‘আমেরিকা অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করলে ইসরায়েল একাই লড়বে’
১০ মে ২০২৪ ১৫:২৩
গাজার জনবহুল রাফা অঞ্চলে ইসরায়েল হামলা করলে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে সেই হুঁশিয়ারিকে আমলে নিচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করলেও ইসরায়েল একাই লড়তে সক্ষম।
নেতানিয়াহু বলেন, যদি প্রয়োজন হয়, আমরা একাই দাঁড়াব। আমি বলেছি যে প্রয়োজনে আমরা আমাদের শেষ বিন্দু দিয়ে লড়াই করে যাব।
বিবিসির খবরে বলা হয়, গাজার রাফায় ইসরায়েলি হামলায় বেসামরিক মৃত্যুর আশঙ্কায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে একটি বোমার চালান স্থগিত করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রাফা আক্রমণ করা হলে তিনি আর্টিলারি শেলসহ আরও অস্ত্র আটকে রাখবেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই নেতানিয়াহু প্রয়োজনে ‘একলা চলো’ নীতি অনুসরণের কথা জানালেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অস্ত্র বন্ধের হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে নেতানিয়াহু ১৯৪৮ সালের যুদ্ধের কথাও স্মরণ করেন। বলেন, ৭৬ বছর আগে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমরা অনেকের বিরুদ্ধে অল্প ছিলাম। আমাদের কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না। ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু আমাদের মধ্যে প্রবল চেতনা, বীরত্ব ও ঐক্যের জোর থাকায় আমরা বিজয়ী হয়েছিলাম।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাইডেন যদি অস্ত্রের চালান বন্ধ করে দেন, তবে ইসরায়েলের কাছে নখের চেয়েও অনেক বেশি কিছু আছে। এবং ওই চেতনার জোরে ঈশ্বরের সাহায্যে আমরা একসঙ্গে বিজয়ী হব।
নেতানিয়াহুর প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োআভ গ্যালান্ট এর আগেই বলেছেন, ইসরায়েলের শত্রুদের পাশাপাশি সেরা বন্ধুদেরও বোঝা উচিত যে আমাদের দেশকে বশ করা যাবে না। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে দাঁড়াব। আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করব।
জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো রাফার অনেক কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এ অবস্থায় প্রাণ বাঁচাতে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ রাফা ছেড়ে চলে গেছে। জাতিসংঘ আরও সতর্ক করেছে, শহরটিতে আশ্রয় নেওয়া মানুষের সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। কিন্তু তাদের খাদ্য ও জ্বালানি শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারণ এই শহরটি তার কাছাকাছি সংযোগস্থলগুলো থেকে কোনো সহায়তা পাচ্ছে না।
অভিযানের শুরুতে ইসরায়েলি সৈন্যরা মিশরের সঙ্গে সংযুক্ত রাফা ক্রসিং নিয়ন্ত্রণে নেয় ও বন্ধ করে দেয়। তখন জাতিসংঘ বলেছিল, এটি বন্ধ করার পর ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত ও ফের উন্মুক্ত করে দেওয়া কেরেম শালোম ক্রসিংয়ে পৌঁছানো তাদের জন্য বিপজ্জনক হবে।
ইসরায়েলি বাহিনী বলছে, তারা রাফা শহরে হামাসের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে অভিযান চালাচ্ছে। ইসরায়েলি সরকারও একে পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসন হিসেবে স্বীকার করছে না। সেখানে হামলা প্রত্যাখ্যানের সব ধরনের আহ্বানই তারা অস্বীকার করছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন সতর্ক করে বলেন, এ রকম হামলা হলে ইসরায়েলকে কোনো যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করবেন না তিনি। ফিলিস্তিনের বেসামরিকদের হত্যা করতে মার্কিন বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল জানিয়ে বাইডেন সিএনএনকে বলেন, তারা রাফা আক্রমণ করলে আমি তাদের অস্ত্র সরবরাহ করছি না, যা রাফা মোকাবিলায় ঐতিহাসিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, বাইডেন বিশ্বাস করেন না যে রাফা আক্রমণ করে ইসরায়েল তাদের হামাসকে পরাজিত করার লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে এগিয়ে যাবে। চিরকালের মতো হামাসকে পরাজিত করা ইসরায়েলের লক্ষ্য এবং আমরা সেই লক্ষ্যের সঙ্গে। আমরা যে কোনোভাবে ইসরায়েল থেকে দূরে সরে যাচ্ছি বা আমরা হামাসকে পরাজিত করতে তাদের সাহায্য করতে ইচ্ছুক নই, বিষয়গুলো মোটেও এমন নয়।
এদিকে ফিলিস্তিনি গণমাধ্যমগুলো বলছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে রাফার আল-জেনেহ পাড়ায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় দুজন নিহত হয়েছেন। এটি রাফার পূর্বাঞ্চলীয় এই এলাকায় সোমবার রাতে স্থল অভিযান শুরুর আগে যেখানকার বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
এ ছাড়া নিকটবর্তী ব্রাজিল এলাকায় বিমান হামলায় আরও তিনজন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও মিশরীয় সীমান্তবর্তী এই এলাকাটি কোনো ‘ইভ্যাকুয়েশন জোন’ নয়।
ইসরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশগুলো হামাস ও প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) সংগঠনকে ‘নিষিদ্ধ সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে। তাদের ভাষ্য, ওই দুই সংগঠন মর্টার বোমা ও অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পূর্ব উপকণ্ঠে ইসরায়েলি বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে।
হামাস বলেছে, তারা রাফার পূর্বাঞ্চলে তিনটি ইসরায়েলি সামরিক গাড়ির নিচে থাকা একটি টানেল উড়িয়ে দিয়েছে। আইডিএফ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের ফলে তাদের তিন সৈন্য আহত হয়েছে।
রাতারাতি শহরের পশ্চিম দিকের তাল আল-সুলতান পাড়ায় একটি পরিবারের বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নিহতদের মাঝে তিনটি শিশু রয়েছে। সেই শিশুদের মাঝে একজনের বয়স মাত্র ১ বছর।
শান্তি চুক্তির আশা ম্লান
গত সপ্তাহের শুরুতে গাজা-ইসরায়েলের মাঝে শান্তিচুক্তি হওয়া নিয়ে কিছু আশার আলো দেখা দিয়েছিল। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সেই আশার আলো ম্লান হতে শুরু করেছে। ওই শান্তিচুক্তিতে হামাস সম্মত হলেও ইসরায়েল অবশ্য সম্মতি দেয়নি। বৃহস্পতিবার কায়রোতে ইসরায়েল ও হামাসের উভয় প্রতিনিধিই পরোক্ষ আলোচনা বন্ধ করেছে।
গাজায় টানা সাত মাস যুদ্ধের পর ইসরায়েল সুনির্দিষ্টভাবে বলছে, রাফা শহর দখল করা এবং হামাসের অবশিষ্ট বাহিনীকে নির্মূল করা ছাড়া বিজয়লাভ অসম্ভব ব্যাপার।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণ অঞ্চলে হামলা চালায় হামাস। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের মতে, সেই হামলায় ১২০০ জন নিহত হয়েছিল এবং ২৫২ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। এরপর পালটা হামলার অংশ হিসেবে হামাসকে ধ্বংস করার জন্য গাজাজুড়ে সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
এদিকে গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গত বছরের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে ৩৪ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আর ইসরায়েল বলছে, যাদের জিম্মি করা হয়েছে তাদের ১২৮ জনের হিসাব নেই এবং জিম্মিদের মাঝে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সারাবাংলা/টিআর
ইসরায়েল গাজায় হামলা জো বাইডেন টপ নিউজ ফিলিস্তিন মার্কিন অস্ত্র সহায়তা হামাস