চট্টগ্রামে কালবৈশাখীর তাণ্ডব, ভেঙে পড়েছে গাছপালা-বিদ্যুতের খুঁটি
৬ মে ২০২৪ ২১:৩৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: কালবৈশাখীর তাণ্ডবে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। নগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকা তিন ঘণ্টারও বেশিসময় ধরে বিদ্যুৎবিহীন হয়ে আছে। বোয়ালখালী, মীরসরাইসহ কয়েকটি উপজেলায় ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, টানা দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর নিচু এলাকাগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে।
সোমবার (৬ মে) দুপুর থেকে চট্টগ্রামে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়, যার তাণ্ডব চলে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে গাছ ভেঙে পড়ে যানচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। থেমে থেমে যানবাহন চলাচল করায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও উভয় পাশেই বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া, আমজুরহাট, কমলমুন্সির হাট, বাইপাস ও চন্দনাইশের কাঞ্চননগরসহ বিভিন্ন স্থানে এ সমস্যা দেখা গেছে।
এদিকে, ঝড়ে সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, বোয়ালখালী, পটিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। বোয়ালখালীতে কালবৈশাখী ঝড়ে গাছের ডাল পড়ে চার জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একজনের শরীর বজ্রাঘাতে ঝলসে গেছে। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
কালবৈশাখী ঝড়ে নগরীর জাকির হোসেন রোডের এমইএস কলেজ এলাকায় সড়কের ওপর বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ গাছ ভেঙে পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা মিলে সেটা সরানোর চেষ্টা করেন। কাজীর দেউড়ি এলাকায় শিশু পার্কের তিনটি বড় গাছ ভেঙে রাস্তার ওপর পড়ে। এতে রাস্তার একপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঝড়ে নগরীর বিভিন্ন কলোনির কাঁচাঘরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। উড়ে যায় বিভিন্ন বাড়ির চাল।
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বে থাকা আব্দুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে চট্টগ্রাম নগরীতে ১০ থেকে ১২টি গাছ ভেঙে রাস্তার ওপর পড়েছে। এ ছাড়া, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে গাছ ভেঙে পড়েছে। খবর পেয়ে বিভিন্ন স্টেশন থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে গাছ সরানোর কাজ করছেন।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঝড়ে অনেক এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া, নগরীর বেশকিছু জায়গায় ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ হয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। পরে পিডিবি লোক গিয়ে সেগুলো ঠিক করেছে। এখনও অনেক এলাকায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। বিদ্যুতের খুঁটি যেগুলো ভেঙে পড়েছে সেগুলো ঠিক করতে আমরা কাজ করছি।’
এদিকে, টানা দুই ঘণ্টার ভারি বর্ষণে সড়কে পানি জমে তৈরি হয়েছে জলজট। নগরীর ইপিজেড, সল্টগোলা, বন্দর, নিমতলা, বারিক বিল্ডিং আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, জিইসি, দুই নম্বর গেইট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, নতুন ব্রিজ, চকবাজার, পাঁচলাইশ এলাকার বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সড়কে জলজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে পথচারী, স্কুল ফেরত শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষদের পড়তে হয়েছে বিপাকে। তবে বৃষ্টি কমার পরপরই পানি সরে যেতে দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী সারাবাংলাকে জানান, টানা বৃষ্টিতে নগরীর কিছু কিছু জায়গায় পানি জমেছিল। কিন্তু বৃষ্টি কমার সঙ্গে সঙ্গেই পানি নেমে যায়। অল্প কিছু জায়গায় হয়তো এখনও পানি আছে। সেগুলোও নেমে যাবে।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মেঘনাথ তঞ্চগ্যা সারাবাংলাকে জানান, সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১২৯ মিলিমিটার। এ ছাড়া, বিকেল তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত তিন ঘন্টায় ভারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যার পরিমাণ ছিল ৯৭ দশমিক ৭ মিলিমিটার। মঙ্গলবার চট্টগ্রামে বেশকিছু এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
এ ছাড়া, কিছু এলাকায় শিলাবৃষ্টি হওয়ারও সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা। এ দিকে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কলকাতা থেকে চট্টগ্রামগামী ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইট কক্সবাজারে জরুরি অবতরণ করেছে।
ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, খারাপ আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রামে অবতরণ করতে না পেরে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে কলকাতা থেকে চট্টগ্রামগামী ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের এ ফ্লাইটটি।
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম