Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্তের আগে আসামিকে কনডেম সেলে রাখা অবৈধ: হাইকোর্ট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৩ মে ২০২৪ ১৪:৫৯

ঢাকা: মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জেলকোডের ৯৮০ বিধিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছেন আদালত।

সোমবার (১৩ মে) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নাসিম ইসলাম রাজু।

২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজন কয়েদি। যাদের আপিল হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।

তারা হলেন- চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম।

ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জেল কোডের ৯৮০ বিধি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চান উচ্চ আদালত।

এরপর গত বছরের ১২ ডিসেম্বর এ রুলের ওপর শুনানি শেষ হয়। এরপর রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।

এই মামলার রুল শুনানিতে আদালত এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও এস এম শাহজাহান অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে মতামত নেন।

বিজ্ঞাপন

আজ রায়ের পর শিশির মনির বলেন, আজকের রায়ে আদালত বলেছেন- প্রথমত, কোনো ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার আগে তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি বলা যাবে না এবং তাকে মৃত্যু (কনডেম) সেলে রাখা যাবে না।

বিচারিক প্রক্রিয়া (ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও রিভিউ) ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া (রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন) শেষেই কেবল একজন আসামিকে মৃত্যু সেলে বন্দি রাখা যাবে।

দ্বিতীয়ত, কোনো ব্যক্তির অসুস্থতা বা বিশেষ কারণে আলাদা সেলে রাখার আগে তাকে নিয়ে শুনানি করতে হবে। এটি ব্যতিক্রম।

রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, নতুন জেলকোড তৈরি করা হচ্ছে। নতুন আইন হচ্ছে, প্রিজন অ্যাক্ট। হাইকোর্ট বলছেন, রায়ের পর্যবেক্ষণ যেন নুতন আইনে প্রতিফলিত হয়, তা বিবেচনা করতে।

মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দির বিষয়ে তথ্য চাইলে (সাংবাদিক, গবেষক) আইন অনুসারে তা দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রিকেও আইন অনুসারে তথ্য দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক রিপোর্টেও এ আসামিদের তথ্য সন্নিবেশিত করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি দুই বছরের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের ক্রমান্বয়ে কনডেম সেল থেকে সরিয়ে সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে রাখার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

শিশির মনির আরও বলেন, পর্যবেক্ষণে আদালত নির্দিষ্টভাবে সাগর-রুনির ঘটনা উল্লেখ করে বলেছেন, প্রায় ১২ বছর ধরে তদন্ত হচ্ছে, এখনও তদন্ত শেষ হচ্ছে না। বিচার তো আরও পরের স্টেজ (ধাপ)। আমাদের দেশে ট্রায়াল স্টেজ শেষ হতে ৫-১০ বছর সময় লেগে যায়। এ ধরনের বিলম্ব যেখানে হয়, সেখানে মৃত্যুদণ্ডের আসামিকে নির্জন সেলে ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত যদি বন্দি রাখা হয়, তাহলে এটি ডাবল (দ্বিগুণ) শাস্তি। নির্জন কক্ষে বসবাস তার সাজা নয়, সাজা মৃত্যুদণ্ড। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টও এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ভারতের ওই রায় আমাদের রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক ভূমিকা পালন করেছে।

বিজ্ঞাপন

রিটের পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেছিলেন, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করার আইনগত কোনো বিধান নেই। মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে কয়েকটি আবশ্যকীয় আইনগত ধাপ অতিক্রম করতে হয়।

প্রথমত, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। একইসঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়েরের বিধান রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সাংবিধানিক অধিকারবলে আপিল বিভাগে সরাসরি আপিল করতে পারেন।

তৃতীয়ত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৫ অনুযায়ী আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের আইনি সুযোগ রয়েছে। সর্বোপরি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯ এর অধীনে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতি এ ক্ষমার আবেদন না মঞ্জুর করলে তখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিষয়টি আইনগত বৈধতা লাভ করে।

কিন্তু বাংলাদেশে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্জন কনডেম সেলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে বন্দি রাখা হয়।

সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ

কনডেম সেল হাইকোর্ট

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর