নোংরা পানি ও মেয়াদহীন ময়দার নুডুলস, দুই কারখানা সিলগালা
২৮ মে ২০১৮ ১৭:০৬
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: রাজধানীর শ্যামপুর মীর হাজিরবাগ এলাকায় পচা, দুর্গন্ধ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নুডুলস তৈরির অভিযোগে নিউ মাসর্টার এগ নুডুলস ও কোলাকোলা নুডুলস কারখানা সিলগালা করেছে ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেই সঙ্গে কোম্পানি দুটিকে এক লাখ করে মোট দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সোমবার (২৮ মে ) দুপুরে অভিযান শেষে ডিএমপির ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ আটা ময়দা সংগ্রহ করে তাতে নোংরা পানি ব্যবহার করে নুডুলস তৈরি করা হয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পোকা ও মাছির উপদ্রবে এসব নুডুলস তৈরি করা হচ্ছিল। যে মেশিনে নুডুলস তৈরি করা হচ্ছিল সেই মেশিনটিতেও ময়লা ও মরিচা পাওয়া যায়। এসব অভিযোগে নিউ মাস্টারের মালিক ইউসুফ মোল্লা ও কোলাকোলার মালিক হাফিজুর রহমানকে আটক করে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে তাদের তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি কারখানা সিলগালা ও দুই কারখানার বিপুল সংখ্যক নুডুলসের কার্টন জব্দ করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইউসুফ মোল্লার ওই কারখানাটিতে প্রবেশ করতেই একটা দুর্গন্ধ এসে বমি আসতে শুরু করে। বিদঘুটে অন্ধকারের মধ্যে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নুডুলস তৈরি করা হয়। মীর হাজিরবাগ এলাকায় ইউসুফ মোল্লা তিন ছেলে ও এক মেয়ে-স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন কারখানার ওপর তলায়। গত ২০ বছর ধরে তিনি এই এলাকায় বাস করে আসছেন।
কোথা থেকে এ বুদ্ধি পেলেন জানতে চাইলে ইউসুফ মোল্লা সারাবাংলাকে বলেন, আগে মুদির দোকান ছিল তার। সেখানে বিভিন্ন কোম্পানির নুডুলস বিক্রি করতে গিয়ে এ লাইনের সন্ধান পান তিনি। এরপর গত দেড় বছর আগে এই কারখানা ১৮ হাজার টাকা ভাড়ায় নুডুলস উৎপাদন শুরু করেন।
কোন এলাকায় এসব নুডুলস সরবরাহ করা হয় জানতে চাইলে ইউসুফ মোল্লা বলেন, রাজধানী ঢাকা ছাড়াও মৌলভীবাজার, কেরানীগঞ্জ, ফরিদপুর, শরিয়তপুর, পিরোজপুর ও নেত্রকোণায় এই নুডুলস সরবরাহ করা হয়। প্রতি কার্টনে ২৫ কেজি নুডুলস থাকে। যার দাম ১০৫০ টাকা। খুচরা বিক্রি হয় ১২৫০ টাকায়। এক কার্টন নুডুলস তৈরিতে খরচ হয় সাড়ে ৭০০ টাকার মতো। এই বেঁচে তিনি অনেক টাকা করলেও গত কিছুদিন ধরে বাজার চলছে না বলে জানান।
নুডুলসের আরেক কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, গেন্ডারিয়া রেলস্টেশনের বিপরীত দিকে গড়ে ওঠা সুউচ্চ ১৩ তলা ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা হচ্ছে নুডুলস। এর নাম কোলাকোলা ব্রান্ড করা হয়েছে।
কোলাকোলার গায়ে ডিমের কথা লেখা থাকলেও বাস্তবে নোংরা পানি ও মেয়াদ উত্তীর্ণ আটা ময়দা ব্যবহার করা হচ্ছে। কারখানার মালিক উপস্থিত না থাকায় ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করি। যেভাবে মালিক চায় সেভাবে আমরা কাজ করি। ওয়াসার পানি দিতে বলেছে তাই দেই।
একই ভবনের তিন তলায় গড়ে উঠেছে তানিয়া নামে টিউব আইসক্রীম, টিনস নামে অরেঞ্জ পাউডার ও ইয়ামী নামে লিচি তৈরি করা হয়। টিনস বাদে বাকি দুটি পণ্য সরাসরি শিশুরা খেয়ে থাকে। এসব পণ্যের কোনো লাইসন্স নেই, নেই বিএসটিআইয়ের কোনো সনদপত্র।
অভিযানের সময় এই কারখানার মালিক আলতাব হোসেন বিএসটিআইয়ের কিছু কাগজপত্র এনে দেখান। ওইসব কাগজপত্র পরীক্ষার জন্য জব্দ করা হয়। সেই সাথে কারখানাটিতে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। কাগজপত্র পরীক্ষা শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/ইউজে/একে