নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ, ‘উৎসবে’র অপেক্ষায় হালদা
৭ মে ২০২৪ ১৪:৫৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের হালদা নদীতে অল্প পরিমাণে নমুনা ডিম ছেড়েছে কার্পজাতীয় প্রজনন সক্ষম মাছ। হালদাপাড়ের মানুষের কাছে ‘মা মাছ’ হিসেবে পরিচিত এসব মাছ সন্ধ্যার দিকে পূর্ণাঙ্গভাবে ডিম ছাড়তে পারে বলে আশা করছেন হালদা গবেষক ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা। ডিম সংগ্রহের আশায় হালদাপাড়ে অপেক্ষা করছেন হাজারখানেক মানুষ, নদী ঘিরে যাদের জীবন ও জীবিকা। সব মিলিয়ে হালদাপাড়ে এখন উৎসবের আমেজ চলছে।
মঙ্গলবার (৭ মে) ভোরে হালদা নদীর আজিমের ঘাট থেকে অঙ্কুরীঘোনা পর্যন্ত এলাকায় মা মাছ বিক্ষিপ্তভাবে নমুনা ডিম ছেড়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরিয়া।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) ভোরে কিছু নমুনা ডিম ছেড়েছে। নমুনা ডিম হলেও পরিমাণে বেশি। আশা করছি, সন্ধ্যার দিকে কিংবা রাতে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে বড় মাছ পূর্ণাঙ্গভাবে ডিম ছেড়ে দেবে।’
হালদাপাড়ে থাকা চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ভাটা শেষে মঙ্গলবার ভোরে হালদা নদীর রাউজান উপজেলা অংশের মইশকরম এলাকার চইল্যাখালিতে নমুনা ডিম পাওয়া যায়। স্থানীয় পাখিরাম দাস, হরিরঞ্জন দাস, সন্তোষ দাস, সুজিত দাস ও সুনীল দাস ১১টি নৌকায় কিছু নমুনা ডিম সংগ্রহ করেন। প্রতি নৌকায় দুই থেকে আড়াই বালতি ডিম সংগ্রহ হয়েছে।
অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন আবহাওয়া ভালো। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ি ঢলও আছে। পানির কোয়ালিটিও ভালো। ডিম ছাড়ার জন্য এটা সুন্দর পরিবেশ। আশা করছি, আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যার দিকে পূর্ণাঙ্গভাবে ডিম ছাড়তে পারে। ডিম সংগ্রহের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মৎস্য বিভাগ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছে।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডিম সংগ্রহের জন্য প্রায় ৩৫০টি নৌকায় ৪০০ বিশেষ জাল নিয়ে প্রায় সাড়ে ছয় শ ডিম সংগ্রহকারী নদীতে অপেক্ষমাণ আছেন। সংগ্রহ করা ডিম থেকে পোনা তৈরির জন্য সরকারিভাবে চারটি হ্যাচারি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা আইডিএফের একটি হ্যাচারি আছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন আরও ৮-১০টি মিনি হ্যাচারি আছে। এ ছাড়া মৎস্যজীবীরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৬৮টি মাটির কুয়া তৈরি করেছেন। ডিম যেন নষ্ট না হয়, সেজন্য আমরা সচেষ্ট আছি।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার প্রায় ৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকাজুড়ে আছে হালদা নদী। প্রতি বছরের চৈত্র থেকে আষাঢ় মাসের মধ্যে পূর্ণিমা-অমাবস্যার তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল নামে হালদা নদীতে। আর তখনই তাপমাত্রা অনুকূলে থাকলে ডিম ছাড়ে রুই, মৃগেল, কাতলা ও কালিবাউশ— এ চার প্রজাতির প্রজনন সক্ষম মাছ।
সাধারণত মধ্য এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে হালদায় ডিম ছাড়ে মা মাছ। তবে গত ছয় বছরের মধ্যে শুধু ২০১৮ সালে এপ্রিল মাসে ‘মা মাছ’ ডিম ছেড়েছিল। গত বছর জুনের দ্বিতীয়ার্ধে ডিম ছেড়েছিল। এ ছাড়া বাকি চার বছরই মে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে মা মাছ ডিম ছাড়ে।
হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ১৪ হাজার ৬৬৪ কেজি, ২০২২ সালে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কেজি, ২০২১ সালে সাড়ে আট হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ হয়েছিল। ২০২০ সালে হালদা নদীতে রেকর্ড পরিমাণ ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৯ সালে প্রায় সাত হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। আর ২০১৮ সালে স্থানীয়রা ডিম সংগ্রহ করেছিলেন ২২ হাজার ৬৮০ কেজি।
এর আগে ২০১৭ সালে মাত্র এক হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে দুই হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর