মা পপি খাতুনই শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন মেয়েকে: পুলিশ
ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৬ মে ২০২৪ ২২:২২
৬ মে ২০২৪ ২২:২২
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার ভোগাইল বগাদী গ্রামের শিশু মাইশা হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। মা পপি খাতুন নিজেই তার মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর, তার মেয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে বলে দাবি করেছিলেন। পরে পুলিশি তদন্তে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা। হত্যার দায় স্বীকার করে মা পপি খাতুন আদালতের বিজ্ঞ বিচারকের কাছে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সোমবার (৬ মে) সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার আর.এম.ফয়জুর রহমান এক সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে হত্যা রহস্য উন্মোচন করে ঘটনাটির বিবরণ তুলে ধরেন।
পুলিশ সুপার জানান, কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার ঝুঁটিয়াডাঙ্গা গ্রামের সাইফুল ইসলামের মেয়ে মাইশা খাতুন (৭) তার নানা চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভোগাইল বগাদী গ্রামের মরহুম নূর হোসেনের ছেলে শহিদুল ইসলামের বাড়িতে মোবাইল ফোন চার্জারের তার গলায় জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হয়েছে। এ কথা বলে মাইশাকে তার আত্মীয়-স্বজনরা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ওই দিন সকাল অনুমানিক ৯ টা ৪০ মিনিটে ভর্তি করে। কিছুক্ষণ পর অর্থাৎ সকাল ১০টার দিকে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মারা যাওয়ার পর মা পপি খাতুন একই দিন রাত ১০টা ৫ মিনিটে তার মেয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা গেছে, এমন তথ্য সংবলিত একটি লিখিত অভিযোগ চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর দাখিল করেলে সেখানে একটি অপমৃত্যু মামলা নথিভুক্ত হয়। যার নম্বর- ১৪, তারিখ ২৯.০২.২০২৪।
এরপর অপমৃত্যু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আতিকুর রহমান জুয়েল রানা ঘটনাস্থলে তদন্ত করতে গেলে সেখানে নানা নেতিবাচক তথ্য পান। এ কারণে মেয়েটির দুর্ঘটনামূলক স্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলে, তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেন।
মেয়েটি মারা যাওয়ার পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিনা ময়নাতদন্তে লাশ দাফনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করলেও পুলিশ সুপারের মৌখিক নির্দেশে সুরতহাল প্রতিবেদনসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কর্তৃক সুনির্দিষ্ট মতামত গ্রহণের জন্য ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করা হয়। তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুনির্দিষ্ট মতামত দেন।
তারপর মেয়ে মাইশার নানা শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে গত শুক্রবার (৩ মে) আলমডাঙ্গা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে লিখিত অভিযোগটি ৩০২/৩৪ ধারায় হত্যা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। মামলা নম্বর: ০১।
রোববার (৫ মে) সকাল ৮টায় পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল), ডিআইও-১ এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বিকাশ কুন্ডু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গিয়ে মৃত মাইশার মা পপি খাতুনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সন্দেহ হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে আসা হয়। এরপর নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেন। সে সময় তাকে প্রশ্ন করা হয়, কেন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন? তার কোনো সহযোগী ছিল কিনা? সেসব প্রশ্নে তিনিই এ হত্যাকাণ্ড নিজেই ঘটিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। ত
দন্তে নিহত মাইশার মা পপি খাতুনের পূর্বাপর পারিবারিক ও ব্যক্তি জীবন, বৈবাহিক জীবন, তারপর বিবাহ বিচ্ছেদ এবং বিবাহ বিচ্ছেদ পরবর্তী সময়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি পাওয়া গেছে যা এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ হিসেবে কাজ করেছে বলে এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, এটি একটি স্পর্শকাতর হত্যাকাণ্ড। মামলা নথিভুক্ত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার মূল রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। ঘটনায় জড়িত মূল হত্যাকারী শিশু সন্তানের আপন মা পপি খাতুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তদন্তকালে পাওয়া তথ্যাদি যাচাই-বাছাই শেষে দ্রুত ঘটনায় জড়িত আসামিকে বিচারের মুখোমুখি করার লক্ষ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে তিনি জানান।
সারাবাংলা/একে