Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৫০ শয্যার জনবলে চলছে ১০০ শয্যার হাসপাতাল, ব্যাহত স্বাস্থ্যসেবা

রিফাত রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৫ মে ২০২৪ ০৮:৪৭

চুয়াডাঙ্গা: ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে ১০০ শয্যার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল। জনবল সংকটে স্বাস্থ্য সেবা ব্যাহত হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে প্রেষণে আসা চিকিৎসকসহ অন্যান্যরা হাসপাতালের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন না। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। যার ফলে প্রেষণে থাকা জনবল কোনো কাজে আসছে না।

চুয়াডাঙ্গায় প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে গরম আবহাওয়ায় ডায়রিয়া, পেটের পীড়া, ঠান্ডা, জ্বর-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, পানিশূন্যতাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন রোগীরা। ৫০ শয্যার জনবল নিয়ে চলছে ১০০ শয্যার এ হাসপাতাল। চিকিৎসা নিতে ভর্তি হচ্ছেন তিন থেকে চার গুণ রোগী। জনবল সংকটের কারণে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। বরাদ্দ না থাকায় রোগীদের তিন বেলা খাবার ভাগ করে দিতে হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের দাফতরিক সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রথম শ্রেণির জন্য মঞ্জুর করা পদের সংখ্যা ২২টি। এর মধ্যে ৯টি পদে জনবল রয়েছে, ছয়টি পদে মঞ্জুরি করা জনবল এবং বাকি সাতটি পদ শূন্য রয়েছে।

প্রথম শ্রেণির এই ২২টি পদের মধ্যে সিনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিয়া), আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও পাঁচটি মেডিকেল অফিসার পদের একটিতে জনবল রয়েছে। পূরণ করা হয়েছে সিনিয়র কনসালট্যান্ট (অর্থোপেডিক ও সার্জারি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অর্থোপেডিক ও সার্জারি) এবং মেডিকেল অফিসারের তিনটি পদ, ডেন্টাল সার্জন, এমও হোমিও ও আয়ুর্বেদিক পদ।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (চক্ষু), সিনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিয়া), সিনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু), সিনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (ইএনটি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (রেডিওলজি) ও মেডিকেল অফিসারের একটি পদ শূন্য রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার জন্য মূল কর্মস্থল ঢাকা মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদফতরের (বর্তমানে পদায়নকৃত কর্মস্থল) কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক (সার্জারি) সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন ২০১৬ সাল থেকে এ হাসপাতালে সংযুক্ত রয়েছেন। দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ২০১৪ সাল থেকে সংযুক্ত রয়েছেন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি) ডা. মো. আবুল হোসেন ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) ডা. হোসনে জারি তহমিনা, আলমডাঙ্গা হারদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সংযুক্ত রয়েছেন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) ডা. মো. মাহবুবুর রহমান মিলন ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি) নুরে আলম আশরাফী এবং চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কপপ্লেক্স থেকে সংযুক্ত আছেন ডা. মো. আসাদুর রহমান মালিক। এ ছাড়া আলমডাঙ্গা উপজেলা ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ২০১৯ সাল থেকে তিনজন মেডিকেল অফিসার সদর হাসপাতালে সংযুক্ত রয়েছেন।

দ্বিতীয় শ্রেণির ৬৭টি মঞ্জুরি করা পদের মধ্যে নার্সিং সুপারভাইজারের দুটি পদই শূন্য, সিনিয়র স্টাফ নার্স ৫৪টি পদের অনুকূলে মঞ্জুরি করা পদে রয়েছেন ৫১ জন। স্টাফ নার্সের ১১টি মঞ্জুরি করা পদের সবকটিই অবশ্য পূর্ণ।

তৃতীয় শ্রেণির ৩৫টি মঞ্জুরি করা পদের মধ্যে ২৭টি পদ পূরণ করা হয়েছে। তিনটি পদে জনবল রয়েছে। এরা হলেন— একজন অফিস সহকারী, একজন হেলথ এডুকেটর ও একজন মেডিসিন টেকনিশিয়ান (ইকো)।

অন্য স্থান থেকে সংযুক্ত করা হয়েছে একজন প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, তিনজন ফার্মাসিস্ট, চারজন এমটি (ল্যাব), দুচন রেডিওগ্রাফি, একজন এমটি (ডেন্টাল), একজন এমটি (ইপিআই), একজন স্টোর কিপার, তিনজন মেডিকেল টেকনিশিয়ান (অ্যানেসথেসিয়া), তিনজন মেডিকেল টেকনিশিয়ান (ডায়ালাইসিস), একজন মেডিকেল টেকনিশিয়ান (ইকো), দুজন মেডিকেল টেকনিশিয়ান (ইসিজি), একজন সহকারী নার্স, দুজন ড্রাইভার এবং একজন করে হোমিও কম্পাউন্ডার ও হোমিও গার্ডেনার। হেলথ এডুকেটরের একটি ও সহকারী নার্সের চারটি পদ শূন্য রয়েছে।

এদিকে চতুর্থ শ্রেণির ১৪৮টি মঞ্জুরি করা পদের মধ্যে রয়েছেন চারজন— দুজন এমএলএসএস ও দুজন সুইপার। অন্য স্থান থেকে পূরণ করা হয়েছে এমএলএসএসের সাতটি, সুইপারের একটি ও ডোমের একটি পদ। কুক/মশালচীর তিনটি, এমএলএসএসের চারটি ও সুইপারের চারটি পদ শূন্য রয়েছে।

জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. উম্মে ফারহানা বলেন, ১০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে এ হাসপাতাল। এখানে শয্যার বিপরীতে তিন থেকে চার গুণ বেশি রোগী সবসময় চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, তাপপ্রবাহে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও পর্যাপ্ত মজুত থাকায় রোগীদেরকে হাসপাতাল থেকেই ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে ১০০ শয্যার হাসপাতাল হওয়ায় এর বেশি ভর্তি রোগীদের খাদ্য চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। ১০০ শয্যার জন্য তৈরি করা খাবার ওয়ার্ডের রোগীদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া অতিরিক্ত গরমের কারণে কয়েক দিনের ব্যবধানে রোগী বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্যালাইন ও ওষুধ আছে। রোগীদের সেগুলো সরবরাহ করা হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এ অবস্থায় জনবল বাড়ানো হলে রোগীদের সেবা দিতে সুবিধা হতো।

সারাবাংলা/এনইউ

১০০ শয্যা চুয়াডাঙ্গা জনবল সঙ্কট সদর স্বাস্থ্যসেবা হাসপাতাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর