চিড়িয়াখানায় প্রাণীগুলোর ওষ্ঠাগত প্রাণ, ধুঁকছে খাঁচার পাখিও
২৯ মে ২০১৮ ০৯:২২ | আপডেট: ৫ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:৪৬
।। রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: জৈষ্ঠের তীব্র তাপদাহে পুড়ছে সারা দেশ। তীব্র রোদের সঙ্গে ভ্যাপসা গরমে অতীষ্ঠ জনজীবন। শুধু কি মানুষ! চিড়িয়াখানায়ও হাসফাস করছে প্রাণী। ওষ্ঠাগত প্রাণ খাঁচার পাখিগুলোরও। তীব্র তাপদাহে হিট স্ট্রোকসহ বিভিন্ন ধরনের অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে খাঁচার পাখিরা।
সোমবার (২৮ মে) চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় এই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। সন্ধ্যা ৬টায় আদ্রতা ছিল ৬৭ শতাংশ।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আকাশে কোনো মেঘ নেই। সরাসরি সূর্যের আলো পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য তাপমাত্রা বেশি। সঙ্গে আদ্রতা বেশি থাকায় ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা গেছে, গরমে কাহিল হয়ে পড়েছে অধিকাংশ বন্যপ্রাণী। নির্জীব অবস্থায় খাঁচায় পড়ে আছে বাঘ-সিংহ, ভাল্লুক। পানিতে শরীর ডুবিয়ে গরম তাড়ানোর চেষ্টা করছে বানরেরা। চিড়িয়াখানায় ময়না-টিয়াসহ দেশি-বিদেশি ২৫ প্রজাতির পাখি আছে। সেগুলোর অবস্থাও সঙ্গীন।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাৎ হোসেন শুভ সারাবাংলাকে বলেন, কমবেশি সব পাখি এবং তিন প্রজাতির প্রাণী নিয়ে সমস্যায় আছি। পাখিগুলো পানিস্বল্পতায় ভুগছে। স্যালাইন পানি খাওয়াচ্ছি। ঘোড়া, বন্যগরু এবং জেব্রাকে প্রতিদিন দুবার করে পাইপ দিয়ে পানি ছুড়ে গোসল করাচ্ছি।
বাঘ-সিংহের বিষয়ে তিনি বলেন, ভাল্লুক ও বাঘের খাঁচায় পানি জমানো থাকে। গরম অনুভূত হলে বাঘ-ভল্লুক নিজেই পানিতে নেমে যায়। আর সিংহের স্বভাব হচ্ছে তারা পানি থেকে দূরে থাকে। তবে এখন তাপদাহ এত বেশি যে, সিংহও খাঁচার ভেতরে পানিতে নেমে যাচ্ছে।
নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে পাখির গলি হিসেবে পরিচিত দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, গরমের মধ্যে পাখিগুলোর প্রাণ বাঁচাতে তটস্থ থাকতে হচ্ছে দোকানীদের। চোখে ড্রপ দেওয়া, স্যালাইন পানি খাওয়ানো, ঠান্ডা পানি স্প্রে করাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত দোকানিরা।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বিদেশি পাখিদের মধ্যে লাভ বার্ড, বাজেরিগর, ককাটেইল, ফিঞ্চ, লরিকেতসহ কয়েকটি প্রজাতি আছে যেগুলো গরমে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ে। টিয়া পাখি, তিত মুরগি, চিনা মুরগি কাহিল হয়ে ঝিমুতে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি পানিস্বল্পতায় ভোগে কোয়েল পাখি ও খরগোশ।
পিজিয়ন প্লেইস নামে একটি দোকানের মালিক মোহাম্মদ সেলিম সারাবাংলাকে বলেন, আমার দোকানে কবুতর আছে। সেগুলোর জন্য তাপ নিয়ন্ত্রক ফ্যান লাগানো হয়েছে। চোখে নিয়মিত ড্রপ দিচ্ছি। কারণ গরমের মধ্যে কবুতরের চোখে ছানি চলে আসে। ঠান্ডা পানিও স্প্রে করা হচ্ছে। বৃষ্টি পড়লে সব ঠিক হয়ে যাবে।
ব্রিড বার্ডসের মালিক আবু মো. জাহাঙ্গীর সারাবাংলাকে বলেন, বিদেশি পাখিগুলো গরম একেবারে সহ্য করতে পারে না। ইতোমধ্যে মরতে শুরু করেছে পাখিগুলো। প্রতিদিন ১ থেকে ২টি করে পাখি মারা যাচ্ছে। আমরা স্যালাইন পানি খাওয়াচ্ছি। বেশি সমস্যা হলে ভেটেরিনারি ইউনিভার্সিটির ডাক্তারদের সঙ্গে পরামর্শ করছি।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ওমর ফারুক মিয়াজী সারাবাংলাকে বলেন, তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রির উপরে গেলেই খাঁচায় পোষা পাখির সমস্যা হয়। তারা এটা কোনোভাবেই সহ্য করতে পারে না। হিট স্ট্রোক, পাতলা পায়খানা, হাঁপিয়ে উঠা, মুখের ভেতরে ফেনা সৃষ্টি হওয়া এবং গ্যাংগ্রিন ও ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়। গরম সহনীয় রাখতে স্যালাইন পানি খাওয়ানো, ঠান্ডা পানি ছিটানোর পাশাপাশি ভিটামিন-সি খাওয়ানোর পরামর্শ দেন এই প্রাণী বিশেষজ্ঞ।
ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ চিটাগং বার্ড ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন তাপমাত্রা না কমা পর্যন্ত বাসায় পোষা পাখি নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা, নিয়মিত গোসল করানো এবং হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত পাখিকে তৎক্ষণাৎ একটি বাটিতে পানি নিয়ে মাথা ছাড়া শরীর ডুবিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সঞ্চালনশীল মেঘমালার কারণে মঙ্গলবার কিংবা এর পরের দিন থেকে মিয়ানমারে বৃষ্টি হতে পারে। এর প্রভাবে চট্টগ্রামেও তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা আছে।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই