হয়ে গেছে। প্রকৃতির ওপর আসলে কারও হাত নেই। অনেকের জমিতেই পানি নেই। এ সময়ে পানি জমিয়ে রাখার প্রয়োজন ছিল। তবে পানি না থাকলেও ধানের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।’

সারাবাংলা/টিআর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

৯০০তম গোলে ইতিহাস গড়লেন রোনালদো
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০৪

সম্পর্কিত খবর