Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বে-টার্মিনাল: তিন কোটি ৩ টাকায় ৫০১ একর ভূমি পাচ্ছে বন্দর

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২ মে ২০২৪ ২৩:২৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো : এক দশক পর চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় সাগর উপকূলে বে-টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ভূমি বরাদ্দে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। জেলা প্রশাসন ৫০১ একর ভূমি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে বন্দোবস্ত দিতে সম্মতিপত্র পাঠিয়েছে। এজন্য জেলা প্রশাসন প্রতীকী মূল্য হিসেবে বন্দরের কাছে আলাদাভাবে দেয়া তিনটি চিঠিতে তিন কোটি তিন টাকা দাবি করেছে।

বৃহস্পতিবার (২ মে) চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন থেকে পাঠানো তিনটি জমি বন্দোবস্তের চিঠি বন্দর চেয়ারম্যানের কাছে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক।

জানা গেছে, সাগর উপকূলে বে-টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য মোট ৮৭০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন ছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে ৬৭ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করে। আরও ৮০৩ একর ভূমি বরাদ্দ পেতে ২০১৪ সাল থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রশাসন তাদের অধিগ্রহণ করা এই জমির মূল্য নির্ধারণ করে তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু বন্দর ভূমির জন্য বিপুল টাকা ব্যয় না করে প্রতীকী মূলে সেটি পাওয়ার চেষ্টা করছিল। এ নিয়ে মতৈক্য না হওয়ায় জেলা প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দ্বারস্থ হয়েছিল।

প্রায় দশ বছর পর জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর পান্না আক্তারের গত ৩০ এপ্রিল স্বাক্ষরিত তিনটি চিঠিতে নগরীর পাহাড়তলী থানার দক্ষিণ কাট্টলী মৌজায় মোট ৫০১ একর জমি বন্দোবস্তের জন্য প্রতীকী হিসেবে এক কোটি এক টাকা করে মোট তিন কোটি তিন টাকা সেলামি মূল্য জমা দেয়ার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। অকৃষি খাসজমি বন্দোবস্ত ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, ১৯৯৫ অনুযায়ী সরকার শর্তসাপেক্ষে চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণের জন্য এ জমি দীর্ঘমেয়াদে বন্দোবস্ত দেয়ার অনুমতি দিয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার ভূমি বরাদ্দের বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। কিন্তু অধিগ্রহণের খরচ বাবদ জেলা প্রশাসনের দাবি করা অর্থ নিয়ে একটু জটিলতা ছিল। শেষপর্যন্ত নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের মধ্যস্থতায় জেলা প্রশাসন প্রতীকী মূল্যে ভূমি বরাদ্দে সম্মত হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে ৫০১ একজন ভূমি বরাদ্দের জন্য তিনটি পৃথক ডিমান্ড নোট পাঠিয়েছেন। ভূমি বন্দোবস্ত বাবদ টাকা জমা দেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী আরও ৩০২ একর ভূমি বরাদ্দের প্রক্রিয়াও চলছে বলে সচিব জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমার শেষ প্রান্তে সিইপিজেডের পেছনে সাগরপাড় থেকে সাগরিকায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের অদূরে রাসমনিঘাট পর্যন্ত প্রায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় ৯০০ একর ভূমিতে এই টার্মিনাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। এক দশক আগে পরিকল্পনা হলেও এখনও নির্মাণের বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। ২০১৬ সালে বে টার্মিনাল নির্মাণের কারিগরি, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। সমীক্ষায় কারিগরি ও অর্থনৈতিকভাবে এ টার্মিনাল গড়ে তোলার উপযুক্ত বলে মত দেওয়া হয়েছিল।

গত বছরের নভেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল জানিয়েছিলেন, বে-টার্মিনালের মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত হয়েছে। দেশি-বিদেশি পরামর্শক এবং বিদেশি বিভিন্ন বন্দর কর্তৃপক্ষ ও অংশীদারদের মতামতের ভিত্তিতে এটা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, বে-টার্মিনালে প্রাথমিকভাবে তিনটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে একটি ১ হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল, একটি ৮৩০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল এবং একটি দেড় হাজার মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল। তিনটি টার্মিনালের মোট দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার। মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ টার্মিনালে জেটি থাকবে ছয়টি।

বাকি দুটি টার্মিনাল সিঙ্গাপুরে পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল ও আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড নির্মাণ ও পরিচালনা করবে। এজন্য প্রতিষ্ঠান দুটি ১৫০ কোটি ডলার করে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। আবুধাবি পোর্টস আরেকটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে ১০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ হতে পারে। এ ছাড়া নৌপথ তৈরিতে ৫৯ কোটি ডলার বিনিয়োগের পাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে ইস্ট কোস্ট গ্রুপ ৩৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগে তেল ও গ্যাসের টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পে ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে।

বে টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ১০ থেকে ১২ মিটার ড্রাফটের ৬ হাজার কনটেইনার বহন ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ নোঙ্গর করা সম্ভব হবে। বন্দরের বিদ্যমান অবকাঠামোতে জেটিতে সর্বোচ্চ ১৮০০ একক ধারণক্ষমতার কনটেইনার জাহাজ ঢুকতে পারে। এখন বন্দরে জোয়ার-ভাটার ওপর ভিত্তি করে জাহাজগুলো জেটিতে ভেড়ে। কিন্তু বে টার্মিনালে ২৪ ঘণ্টাই জাহাজ ভিড়তে পারবে।

সারাবাংলা/আরডি/একে

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম বে টার্মিনাল টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর