পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, মে মাসেই খুলনা-মোংলা রুটে চলবে ট্রেন
৪ মে ২০২৪ ০৮:১৫
বাগেরহাট: গত বছরের নভেম্বরে উদ্বোধন করা হলেও স্থায়ী জনবল নিয়োগসহ নানা জটিলতায় খুলনা-মোংলা রুটে ট্রেন চালু করা যায়নি। কবে নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু হবে সেটি নিয়েও ধোঁয়াশা কাটছিলো না, ফলে খুলনা-মোংলা রুটে রেল চালুতে জট দেখা দেয়। তবে সমস্যার জটিলতা অবসান এবং আপাতত অস্থায়ী জনবল দিয়ে এ মাসেই খুলনা-মোংলা রুটে বাণিজ্যিকভাবে রেল চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এজন্য গত মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে খুলনা থেকে মোংলা রেলপথের চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ করা হয়। এসময় বাংলাদেশ রেলওেয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) ও প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান, মহা-ব্যবস্থাপক (পশ্চিম) অসীম কুমার তালুকদার, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) এ এম সালাহ উদ্দীনসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
রেল লাইনের প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘রেললাইনে বিভিন্ন ধাপের ফিনিশিংয়ের কাজ বাকি ছিল, সেটি শেষ করা হয়েছে। চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষাও শেষ। বাণিজ্যিকভাবে রেল চালুর জন্য খুলনা-মোংলা রুট পুরোপুরি উপযোগী।’
তবে স্থায়ী জনবল নিয়োগের বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আটকে থাকায় অস্থায়ী জনবল দিয়ে আপতত রেল চালানোর জন্য রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের (পাকশী) কাছে সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান।
খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ফিনিশিংয়ের কাজ শেষ করে গত মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) চূড়ান্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। লাইন চালুতে দরকার প্রয়োজনীয় জনবল। এই রুটে ৮টি স্টেশন ও লাইন ক্লিয়ারিংয়ে ৫৭৬ জন জনবলের অর্গানোগ্রাম করা হয়েছে। সেটিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। তবে আপাতত অস্থায়ী জনবল নিয়োগ দিয়ে রেল চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের (পাকশী) বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ (ভারপ্রাপ্ত) বীরবল মন্ডল জানান, নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ না করে চলতি মাসের যেকোন দিন রেল চালুর বিষয়টি মাথায় রেখে স্টেশনের আসবাবপত্র, রেলস্টেশন ও রেলক্রসিংগুলোতে অস্থায়ী জনবল নিযুক্ত, রুটে চলাচলকারী রেলের সময়সূচি, ভাড়া ও শিডিউল চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করে খুলনা-মোংলা রুটে এ মাসেই বাণিজ্যিকভাবে রেল চলানো হবে।
প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন হয়। জমি অধিগ্রহণ, রেললাইন, রেলসেতু নির্মাণসহ পুরো প্রকল্পের ব্যয় তখন ধরা হয়েছিল এক হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এরপর ২০১৫ সালে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এরপর ২০২১ সালে ফের সময় ও ব্যয় বাড়ে। তখন ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। সেই মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত করা হয়।
অন্যদিকে, প্রকল্পের কাজ রূপসা নদীর ওপর ৫.১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে রেলসেতু, ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার পথ হলেও স্টেশনগুলোর ডাবল লাইন হিসাব করে ৯১ কিলোমিটার রেলপথ, ৯টি প্ল্যাটফর্ম এবং ১০৭টি ছোট সেতু ও ৯টি আন্ডারপাস নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশনের কাজও শেষ করা হয়।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে ভার্চুয়ালি খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এর আগে, ৩০ অক্টোবর ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে রেল চালানো হয়।
এদিকে, রেল চলাচল শুরু হলে এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ এবং ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর দিয়ে দ্রুত ও কম খরচে মালামাল নিতে পারবে। মোংলার সঙ্গে রেলপথে যাতায়াত সুবিধার পাশাপাশি আরও গতিশীল হবে মোংলা বন্দর। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন বিকাশে আরও সহায়ক হবে এই রুট।
সারাবাংলা/এমও