Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নওগাঁয় পানির অভাবে অনাবাদি পড়ে আছে ১০০ বিঘা জমি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৭ মে ২০২৪ ০৮:৫৪

নওগাঁ: নওগাঁ সদর উপজেলায় কৃষিকাজে ব্যবহৃত একটি গভীর নলকূপ বন্ধ রাখা হয়েছে। পানির অভাবে ওই সেচযন্ত্রের আশপাশের প্রায় ১০০ বিঘা জমি অনাবাদি পড়ে আছে। সেচসংকটের কারণে কিছু কৃষক ধানের আবাদ না করে জমিতে তিলের চাষ করেছেন। অনাবৃষ্টির কারণে তিলের গাছও মরে যেতে বসেছে।

সেচ নিয়ে কৃষকদের এমন দূরবস্থা নওগাঁ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হাজীপাড়া, মাদরাসা পাড়া, সরদার পাড়া, শেখপুরা ও মন্ডলপাড়া এলাকায়। কৃষকদের দাবি, পৌরসভার হাজীপাড়া মহল্লাসংলগ্ন মাঠে একটি গভীর নলকূপ রয়েছে। গভীর নলকূপটি মকবুল হোসেন ওরফে গ্যাদো নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করেন। ওই এলাকায় প্রায় ২০০ বিঘা জমি রয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমের শুরুতে নলকূপটির মালিক মকবুল হোসেন কৃষকদের কাছ থেকে বোরো ধান আবাদের জন্য প্রতি বিঘা জমিতে সেচের জন্য ২ হাজার টাকা করে দাবি করেন।

বিজ্ঞাপন

আশপাশের অন্য নলকূপের সেচ খরচের তুলনায় বেশি টাকা দাবি করায় কৃষকেরা ওই পরিমান টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। চাহিদা অনুযায়ী সেচ খরচ দিতে রাজি না হওয়ায় সেচযন্ত্রটি বন্ধ রেখেছেন গভীর নলকূপের মালিক মকবুল হোসেন। এ নিয়ে জেলা প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ দাখিল করেও কৃষকেরা কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।

গত ১৯ মার্চ ৬০ জন কৃষক স্বাক্ষরিত ওই লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ পৌরসভার হাজীপাড়া, সরদারপাড়া ও মাদরাসাপাড়া মহল্লার মধ্যবর্তী মাঠে প্রায় ৩০০ বিঘা ফসলি জমি আছে। এসব জমিতে প্রতি মৌসুমে কয়েক হাজার মণ ধান হয়।

বোরো মৌসুমে ওই এলাকার কৃষকদের কথা মাথায় রেখে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ওই মাঠে দু’টি গভীর নলকূপ স্থাপন করে দিয়েছে। ওই দু’টি সেচযন্ত্রের মধ্যে মকবুল হোসেন পরিচালিত গভীর নলকূপের অধীনে প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে চাষাবাদ হয়ে থাকে। বিগত তিন বছর ধরে মকবুল হোসেনের ছেলে সবুজ কৃষকদের জিম্মি করে সেচ বাবদ বেশি টাকা আদায় করছে।

বিজ্ঞাপন

পার্শ্ববর্তী বোয়ালিয়া, শেখপুরা এলাকায় গভীর নলকূপ থেকে প্রতি বিঘা জমিতে সেচ খরচ বাবদ যেখানে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে, সেখানে সবুজ তার সেচযন্ত্র থেকে সেচ খরচ দাবি করে ২ হাজার টাকা। অধিকাংশ কৃষক এই পরিমাণ টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় মকবুল হোসেনের ছেলে সবুজ সেচযন্ত্রটি থেকে পানি তোলা বন্ধ করে দেন। ধানের বীজতলায় সেচ দিতে না পারায় কৃষকদের চারা নষ্ট হয়ে যায়। জমিতে ধান লাগাতে না পেরে অনেক কৃষক জমিতে তিলের চাষ করেছেন। কিন্তু দীর্ঘ অনাবৃষ্টির কারণে এবং সেচ যন্ত্র বন্ধ থাকায় অধিকাংশ তিল খেতের গাছ মরে যেতে বসেছে। এই অবস্থা নিরসনে জেলা ও উপজেলা সেচ কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কৃষকেরা।

সম্প্রতি পৌরসভার হাজীপাড়াসংলগ্ন ওই ফসলি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ওই মাঠে অনেক জমি অনাবাদি পড়ে আছে। কিছু জমিতে তিলের চাষ করা হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে অনাবাদি জমি ও তিলের খেতের জমি শুকিয়ে আছে। পানির অভাবে শুকনো মাটিতে বপন করা তিল বীজ থেকে চারা গজায়নি। আবার কিছু কিছু জমিতে চারা গজালেও পানির অভাবে তিলের গাছগুলোর পাতা শুকিয়ে লালচে হয়ে মরতে বসেছে।

হাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল আমিন বাশার জানান, এই জমি ইরি-বোরো ও আমন মৌসুমে যে পরিমান ধান তা দিয়ে তাদের সংসার চলে। জমিতে এবার ধান লাগানোর জন্য ৭-৮ হাজার টাকা খরচ করে বীজতলা চারা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু ডিপ টিউবওয়েল থেকে পানি তোলা বন্ধ রাখায় এবং অন্য কোনো উপায়ে জমিতে সেচের ব্যবস্থা না থাকায় সেই চারা জমিতে লাগাতেই পারেননি তিনি। পরে সেই জমিতে তিনি তিলের বীজ বপন করেন। পানির অভাবে তিলের গাছও মরে যেতে বসেছে।

হাজীপাড়া মহল্লার আরেক কৃষক আলাউদ্দিন। জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেন। এবার ধান চাষের জন্য দেড় বিঘা জমি প্রস্তুত করেছিলেন। কিন্তু সেচযন্ত্র বন্ধ রাখায় পানির অভাবে পরবর্তীতে সেই জমিতে তিনি আর ধান আবাদ করতে পারেননি। আলাউদ্দিন বলেন, ‘আশপাশের কোনো ডিপ টিউবওয়েলেই ২ হাজার টাকা করে সেচ খরচ নেওয়া হচ্ছে না। অথচ মকবুল হোসেনের ছেলে সবুজ কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি বিঘা জমিতে ২ হাজার টাকা করে সেচ খরচ দাবি করেন। কৃষকেরা প্রথমে ১৪০০ টাকা করে দিতে চায়। তাতে রাজি না হওয়ায় পরবর্তীতে ১৬০০ টাকা করে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তাতেও রাজি হননি সবুজ। লাভ কম হবে তাই সবুজ ডিপ টিউবওয়েল থেকে পানি তোলাই বন্ধ রাখে। ধান আবাদ করতে না পারায় কয়েক গ্রামের প্রায় শতাধিক কৃষক পরিবার বিপাকে রয়েছেন।’

সরদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা রাব্বানী হোসেন বলেন, ‘কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য সরকার বরেন্দ্র এলাকার মাঠে মাঠে গভীর নলকূপ বসিয়েছে। অথচ ডিপ টিউবওয়েলের পরিচালক মকবুল ও তার ছেলে আমাদের জিম্মি করে গত কয়েক বছর ধরে অধিক সেচ খরচ নিয়ে আসছে। এবার আমরা তার প্রতিবাদ করায় এবং প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করায় আমাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য ডিপ টিউবওয়েল থেকে পানি তোলা বন্ধ রেখেছেন। ডিপ টিউবওয়েলের পরিচালক হলেই যা ইচ্ছে তাই করতে পারবেন এমনটা হওয়া উচিত নয়।’

কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সেচযন্ত্রের মালিক মকবুল হোসেন বলেন, ‘একটা মৌসুমে একটা ডিপ টিউবওয়েল চালালে তিন থেকে চার লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসে। এছাড়া ট্রান্সফরমার বা সেচযন্ত্রের অন্য কোনো অংশ নষ্ট হয়ে গেলেও বাড়তি খরচ হয়ে যায়। মেশিন চালাতে যে খরচ হবে, সেটা তুলতে না পারলে লোকসান গুনতে হবে। তাই পানি তোলা বন্ধ রেখেছি।’

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি এস এম রবিন শীষ বলেন, ‘বেশ কিছু দিন আগে এ ধরণের একটি অভিযোগ পেয়েছিলাম। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে তদন্ত করতে বলেছিলাম। কৃষকদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে সেচযন্ত্রটি চালু করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সারাবাংলা/এমও

অনাবাদি জমি পানির অভাব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর