চট্টগ্রাম ব্যুরো: ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার ঠিক একমাস পর দেশে পৌঁছল আলোচিত জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। ৫৬ হাজার ৩৯১ মেট্রিকটন চুনাপাথর নিয়ে আসা জাহাজটি বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া উপকূলে নোঙ্গর ফেলেছে।
সেই জাহাজের ২৩ নাবিক, যারা জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ছিলেন, তারা মঙ্গলবার বিকেল নাগাদ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছবেন বলে জাহাজটির মালিকপক্ষ কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম জানিয়েছেন।
সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে একমাস জিম্মি থাকার পর মুক্ত করা হয়েছিল এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ ও এর ২৩ নাবিককে। মুক্তির একমাস পর সোমবার (১৩ মে) দুপুরে দুপুরে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় কক্সবাজারে পৌঁছে জাহাজটি। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ সেটি কুতুবদিয়ায় পৌঁছে নোঙ্গর ফেলে।
মালিকপক্ষের কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় জাহাজের নাবিক ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ রহমতে আজ ১৩ মে সন্ধ্যা ৬টায় কুতুবদিয়া উপকূলে আমরা নোঙ্গর করেছি। জাহাজের সকল অফিসার-ক্রু সুস্থ আছেন, ভালো আছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে কার্গো নামানো শুরু হবে। কার্গো বার্জগুলো অন দ্যা ওয়ে আছে। আমি আমার সকল অফিসার ও ক্রুদের পক্ষ থেকে সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, আমাদের জন্য দোয়া করার জন্য।
জানা গেছে, উন্মুক্ত জলসীমায় সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় সাড়ে ১১ নটিক্যাল মাইল বেগে চালিয়ে জাহাজটি কুতুবদিয়ায় পৌঁছে। জাহাজে থাকা ৫৬ হাজার ৩৯১ মেট্রিকটন চুনাপাথরের মধ্যে কিছু সেখানেই আরেকটি জাহাজে খালাস করা হবে। এরপর জাহাজটিকে পতেঙ্গায় বন্দরের বহির্নোঙ্গরে নিয়ে আসা হবে। সেখানে বাকি চুনাপাথর খালাস হবে।
কেএসআরএম গ্রুপের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘কুতুবদিয়ায় নোঙ্গর করা জাহাজের দায়িত্ব নেয়ার জন্য নতুন ২৩ নাবিকের একটি দল ইতোমধ্যে রওনা দিয়েছে। তারা রাতের মধ্যে সেখানে পৌঁছাবে। যে ২৩ জন নাবিক জাহাজটিতে এসেছেন, অর্থাৎ যারা জিম্মি ছিলেন, উনাদের একটি লাইটারেজ জাহাজে করে নিয়ে আসা হবে। কাল (মঙ্গলবার) সকালে উনারা রওনা দেবেন। বিকেল ৪টার মধ্যে ২৩ নাবিক চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) এক নম্বর জেটিতে পৌঁছবেন। সেখানে উনাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেয়া হবে।’
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি গত ১২ মার্চ বেলা ১২টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ওই জাহাজের ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়। জাহাজটি কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল।
নাবিকেরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুরুদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।
মুক্তিপণ পরিশোধের পর গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা ৮ মিনিটে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ থেকে নেমে যায় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জলদস্যুরা নেমে যাবার পরই জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রিত উপকূল থেকে সোমালিয়ার সীমানা পার করে দেয়।
জাহাজটি ২১ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে চারটায় আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছে। পরদিন সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় নোঙ্গর করে জেটিতে। সেখানে ৫৫ হাজার মেট্রিকটন কয়লা খালাসের পর ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় সেটি চুনাপাথর বোঝাই করার জন্য মিনা সাকার বন্দরে যায়। চুনাপাথর বোঝাই করে আরব আমিরাতের ফুজাইরা বন্দর থেকে জ্বালানি নিয়ে ৩০ এপ্রিল জাহাজটি দেশের উদ্দেশে রওনা দেয়।
এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরবসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল কেএসআরএম গ্রুপের এস আর শিপিং লিমিটেডের আরেকটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।