বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলবে সিপিবি, জেলায় জেলায় কর্মসূচি
১৪ মে ২০২৪ ১০:১৯
ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দেশ পরিচালনার ধরনকে গণবিরোধী হিসেবে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতারা। তারা বলছেন, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও জনজীবনের সংকট দূর করতে রাজনৈতিক ব্যবস্থঅ বদলের সংগ্রাম গড়ে তুলবে সিপিবি। এ ক্ষেত্রে নীতিনিষ্ঠ বাম গণতান্ত্রিক দলগুলোকে নিয়ে বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলার জন্য বাম জোটের পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন তারা। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে পার্টির জাতীয় পরিষদের বৈঠক থেকে, যা শিগগিরই আয়োজন করা হবে।
সম্প্রতি সিপিবির প্রেসিডিয়াম সভায় এ আলোচনা হয়েছে। ওই সভায় সিপিবির অভ্যন্তরীণ কোন্দলও গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সে সব কোন্দল ও বিশৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হবে। জাতীয় পরিষদের বৈঠকে এসব সমস্যাও নিরসন করা হবে।
সিপিবির বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে গেছে। এসব দলগুলো একে অন্যের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধে লিপ্ত। পার্টির কেন্দ্র কোনো কর্মসূচির ঘোষণা দিলে সেখানেও সবার উপস্থিতি পাওয়া যায় না। কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকের মধ্যেই নেই স্বাভাবিক সম্পর্ক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পার্টির দুই দিনব্যাপী প্রেসিডিয়াম বৈঠকে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন প্রেসিডিয়াম সদস্যরা। এসব দ্বন্দ্বের সুরাহা করতে শিগগিরই দলটির জাতীয় পরিষদের বৈঠক আহ্বান করা হবে।
সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে প্রেসিডিয়াম সভায় উপস্থিত ছিলেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান, অধ্যাপক এ এন রাশেদা, লক্ষী চক্রবর্তী, মোতালেব মোল্লা ও পরেশ কর।
পার্টির একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, প্রেসিডিয়াম সভায় বলা হয়েছে, দেশের সাধারণ মানুষের আয় না বাড়লেও মূল্যবৃদ্ধির কষাঘাতে জনজীবন অতিষ্ঠ। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও দুঃসহ করে তুলছে। বিদেশে পাচার করা টাকা ও খেলাপি ঋণ আদায় এবং এগুলোর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত না করে বরং দায়মুক্তি দিতে ব্যাংক একত্রীকরণ, বন্ড বিক্রিসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আইএমএফের শর্ত মেনে বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ বিভিন্ন সেবা খাতের ভর্তুকি প্রত্যাহার করছে সরকার। ব্যাংকের সুদের হার ব্যাংকের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। ডলারের দাম এক লাফে সাত টাকা বাড়ানো হয়েছে। সরকারের এসব ‘গণবিরোধী’ উদ্যোগ অর্থনীতিকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এসব উদ্যোগ দেশের সামগ্রিক উৎপাদনশীল খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। দেশবাসীকে আরও ঋণের জ্বালে আবদ্ধ করে ফেলবে।
বৈঠক থেকে সিপিবি নেতারা সরকারের এই গণবিরোধীর বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য পার্টিকে মাঠে নামার পক্ষে অভিমত দেন। এসব ইস্যু মাথায় রেখেই আগামী ১৯ মে থেকে ২৪ মে পর্যন্ত জেলায় জেলায় সফর করবেন সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতারা। আসন্ন বাজেটের ওপর বাম জোটের ব্যনারে গোলটেবিল বৈঠক, ফিলিস্তিনের পক্ষে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ঘেরাও কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
সিপিবির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, দেশের কৃষক, ক্ষেতমজুর ও শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে না। বিদেশে অবস্থানরত শ্রমজীবী মানুষ যথাযথ মর্যাদা না পেলেও দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। সরকার নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করতে না পারলেও সাধারণ মানুষ নানা ধরনের কর্মসংস্থান তৈরি করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। এসব ক্ষেত্রে সরকারের আচরণ বৈরী।
ধানসহ উৎপাদিত ফসলের লাভজনক দাম নিশ্চিত করে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কেনার পক্ষে সরকারকে চাপ দেওয়ার কথা বলেছেন সিপিবির নেতারা। তারা সব জায়গায় ‘উৎপাদক সমবায় ও ক্রেতা সমবায়’ গড়ে তোলার কথা বলেছেন। শ্রমিকদের জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা, বাস্তবায়ন এবং বিকল্প কর্মসংস্থান ছাড়া হকার, রিকশা উচ্ছেদ বন্ধের বিষয়গুলোও গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়।
দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সমালোচনা করে সিপিবি নেতারা বলেছেন, সরকার ‘আমি ও ডামি’র জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করেছে। এ ধরনের আরেকটি উপজেলা নির্বাচন এখন চলমান। এই উপজেলা নির্বাচনেও মানুষ প্রমাণ করেছে, সরকারের এই একতরফা নির্বাচনে তাদের আগ্রহ নেই। মানুষ ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। এই প্রবণতা সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক, কর্তৃত্ববাদী প্রবণতাও বাড়িয়ে দেবে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে সাম্প্রদায়িক ও অগণতান্ত্রিক অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। সারাদেশে পরিবারতন্ত্র, গোষ্ঠীতন্ত্র লুটপাটের ধারাকেই স্থায়ী করার পথ প্রশস্ত করবে।
এ অবস্থা থেকে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও জনজীবনের সংকট দূর করতে চলমান দুঃশাসনের অবসান ও ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম এবং নীতিনীষ্ঠ বাম গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিয়ে বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন সিপিবি নেতারা। সভায় জাতীয় সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার এবং স্থানীয় সরকারকে দক্ষ ও শক্তিশালী করার দাবি নিয়ে জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখার তাগিদ দেন তারা। বলেন, গণসংগ্রাম গড়ে তুলতে সিপিবি নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাম ধারার রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলবে।
জানতে চাইলে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ঈদুল আজহার পর সিপিবির জাতীয় পরিষদের বৈঠক আহ্বান করা হবে। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও জনজীবনের সংকট দূর করতে চলমান দুঃশাসনের অবসান ও ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম এবং নীতিনীষ্ঠ বাম গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিয়ে বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলার আন্দোলন অব্যহত থাকবে।
সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম সারাবাংলাকে বলেন, সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সিপিবির আন্দোলন অব্যহত রয়েছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে সব শ্রেণির জনগণকে সঙ্গে নিয়ে স্বৈরাচারী কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর