সিপিবি কার্যালয়ে রনোর মরদেহ, শ্রদ্ধা শেষে নেওয়া হবে শহিদ মিনারে
১৩ মে ২০২৪ ১০:০৩
ঢাকা: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা হায়দার আকবর খান রনোর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পার্টি অফিসের সামনে নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অফিসের সামনে করা হয়েছে মঞ্চ। সোমবার (১৩ মে) সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে রনোর মরদেহ সিপিবি কার্যালয় নিয়ে আসা হয়েছে।
এই প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ গত শুক্রবার (১০ মে) রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সকাল সাতটা থেকে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি বন্ধুপ্রতীম সংগঠনগুলোর সভাপতি-সেক্রেটারিসহ পার্টির নেতাকর্মীরা পুরানা পল্টনের কমিউনিস্ট পার্টি অফিসে সামনে জড়ো হয়েছেন।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি সভাপতি মো. শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাবেক সভাপতি মোজাহিদুল ইসলাম সেলিমসহ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা ইতিমধ্যে উপস্থিত হয়েছেন।
কমিউনিস্ট পার্টি অফিসের সামনে শ্রদ্ধা নিবেদনের শুরুতে আন্তর্জাতিক সংগীত পরিবেশন ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নেতারা। এরপরে এখান থেকে কালো পতাকা ও লাল পতাকা নিয়ে একটি র্যালিসহকারে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে হায়দার আকবর খান রনোর মরদেহ নেওয়া হবে। সেখানে সর্বস্তরের জনগণ তাকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তার দাফন করা হবে।
হায়দার আকবর খান রনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র থাকাকালীন গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে জড়িত হন। ১৯৬২ সালের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তার সক্রিয় রাজনীতি শুরু। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৯৬৯ সালে তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনের শীর্ষস্থানীয় নেতা হিসেবে উঠে আসেন। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে তিনি ছিলেন অন্যতম সংগঠক। ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
১৯৭০ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের রণাঙ্গনের সৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও নেতা ছিলেন তিনি। হায়দার আকবর খান রনো ১৯৮২-১৯৯০ এর সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন ও ১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও নেতা ছিলেন। রাজনৈতিক কারণে তাকে চারবার কারারুদ্ধ হতে হয়েছিল এবং সাতবার আত্মগোপনে যেতে হয়েছিল।
তিনি দীর্ঘদিন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য ছিলেন। ২০১০ সালে মতভিন্নতার কারণে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ছেড়ে হায়দার আকবর খান সিপিবিতে যোগ দেন। ২০১২ সালে তাকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। এরপর তিনি সিপিবির উপদেষ্টা হন।
২০২২ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। তার ২৫টি বই প্রকাশ হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- ‘শতাব্দী পেরিয়ে’, ‘ফরাসী বিপ্লব থেকে অক্টোবর বিপ্লব’, ‘পুঁজিবাদের মৃত্যুঘণ্টা’, ‘সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের সত্তর বছর’, ‘মার্কসবাদের প্রথম পাঠ’, ‘মার্কসীয় অর্থনীতি’, ‘গ্রাম শহরের গরীব মানুষ জোট বাঁধো’, ‘মার্কসবাদ ও সশস্ত্র সংগ্রাম’, ‘কোয়ান্টাম জগৎ- কিছু বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক প্রশ্ন’, ‘রবীন্দ্রনাথ শ্রেণী দৃষ্টিকোণ থেকে’, ‘মানুষের কবি রবীন্দ্রনাথ’, ‘বাংলা সাহিত্যে প্রগতির ধারা’, ‘পলাশী থেকে মুক্তিযুদ্ধ’, ‘স্তালিন প্রসঙ্গে’, ‘অক্টোবর বিপ্লবের তাৎপর্য ও বর্তমান প্রেক্ষাপট’।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমও