Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নেভেনি সুন্দরবনের আগুন, নিয়ন্ত্রণে লাগবে আরও ৩ দিন

মনিরুল ইসলাম দুলু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৫ মে ২০২৪ ১৯:৪৮

বাগেরহাট: সুন্দরবনে ২৮ ঘণ্টা ধরে জ্বলতে থাকা আগুন নেভাতে হেলিকপ্টার দিয়ে পানি ছিটাচ্ছে বিমানবাহিনী। রোববার (৫ মে) দুপুর থেকে আগুন লাগা স্থানে পানি দেওয়া শুরু করে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারটি। এছাড়া সকাল থেকে আগুন নির্বাপণের জন্য ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট, কোস্টগার্ড ও নৌ বাহিনীর একটি করে ইউনিট কাজ করছে। বনবিভাগ ও প্রশিক্ষিত ফায়ার ফাইটারদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দা ও বনসংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবকরাও আগুন নেভানোর কাছে অংশ নিয়েছেন।

সকাল থেকে নৌ, বিমান, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও বনরক্ষীদের সব ধরনের প্রচেষ্টায় আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করেছে বন বিভাগ। তবে আগামী তিন দিনের আগে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নৌবাহিনীর মোংলা ঘাঁটির ইঞ্জিনিয়ার অফিসার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আরাফাতুল আরেফিন বলেন, ‘রোববার সকাল থেকেই আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সম্মিলিতভাবে সবাই কাজ করে যাচ্ছি। এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। আশা করি আগামী তিন দিনের মধ্যে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।’

তিনি জানান, এর আগে সকাল ৯টা থেকে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়ার ছিলা এলাকায় লাগা আগুন নেভাতে কাজ শুরু করেন তারা। শুরুতেই নৌবাহিনীর মোংলা ঘাঁটির ১০ সদস্যের একটি অগ্নিনির্বাপক টিম আগুন নেভানোর কাজে নেমে পড়ে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পাশের ভোলা নদী থেকে পানি তোলার জন্য পাইপ সংযোগ দিয়ে ৪ দিকে ফায়ার লাইন কাটা হয়েছে। আগুন নেভানোর কাজ অব্যাহত আছে।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও, বাগেরহাট) কাজী নুরুল করিম বলেন, ‘শনিবার নানা প্রতিকূলতায় আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা যায়নি। রোববার সকাল থেকে কাজ শুরু করা হয়েছে। এতে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার যোগ দিয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসীও সব রকমের সহযোগিতা করছেন।’

আগুন ব্যাপক এলাকা ছড়িয়ে যাওয়ার আগেই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা হবে বলেও জানান বন বিভাগের এই কর্মকতা। তিনি বলেন, ‘আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আগুন লাগার পুরো ঘটনাস্থল ঘিরে ফায়ার লাইন কাটা হয়েছে। আগুন যাতে বিস্তৃত হতে না পারে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বাগেরহাটের উপপরিচালক মামুন আহমেদ জানান, রোববার সকালেই সুন্দরবনের আগুন নেভাতে তাদের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসেছে। এর মধ্যে মোংলা, মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলার তিনটি ইউনিট কাজ শুরু করেছে। বাকি দু’টি ইউনিট স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে।

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কী কারণে, কীভাবে আগুন লেগেছে তার সঠিক কারণ এখনও বের করা যায়নি।’

এদিকে, পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেবকে প্রধান করে আগুনের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধার স্টেশন অফিসার মো. ওবায়দুর রহমান এবং ধানসাগর স্টেশন অফিসার মো. রবিউল ইসলাম।

পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেব জানান, স্থানীয়রা একেকজন একেক তথ্য দিচ্ছেন। সব তথ্যই আমলে নিয়ে আমরা তদন্ত কাজ চালিয়ে যাব। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে আগুন লাগার সঠিক কারণ বের করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

আগুন নেভাতে ধীরগতির বিষয়ে ‘সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনে’র চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘সুন্দরবনকে আগুনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচাতে আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি নেই। প্রযুক্তি ব্যবহার করলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কম হতো। সুন্দরবনে আগুন বারবার কেন হচ্ছে তা স্বচ্ছভাবে দেখা উচিৎ। এই বন আমাদের সম্পদ, আমাদেরই রক্ষা করতে হবে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বাগেরহাট জেলা সদস্য এম এ সবুর রানা বলেন, ‘বারবার সুন্দরবনে আগুন লাগার ঘটনা উদ্বেগজনক। এমন ঘটনা ঘটার কারণও বিগত সময়ে বন বিভাগ চিহ্নিত করেছে। বন বিভাগ যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় এমনটি ঘটছে। বন দফতরের নজরদারির অভাবেই বনের বাস্তুতন্ত্র আজ হুমকিতে। এতে জীববৈচিত্রের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এ জন্য বন বিভাগের কর্মকর্তারা দায়ী। বনকে সুরক্ষিত রাখতে হলে টহল জোরদার করতে হবে। যারা বনের বিভিন্ন সম্পদ আহরণ করে তাদের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। কোন কোন এলাকায় বনজীবীরা ভ্রমণ করছে তাদের ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে।’

জানা গেছে, গত ২২ বছরে সুন্দরবনে ২৫ বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এসব আগুনের প্রায় সবগুলোই ঘটেছে পূর্ব সুন্দরবন এলাকায়।

সারাবাংলা/এমও

সুন্দরবন সুন্দরবনে আগুন সুন্দরবনের আগুন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর