Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৮ বছরে মেলেনি এক ছটাক চাল, ভুক্তভোগীকেই শোকজ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩ মে ২০২৪ ১১:৫১

লালমনিরহাট: স্বামী-স্ত্রী দুইজনের নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির দুটি কার্ড থাকলেও দীর্ঘ আট বছরেও মেলেনি এক ছটাক চাল। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে শোকজ পেলেন মমিনুর-ছকিনা দম্পতি। শুধু তাই নয় অভিযোগ তুলে নিতে আপস করার জন্য তদন্ত কমিটি চাপ দিচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের।

একই পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দুই জনের নামে কার্ড করে নিয়ে দীর্ঘ আট বছর ধরে চাল আত্মসাৎ করা ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে গত ২৭ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী দিনমজুর মমিনুর ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মহিষাশ্বর ম্যালম্যালির বাজার এলাকার মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে মনিনুর ইসলাম। তার স্ত্রীর নাম ছকিনা খাতুন।

জানা গেছে, হতদরিদ্র শ্রমিক দিনমজুর পরিবারের মানুষদের মাঝে স্বল্প মূল্যে চাল বিক্রি করতে সরকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু করে। প্রথম দিকে ভর্তুকি মূল্যে ১০ টাকা কেজিদরে পরিবার প্রতি ৩০ কেজি হারে চাল বিক্রি শুরু করে সরকার। পরবর্তীকালে দাম বাড়িয়ে ১৫ টাকা কেজিদর করা হয়। স্থানীয় লোকজন এ কারণে এ কার্ডকে ১০ টাকার কার্ড নামেই জানেন।

অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার এনামুল হক ভরসা চালের কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে ২০১৬ সালে দিনমজুর মমিনুর ইসলামের কাছ থেকে তার ও তার মায়ের পরিচয়পত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করেন। পরিচয়পত্র নিয়ে উপজেলা খাদ্য অফিস থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড করলেও তা মমিনুর ইসলামের কাছে গোপন রাখেন ডিলার ভরসা। গত ১৮ সালে মমিনুর ইসলামের মা রশিদা বেগম মারা গেলেও তার নামে বরাদ্দের চাল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন ডিলার এনামুল হক ভরসা।

বিজ্ঞাপন

অপরদিকে গেল বছর সরকার কার্ডধারীদের তথ্য ডিজিটাল করায় বিপাকে পড়েন ডিলার এনামুল হক ভরসা। কারণ কার্ডধারীর আপডেট ছবি ও আঙুলের ছাপ লাগবে। তখন কৌশলে ডিলার এনামুল হক ভরসা মৃত কার্ডধারী রশিদার পুত্রবধূ ছকিনার নামে কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে ছকিনার ও তার স্বামী মমিনুর ইসলামের ছবি ও আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেন।

এরপর মৃত রশিদার স্থলে তার পুত্রবধূ ছকিনার নামে কার্ড তৈরি করেন ডিলার ভরসা। একই সঙ্গে দিনমজুর মমিনুর ইসলামের নামের কার্ডের তথ্যও ডিজিটালে হালনাগাদ করে কার্ড দুটি নিজের কাছেই রেখে দেন ডিলার এনামুল হক ভরসা। স্ত্রী ছকিনার নামের কার্ডটির জন্য দীর্ঘদিন ধরে দিনমজুর মমিনুর নিষ্ফল ঘুরেছেন ডিলারের দুয়ারে।

গত মাসের চাল বিতরণকালে উপজেলা খাদ্য বিভাগ ডিলারদের মাঝে কার্ডধারীদের তালিকা নতুন করে বন্টন করেন। এতে শফিকুল ইসলাম নামে এক ডিলারের হাতে পড়ে মমিনুরের স্ত্রী ছকিনার নামের কার্ড। সেই কার্ডে চাল নিতে আসেন ডিলার এনামুল হক ভরসার দোকানের কর্মচারী নাইম। এতে সন্দেহ হওয়ায় ছকিনা বেগমকে ফোন করেন নতুন ডিলার শফিকুল ইসলাম। তখন মমিনুরের পরিবার জানতে পারে ছকিনার নামে খাদ্যবান্ধবের কার্ড হয়েছে। কার্ড হয়েছে মর্মে স্বীকার করলেও পাঁচ হাজার টাকা না দিলে কার্ড দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় ডিলার এনামুল হক ভরসা।

নিরুপায় দিনমজুর মমিনুর ইসলাম অল্প দামে চাল পেতে ডিলার ভরসাকে ঋণে নেওয়া দুই হাজার টাকা দেন কার্ডটি ফেরত পেতে। টাকা নিলেও কার্ড বা চাল কোনোটাই দেননি ভরসা। উপজেলা খাদ্য অফিসে গিয়েও কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী দিনমজুর মমিনুরকে সহায়তা করেননি। বরং ডিলার ভরসার বিরুদ্ধে না গিয়ে ভরসার কথামতো চলতে বলা হয়।

পরে অন্য মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালুর দিন থেকে দিনমজুর মমিনুর ইসলামের নামে কার্ড ও চাল বরাদ্দ ছিল যার কার্ড নম্বর-১৬৯ এবং তার মৃত মা রশিদার পরিবর্তে তার স্ত্রী ছকিনার কার্ড নম্বর-১৪৮০। পরিবারে দুইটি কার্ড থাকার পরেও এক ছটাক চালও কিনতে পারেননি দিনমজুর মমিনুর ইসলাম-ছকিনা দম্পতি।

অবশেষে ২৭ মার্চ তাদের নামে বরাদ্দকৃত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড ও দীর্ঘদিন ধরে আত্মসাৎ করা চাল উদ্ধার এবং অভিযুক্ত ডিলার এনামুল হক ভরসার বিরুদ্ধে বিচার দাবি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মমিনুর ইসলাম।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, সমবায় ও সহকারী প্রোগ্রামারকে নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন ইউএনও। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিজে আপস করার চাপ দেন বলে দাবি করেন অভিযোগকারী।

এতে সম্মতি না দেওয়ায় অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে গত ১৮ এপ্রিল শোকজ পাঠান উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হাসনা আকতার। সেখানে দুই কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দাখিল করতে ব্যর্থ হলে তাদের উভয়ের কার্ড বাতিলসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী মমিনুর ইসলাম বলেন, দীর্ঘ আট বছর ধরে আমার পরিবারের নামে দুইটি কার্ড করে বিপুল পরিমাণ সরকারি চাল আত্মসাৎ করেছেন ডিলার এনামুল হক ভরসা। এতদিন খাদ্যবিভাগ তা চোখে দেখল না। আমি অভিযোগ দিলাম দুর্নীতিবাজ ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। এখন তারা দুর্নীতিবাজকে বাঁচাতে তথ্য গোপন করে না কি আমরা সরকারি সুবিধা আত্মসাৎ করেছি। তাই আমাকে শোকজ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

আদিতমারী উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক হাসনা আখতার বলেন, সত্য উৎঘাটনের জন্য বাদিকে আপস করার কথা বলেছি, বলতেই পারি। শোকজের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, অভিযোগকারীকে শোকজ করাটা দুঃখজনক। তিনি শোকজ না করলেও পারতেন। সেটা খাদ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে করেছেন হয়তো। তবে তদন্ত প্রতিবেদন হাতে এসেছে, বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সারাবাংলা/এনইউ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

২৪ বলে ০ রানে জাকিরের লজ্জার রেকর্ড
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:১৮

সম্পর্কিত খবর