Wednesday 15 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘পাকস্থলিতে ইয়াবা বয়ে আনছে রোহিঙ্গা শিশুরা’


২৮ মে ২০১৮ ১৭:৪১ | আপডেট: ৫ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:৪৮

।।সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: রাজধানী ঢাকায় ইয়াবা সরবরাহ করতে ব্যবসায়ীরা নতুন কৌশল বেছে নিয়েছে। পাকস্থলিতে করে ইয়াবা বহনে কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শিশু ও বড়দের টার্গেট করেছে ব্যবসায়ীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে ঝুঁকি ছাড়াই ও অল্প খরচে ঢাকায় ইয়াবা আনা যায় এমন চিন্তা করেই তাদের টার্গেট করা হয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৮ মে) দুপুর ১২টার দিকে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

এর আগে রোববার দিবাগত রাতে রাজধানীর দক্ষিণখান থানাধীন পূর্ব গাওয়াইর এলাকা হতে ছয়জনকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তর বিভাগ। এর মধ্যে এক শিশুসহ দুই রোহিঙ্গা রয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩ হাজার ৩৫০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।

এরা হলেন, রোহিঙ্গা সেলিম মোল্লা (৩০) ও তার ভাতিজা আফছার ওরফে বাবুল (১২), মামুন শেখ, মো. শরিফুল, ফাহিম সরকার ও রাজিব হোসেন।

দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, এদের নিয়ন্ত্রণ করেন রেজওয়ান নামে এক ইয়াবা ব্যবসায়ী। রেজওয়ান এখন পলাতক রয়েছেন। উখিয়া কেন্দ্রিক ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করতে সে উখিয়ায় ভাড়া বাসায় ওঠে। রেজওয়ানের অন্যতম সহযোগী মামুন শেখ। মামুন শেখকে পাঠানো হয় ঢাকায়। ঢাকায় থেকে ইয়াবার চালান রিসিভ ও বিক্রির দায়িত্ব ছিল তার।

আটক রোহিঙ্গা সেলিম মোল্লা টেম্পু ড্রাইভার ও তার ভাতিজা আফছার বাবুল হেলপার। লেদা ক্যাম্পে রেজওয়ানের যাতায়াত থাকায় সেলিম মোল্লার সঙ্গে পরিচয় হয়। টাকার প্রলোভনে সেলিমকে দিয়ে ইয়াবার চালান ঢাকায় পাঠানোর পরিকল্পনা করে। ধরা পড়ার ঝুঁকি এড়াতে শিশু রোহিঙ্গা বাবুলকেও ইয়াবা বহনে টাকার লোভ দেখান।

বিজ্ঞাপন

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সেলিম ও বাবুল জানায়, ৫০ পিস করে ইয়াবা ট্যাবলেট স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে ক্যাপসুল বানিয়ে সেলিম নিজেও খান ও বাবুলরেও খাইয়ে দেন। এ রকম ৭০টি করে ট্যাবলেট খেতে পারেন সেলিম। আর বাবুল খেতে পারেন ৪০টির মতো। ঢাকায় রওয়ানা দেওয়ার পর তারা রাস্তায় কিছু খায় না। ঢাকায় পৌছার পর মিল্ক অব ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় ওষুধ সেবন করে পাকস্থলি থেকে পায়ুপথে বের করে ওইসব ইয়াবা। এরপর সেসব ইয়াবা মামুন শেখের মাধ্যমে পৌছে যায় ফাহিম, শরীফ ও রাজিবের কাছে। ইয়াবা বহনের জন্য রেজওয়ান প্রতি চালানে সেলিমকে ১৫ হাজার ও বাবুলকে ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, পাকস্থলিতে ইয়াবা বহন করা অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ কাজ। এটি বের করার সময় ব্লিডিং পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রচণ্ড ব্যথায় কাতরাতে থাকে শিশু বাবুল। এমনকি মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে। এরপরেও টাকার লোভে রোহিঙ্গা শিশুরা এ কাজে জড়িত হয়ে পড়ছে।

বাবুল বলেছে, তার জানামতে এখন পর্যন্ত ১৫ জনের মতো রোহিঙ্গা শিশু পাকস্থলিতে করে ইয়াবা বহন করে ঢাকায় আসছে। এরকম বেশ কয়েকটি গ্রুপ থাকতে পারে। আর এসব ম্যানেজ করছে রেজওয়ান নামে ইয়াবা ব্যবসায়ী। খুবই উদ্বেগের বিষয় যে, রোহিঙ্গারা এ পেশায় জড়িত হয়ে পড়লে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। এটি ঠেকানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা জানান ডিবির এই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

আরেক প্রশ্নের জবাবে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, জনগণ দেখছে আমরা মাদকের বিরুদ্ধে লড়ছি। এতে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। যার ফলে মানুষের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হবে। মাদক থেকে তারা দূরে থাকবে। একটা সময় মাদক আর ভয়াবহ আকারে থাকবে না।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোন লেভেলের মাদক ব্যবসায়ী সেটি দেখার বিষয় নয়। শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা আমাদের হাতে আছে। সেই অনুযায়ী আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। তাদের মধ্যে ১১ জন মাদক ব্যবসায়ী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। যারা জামিনে মুক্তি পায় তাদেরও নজরদারিতে রাখা হয়। যে কোনো উপায়ে ঢাকা মহানগরীতে মাদক বেচাকেনা বন্ধ করা হবে বলে জানান তিনি।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর