১০ জনকে মেরে অজ্ঞান করার অভিযোগে ওসিসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা
৬ মে ২০২৪ ২৩:২৬
মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানা কক্ষে আটকে মুখে গামছা বেঁধে শূন্যে ঝুলিয়ে ১০ জনকে মেরে অজ্ঞান করে ফেলার অভিযোগে ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মুন্সীগঞ্জ আদালতে মামলা হয়েছে।
মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে সিরাজদিখান থানা পুলিশকে এফআইআর হিসেবে তা গ্রহণ করতে বলেছে। পাশাপাশি পিআইবিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পিবিআই পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে বাদী তথা ভুক্তভোগীর জখমের বিষয়ে সিভিল সার্জনকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. হোসেন এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছেন।
গত রোববার (৫ মে) দুপুরে সিরাজদিখান উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নির্যাতনের শিকার আব্দুল বারেক কারাগারে থেকেই বাদী হয়ে মুন্সীগঞ্জ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নালিশি মামলা দায়ের করলে ওই আদালতের বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ কাজী আব্দুল হান্নান এই আদেশ দেন।
এই মামলার আসামিরা হলো সিরাজদিখান থানার ওসি মো. মুজাহিদুল ইসলাম, ওসি তদন্ত মো. মোক্তার হোসেন, এসআই রতন বৈরাগী, মো. লোকমান হোসেন, মো. মনোয়ার হোসেন, মোঃ সালাউদ্দিন, এএসআই মো. মাইনুল, মো. আল আমিন হাওলাদার, কনস্টেবল মো. মিজানুর রহমান।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২২ এপ্রিল বিকেল ৪টার দিকে মামলার বাদীসহ ৫-১৪ নং সাক্ষী এই মামলার ভিকটিম মো. ইসরাফিল শেখ, তৌফিক আহমেদ তুষার, ফরহাদ হোসেন, মো. সৈকত হোসেন, আমিনুল ইসলাম, মো. আসাদুজ্জামান, আব্দুল হাকিম, রেজাউল বাড়ি ওরফে রাজু, তায়েব ভূঁইয়া, মো. রুবেল আসন্ন সিরাজদিখান উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে তাদের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আওলাদ হোসেন মৃধার সমর্থনে ওই এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সিরাজদিখান উপজেলার কুচিয়ামোড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে আলোচনা করছিলেন। এ সময় আরেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মাইনুল ইসলাম নাহিদ এর মামা আশ্রাফ আলীর ইন্ধনে এই মামলার আসামি পুলিশের ওই ৯ সদস্যসহ আরও অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জন আসামি এসে অতর্কিত লাঠিপেটা শুরু করে।
পরে পুলিশ এই মামলার বাদী আব্দুল বারেকসহ ৫-১১ নং সাক্ষীকে জোর করে পুলিশের ভ্যানে তুলে সিরাজদিখান থানায় নিয়ে একটি অন্ধকার কক্ষে আটকে রাখে। পরে ওইদিন রাত ৮টার দিকে পুলিশের ওই ৯ সদস্যসহ আসামিরা কাঠের ডাসা, প্লাস্টিকের কালো লাঠি, প্লাস্টিকের দড়ি, গামছা নিয়ে ওই অন্ধকার কক্ষে প্রবেশ করে একটি চার্জার লাইটের মাধ্যমে আলো জ্বালায়। এ সময় ১ নং আসামি সিরাজদিখান থানা ওসি মো. মোজাহিদুল ইসলাম অন্যান্য আসামিদেরকে হুকুম দেয় সবাইকে মুখে গামছা বেঁধে ঝুলানোর। পরে ২-৯ নং আসামি পুলিশের অন্যান্য সদস্যরা মামলার বাদীসহ সবাইকে মুখে গামছা বাঁধে এবং দুই হাত একত্রিত করে বেঁধে ওপরের দিকে শূন্যে ঝুলিয়ে রাখে।
এ সময় সিরাজদিখান থানা ওসি মোজাহিদুল ইসলাম একটি কাঠের ডাসা দিয়ে মামলার বাদীর পায়ের তালুতে অমানবিকভাবে মারতে থাকে। অন্যান্য আসামি পুলিশ সদস্যরা ৫-১৪ নং সাক্ষীকে পায়ের তালুতে এবং কোমরের নিচ থেকে কনুই পর্যন্ত আঘাত করে সবাইকে অজ্ঞান করে ফেলে। এ সময় মামলার বাদী অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে জ্ঞান ফিরলে দেখে তার বাম পায়ের হাঁটুর নিচে রক্তাক্ত ফাটা জখম দিয়ে রক্ত ঝরছে এবং ৫-১৪ নং সাক্ষী আসামিদের পুলিশ সদস্যদের অমানবিক ও নিষ্ঠুর আঘাতের কারণে বেহুঁশ হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে। এ সময় ৮ নং আসামি এএসআই মো. মাইনুল ভিকটিমদের নাকে মুখে পানি ঢেলে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে। পরে এই মামলার আসামিরা পুলিশ মামলার বাদীসহ পাঁচ থেকে ১৪ নং সাক্ষীকে সিরাজদিখান ইছাপুরা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করে।
পরে আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দিয়ে পাঁচদিনের পুলিশ রিমান্ড চেয়ে এই মামলার বাদীসহ ৫ থেকে ১৪ নম্বর সাক্ষীদের আদালতে পাঠায় পুলিশ।
সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার আঞ্জুমান আরা বলেন, ‘আমার যতটুকু মনে আছে ওই দিন রাতে ১০ থেকে ১১ জন মানুষ আমার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিল। তবে তাদের শরীরে কী ধরনের আঘাত ছিল তা মনে নেই।’
এ ব্যাপারে সিরাজদিখান থানার অফিসার ইনচার্জ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মামলা হয়েছে কিনা এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’
মুখ বেঁধে মামলার বাদীসহ সাক্ষীদের অত্যাচারের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্যাতন করার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
সারাবাংলা/একে