‘ঢোল-তবলা শিল্পকলার কাজ, এটি জাতীয় কারিকুলামে থাকতে পারে না’
১০ মে ২০২৪ ১৯:০৬
ঢাকা: ‘ঢোল-তবলা শিল্পকলার কাজ। এটি জাতীয় কারিকুলামে থাকতে পারে না’— এমনটিই মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম।
শুক্রবার (১০ মে) বিকেলে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।
‘নতুন পাঠ্যপুস্তকে বিজাতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এ গোল টেবিল বৈঠক আয়োজন করে জাতীয় শিক্ষক ফেরাম।
ফয়জুল করীম বলেন, ‘শিক্ষা আলো। শিক্ষা থেকে যদি বঞ্চিত রাখা যায়, তাহলে জাতিকে ধ্বংস করা সহজ হয়। মাদরাসার বইতে সালামের পরিবর্তে প্রণাম করার শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। মাদরাসার বইয়ে ছেলে-মেয়েদের অবাধ চলা-ফেরা দেখানো হয়েছে। দ্বীনি পরিবেশ থেকে দূরে রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তক থেকে কৃষি শিক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে, গার্হস্থ্য শিক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে। শিল্প-সংস্কৃতি অনুচ্ছেদে ঢোল-তবলা যুক্ত করা হয়েছে। এটি শিল্পকলার কাজ। জাতীয় কারিকুলামে এটি থাকতে পারে না। মুসলিম সন্তানদের একত্রে নাচতে, গাইতে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। ছেলে-মেয়েদের হাত ধরে চলতে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।’
ফয়জুল করীম বলেন, ‘কিছু আলেম শরিফ-শরিফার গল্পকে বৈধতা দিয়েছে। লোভের কারণে শরিফ-শরিফার গল্পের মধ্যে ঐ আলেমরা কোনো ত্রুটি দেখেন না। আমাদের দাবি ছিল প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার। সে দাবি কর্ণপাত না করে নাচ-গান শেখানোর জন্য ৫ হাজারের অধিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা ইসলামের কথা বললে সাম্প্রদায়িক হয়ে যাই।’
তিনি বলেন, ‘মুসলমানদের জন্য করা সলিমুল্লাহ’র ইউনিভার্সিটিতে নামাজ, ইফতার করতে আপত্তি থাকলেও মঙ্গলশোভা যাত্রা করতে আপত্তি নেই। দূরদর্শী প্ল্যান নিয়ে আগ্রাসনের কালো থাবা এগিয়ে আসছে। যারা শরিফ-শরিফার মধ্যে কোনো কিছু দেখে না তারা আবুল ফজল ফয়েজীর গোষ্ঠী। ওরা ইসলাম ও দেশের দুশমন। এই সরকার তাদেরকে অর্থ দিয়ে লালন-পালন করছে।’
জাতীয় শিক্ষক ফোরামের সভাপতি মো. নাছির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডক্টর আবদুল লতিফ মাসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আ খ ম ইউনুস, ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আরিফুল ইসলাম, প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ প্রমুখ।
গোলটেবিল আলোচনায় জাতীয় শিক্ষক ফোরামের পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত দাবি উপস্থাপন করা হয়- ০১) বিতর্কিত শিক্ষা কারিকুলাম-২০২১ বাতিল করা এবং যুগোপযোগী শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়নে অভিজ্ঞ, দেশপ্রেমিক এবং দ্বীনদার শিক্ষাবিদদের সম্পৃক্ত করা, ০২) পাঠ্যপুস্তকের সব বিষয় থেকে বিতর্কিত ও ইসলামী আক্বীদাবিরোধী প্রবন্ধসমূহ বাদ দেওয়া, স্কুল ও মাদরাসার সব পাঠ্যপুস্তকে বিজাতীয় সংস্কৃতি, অনৈসলামিক শব্দ এবং অশ্লীল চিত্রমুক্ত রাখা, ০৩) মাদরাসা শিক্ষার কারিকুলাম শিক্ষানীতিমালা-২০১০ অনুযায়ী মাদরাসা সংশ্লিষ্ট আলেম, দ্বীনদার, ইসলামিক স্কলার শিক্ষকদের দ্বারা পরিমার্জন করা ও আলিয়া মাদরাসার স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বতন্ত্র কারিকুলাম প্রণয়ন করা, ০৪) শিক্ষকদের স্বতন্ত্র উচ্চতর বেতন কাঠামো এবং শিক্ষক সুরক্ষা আইন প্রণয়নের মাধ্যমে মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করা, ০৫) প্রকৃতি বিরুদ্ধ ও দেশীয় সংস্কৃতি বিরোধী ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ পাঠ্যপুস্তক থেকে বাতিল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে ট্রান্সজেন্ডার কোটা বাতিল করা।
এছাড়া সমাজে অবহেলিত হিজড়া জনগোষ্ঠীর সুশিক্ষা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে সুস্পষ্ট নীতিমাল প্রণয়ন করা, ০৬) ধর্মীয় শিক্ষার ভিত্তি স্ব-স্ব ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী এবং পাঠা-পুস্তকের নামকরণ নিজ ধর্মের নাম অনুসারে করা, ০৭) নৈতিকতা সমৃদ্ধ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে সকল ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ নিজ ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা, ০৮ ) শিক্ষার সব ব্যয়ভার রাষ্ট্র কর্তৃক বহন করা এবং ইবতেদায়ী মাদরাসাসহ সব এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানজাতীয় করণ করা, ০৯) পুরুষ ও মহিলা উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যাপক বেকারত্ব ও খাদ্য ঘাটতির সমাধান এবং অর্থনীতিকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে ‘কৃষি শিক্ষা’ ও ‘গার্হস্থ্য বিজ্ঞান’ শিক্ষা সকল শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে বাধ্যতামূলক করা এবং ১০) শিক্ষা নিয়ে আপত্তি ও বিতর্কের ঝড় সমাধানের লক্ষ্যে নিরপেক্ষ দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ, গবেষক, বুদ্ধিজীবি ও দ্বীনদার ইসলামিক স্কলারদেরকে নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা করা।
সারাবাংলা/এজেড/একে
ইসলামী আন্দোলন পাঠ্যপুস্তক মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শিক্ষামূলক বই