ছুটির দিন ভোর থেকে দুঃসহ, বেলা বাড়তেই সহনীয় ঢাকার বাতাস
৩ মে ২০২৪ ২২:২৮
ঢাকা: বৃহস্পতিবার রাতে বহুল প্রতীক্ষিত বৃষ্টি নামার পরেও ভোর পাঁচটা থেকে সকাল এগারোটা পর্যন্ত টানা অস্বাস্থ্যকর দেখা যায় রাজধানী ঢাকার বায়ু দূষণ পরিস্থিতি। শুক্রবার (৩ মে) বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ু দূষণ পরিস্থিতিরও উন্নতি দেখা যায়। এদিকে পুরো সপ্তাহজুড়েই সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর থেকে অস্বাস্থ্যকরতর ছিল ঢাকার বাতাস। সপ্তাহজুড়ে ১৫০ পার না করলেও আজ শুক্রবার এটির স্কোর ১৫২ তে উঠে গেছে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ু দূষণ পরিমাপক সংস্থা আইকিউএয়ারের বায়ু দূষণ স্কোর পর্যপেক্ষণ করে এ সব তথ্য জানা গেছে।
আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে তাকে ‘মাঝারি’ বা ‘গ্রহণযোগ্য’ মানের বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু ধরা হয়। ৩০১ থেকে তার ওপরের স্কোরকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ধরা হয়।
স্কোরের এসব হিসাব-নিকাশ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যাচ্ছে, সপ্তাহজুড়ে সহনীয় ছিল ঢাকার বায়ু। অবশ্য এসময় তীব্র দাবদাহের ফলে আবহাওয়া অত্যন্ত বিরূপ ছিল। চল্লিশের বেশি তাপমাত্রা নিয়ে পুড়েছে রাজধানী ঢাকা। একদিকে প্রকৃতি পুড়লেও বায়ু পরিস্থিতি তুলনামূলক সহনীয় ছিল।
গত শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) ১৩১ স্কোর নিয়ে বিশ্বের ১২১ টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ষষ্ঠ। শনিবার (২৭ এপ্রিল) ১৩২ একিউআই, রোববার (২৮ এপ্রিল) ১৪৯ একিউআই, সোমবার (২৯ এপ্রিল) ১৩৬ একিউআই, মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) ১৩৪ একিউআই, বুধবার (১ মে) ৯৫ একিউআই, বৃহস্পতিবার (২ মে) ১১৮ একিউআই স্কোর নিয়ে ঢাকা সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর অবস্থান ধরে রেখেছিল। ১৫০ এর নিচে স্কোর মানে তা সংবেদনশীল অর্থাৎ বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী, শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। এর মধ্যে বুধবার আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের ছুটি থাকায় ওইদিন ঢাকার বায়ুদূষণ লক্ষণীয়ভাবে কমে যায়। ওইদিন ৯৫ স্কোর নিয়ে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় পৌঁছে।
আজ গড়ে ১৫২ স্কোর নিয়ে বিশ্বের ১২০ টি শহরের মধ্যে ঢাকা ৮ম। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে এটি ৯.৯ গুণ বেশি। যদিও দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে ১৪০ স্কোর নিয়ে ঢাকার অবস্থান ছিল ৯ম। সারাদিনের দূষণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ভোর পাঁচটা থেকে সকাল এগারোটা পর্যন্ত স্কোর দেড়শ’র উপরে অর্থাৎ সবার জন্য অসংবেদনশীল ছিল। তার আগে রাত বারোটা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত স্কোর ১৫০ এর নীচে ছিল। এরপর টানা ছয় ঘণ্টা ১৫০ এর উপরে স্কোর নিয়ে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর থাকার কমতে কমতে দুপুর তিনটায় এটি পৌঁছে ১০৫ এ যা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য।
বিশেষজ্ঞদের মতে ঢাকার বায়ু দূষণের প্রধান কারণ যত্রতত্র ইটভাটা, অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ, রাস্তা খোড়াখুড়ি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল, ধোঁয়ার উদগীরণ করে এমন রান্নাবান্না প্রভৃতি। দেখা যাচ্ছে তীব্র গরমে মানুষের বাহ্যিক চলাচল যত কমছে, ঢাকার বায়ু দূষণ পরিস্থিতি ততটাই সহনীয় মাত্রায় থাকছে। তাই বৃষ্টি হওয়ার পরেও যে দূষণ কমেনি, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা লক্ষণীয় মাত্রায় কমতে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে, গত ২৮ মার্চ বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে যত মানুষ অকালে মারা যায়, তাদের ২০ শতাংশের মৃত্যুর কারণ বায়ু দূষণ। পরিবেশ দূষণের মধ্যে অকাল মৃত্যুর ক্ষেত্রে ঘরে ও বাইরে বায়ু দূষণকে সবচেয়ে বেশি হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, অকালমৃত্যুর প্রায় ৫৫ শতাংশের কারণই বায়ু দূষণ। এ কারণে ২০১৯ সালে জিডিপির ক্ষতি হয়েছিল ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ।
এ ছাড়া আইকিউএয়ারের ২০২৩ সালের বায়ুদূষণ বিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বায়ুদূষণে গত বছর শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় স্থানে পাকিস্তান। আর রাজধানী শহর হিসেবে ঢাকার স্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। শীর্ষে ছিল ভারতের নয়াদিল্লি।
সারাবাংলা/আরএফ/একে