টেকসই স্বাস্থ্য উন্নয়নে হেলথ প্রমোশন কর্মসূচি বাস্তবায়নের তাগিদ
৯ মে ২০২৪ ১৭:৫৭
ঢাকা: দেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ৭০ শতাংশই হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগে ঘটে থাকে। আর এর জন্য দায়ী তামাকপণ্যের ব্যবহার, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, কায়িক পরিশ্রমের অভাব, বায়ু দূষণের মতো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। বিশেষরা বলছেন, এই ঝুঁকি কমাতে দরকার হেলথ প্রমোশন কর্মসূচি গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাজধানীর বিএমএ ভবনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রগতির জন্য জ্ঞান- প্রজ্ঞা আয়োজিত ‘টেকসই স্বাস্থ্য উন্নয়নে হেলথ প্রমোশন: বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক মতবিনিময়ে এ সব কথা বলা হয়।
সেখানে স্বাস্থ্য ক্ষতি ও উন্নয়নের নানা তথ্য তুলে ধরা হয়। বলা হয়, ‘স্বাস্থ্য’ কেবল নিরোগ থাকা নয়, বরং শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে ভালো থাকার নামই ‘স্বাস্থ্য’। সাধারণভাবে স্বাস্থ্য উন্নয়ন, রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষা, চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও উপশম- এই পাঁচটিকে একত্রে ‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ বলা হলেও প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ‘স্বাস্থ্য’ বলতে কেবল ‘চিকিৎসা ব্যবস্থা’কে বোঝানো হয়ে থাকে।
বিশ্ব স্বাস্ব্য সংস্থার মতে, হেলথ প্রমোশন এমন একটি প্রক্রিয়া, যার দ্বারা মানুষ নিজের স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যের নির্ধারকগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে এবং নিজ স্বাস্থ্যের উন্নতি লাভের সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম, খাবারে অতিরিক্ত চর্বি, লবণ ও চিনি পরিহার এবং তামাক ও অ্যালকোহল বর্জন প্রভৃতি কাজে উদ্বুদ্ধ করার পরিবেশ সৃষ্টি করা ‘হেলথ প্রমোশন’ কার্যক্রমের অংশ। তবে এই কাজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়।
এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার অংশগ্রহণে একটি সমন্বিত পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে সংস্থাটি। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের ১১টি দেশ ইতোমধ্যে হেলথ প্রমোশন কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি হ্রাসে সাফল্য দেখিয়েছি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ থেকে বছরে প্রায় তিনশ’ কোটি আদায় হয়, যা স্বাস্থ্য উন্নয়নে খরচ করার কথা থাকলেও আমরা পারছি না। একটি স্বাধীন হেলথ প্রমোশন প্রতিষ্ঠান গঠন করে এই অর্থ স্বাস্থ্য উন্নয়নে ব্যয় করা গেলে জনগণ এবং সরকার উভয়ই লাভবান হবে।’
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মো. এনামুল হক বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন সংস্থা নানাবিধ হেলথ প্রমোশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। তবে টেকসই স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য একটি সমন্বিত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালে বাংলাদেশে চিকিৎসায় ব্যক্তির ব্যয় প্রায় ৭৪ শতাংশ, যার দুই-তৃতীয়াংশই খরচ হয় ওষুধে। হেলথ প্রমোশনের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হলে ব্যয় হ্রাসের পাশাপাশি জনগণের অসুস্থতা, মৃত্যু এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর চাপ কমে আসবে।
আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র পরিচালক গাউস পিয়ারী, অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা’র আহ্বায়ক মতুর্জা হায়দার লিটন, সহ-আহ্বায়ক নাদিরা কিরণ ও মিজান চৌধুরী এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রজ্ঞা’র হেড অব প্রোগ্রামস হাসান শাহরিয়ার।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম