স্বপ্ন জাতীয় দলে খেলার, চীন যাচ্ছেন ফুটবলার সামিয়া-সুমাইয়া
১১ মে ২০২৪ ০৮:৪৯
কক্সবাজার: ‘ছোটবেলা থেকেই ফুটবল পছন্দ করি। পাড়ায় ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলতাম। এই দেখে বাবার ইচ্ছায় ১০ বছর বয়সে কক্সবাজার স্টেডিয়ামে ফুটবল প্রশিক্ষণে ভর্তি করানো হয়। যদিও মা বরাবরই ফুটবল অপছন্দ করেন। বঙ্গমাতা ফুটবল প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় খেলার সুযোগ হয়েছে। আজ আমি দেশের বাইরে ফুটবল প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছি। এর জন্য ফুটবল কোচ থেকে শুরু করে সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আমার ইচ্ছে জাতীয় দলের হয়ে বিদেশের মাঠিতে বিজয়ের পতাকা উড়ানো।’
কথাগুলো বলছিলেন কক্সবাজারের নারী ফুটবলার নবম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার (১৬)। তিনি ‘চায়না ডালিয়ান ওয়ার্ল্ড কাপ-২০২৪’ এ অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে চীন যাচ্ছেন। সুমাইয়া আক্তার মহেশখালী কালারমার ছড়ার ছৈয়দ আলমের মেয়ে।
কক্সবাজারের আরেক নারী ফুটবলার সামিয়া আক্তারও (১৭) সুযোগ পেয়েছেন ‘চায়না ডালিয়ান ওয়ার্ল্ড কাপ-২০২৪’ এ। সদ্য এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া সামিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার বাবা নেই। মায়ের ইচ্ছায় ফুটবল খেলার সুযোগ পেয়েছি। শুরুর দিকে লোকমুখে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। আমাকে মা ছাড়া তেমন কেউ উৎসাহ দেয়নি। খেলার জন্য আজ আমি বিদেশ যাচ্ছি এই খবরে মা অনেক খুশি। জীবনে বড় স্বপ্ন হলো জাতীয় দলে খেলা। দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জন করা।’
‘আজ এই পর্যন্ত আসার পেছনে অবদান রয়েছে ফুটবল কোচ মোহাম্মদ খালেদ হোসেন স্যার এবং কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ সভাপতি অনুপ বড়ুয়া অপুসহ আরও অনেকের। এই প্রথম দেশের বাইরে খেলতে যাচ্ছি, এর চেয়ে বড় অনন্দ কি হতে পারে। ভয় আর চ্যালেঞ্জ দুইটাই একসঙ্গে কাজ করছে’, বলছিলেন ফুটবলার সামিয়া।
কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার দেওয়া তথ্যে জানা যায়, কক্সবাজারের সুমাইয়া আক্তার ও সামিয়া আক্তার সুযোগ পেয়েছে ‘চায়না ডালিয়ান ওয়ার্ল্ড কাপ-২০২৪’ এ। ইন্টারন্যাশনাল স্কুল স্পোর্টস ফেডারেশনের (আইএসএফ) উদ্যোগে বাংলাদেশ স্কুল স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে অনূর্ধ্ব ১৮’তে সারা দেশ থেকে ১৮ জন সুযোগ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে দু’জন হলেন সামিয়া-সুমাইয়া।
চীনে যেতে এখন ঢাকায় রয়েছেন সুমাইয়া-সামিয়া। তারা এখন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) অনুশীলন করছেন। আগামী ১৭ মে থেকে ২৭ মে’ পর্যন্ত ‘চায়না ডালিয়ান ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২৪’-এ অংশ নেবেন। সেখানে মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন টুনার্মেন্টে খেলবেন।
কক্সবাজার জেলার ফুটবল কোচ মোহাম্মদ খালেদ হোসেন জানান, সুমাইয়া-সামিয়া দুই জনই ভালো খেলে। অনেক প্রতিকূলতার মাঝেও তারা চর্চা চালিয়েছে। সারা দেশের ১৮ জনের মধ্যে কক্সবাজার থেকে এই ২ জন সুযোগ পেয়েছে। চীন যাওয়ার আগে তাদের বিকেএসপি’তে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। চীনে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন টুর্নামেন্টেও তারা খেলবে।
কক্সাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি অনুপ বড়ুয়া অপু জানান, সময়ের সাথে খেলাধুলার ক্ষেত্রে মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে। পুরুষদের পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গনে ভাল করছে নারীরা। একজন ভালো খেলোয়াড় তৈরির জন্য কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থা সবসময় সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
এসময় চীনে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ায় সুমাইয়া এবং সামিয়ার জন্য শুভকামনা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সবার প্রত্যাশা তারা যেন জাতীয় দলের খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জন করে।’
সারাবাংলা/এমও