দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন
১৬ মে ২০২৪ ১৪:৪৯
ঢাকা: এক হাজার ৩২১টি প্রকল্প নিয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে এনইসি (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ)। এডিপির মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে এক লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুস সালাম এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার।
এসময় পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার, কৃষি পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) আব্দুল বাকী, জিইডির সদস্য ড.মো. কাউছার আহমেদসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ মোট প্রকল্প থাকছে এক হাজার ৩২১টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প এক হাজার ১৩৩টি, কারিগরি সহায়তার ৮৭টি এবং সমীক্ষা প্রকল্প রয়েছে ২১টি। মোট প্রকল্পের মধ্যে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি থেকে স্থানান্তর হবে এক হাজার ২৭৭টি প্রকল্প। বাকিগুলোর মধ্যে নতুন অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ৬০টি। এছাড়া আগামী অর্থবছরের এডিপিতে নতুন কিন্তু অনুমোদনহীন প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে ১ হাজার ৮৯৪টি, বৈদেশিক অর্থায়নের সুবিধা অনুমোদনহীন নতুন ২৫৭টি প্রকল্প এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) প্রকল্প থাকবে ৮০টি।
ব্রিফিং এ পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, জেলাভিত্তিক মাস্টার প্ল্যান করতে হবে। এজন্য অনুমোদন দিয়েছে এনইসি। আগামীতে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। আগামীতে পশ্চাদপদ বলতে কোনো কথা থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালে দারিদ্র ছিল ৭০ শতাংশ। এখন সেটা কমে হয়েছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। অতিদারিদ্র ছিল ৫০ শতাংশ। এখন সেটি কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। গ্রামীণ উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে দারিদ্র আরও কমে আসবে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রকল্প বাছাইয়ে যথাযথ মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সবোর্চ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার বলেন, এবার উচ্চাভিলাষী এডিপি তৈরি করা হয়নি। গত বছরের তুলনায় এবার দুই হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। আমরা রাজস্ব ও মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয় করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়াতে সবোর্চ্চ গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ব্রিফিং এ জানানো হয়, নতুন এডিপির আকার চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় দুই হাজার কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। এছাড়া সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) তুলনায় ২০ হাজার কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি। অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তবে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাবে স্থানীয় সরকার বিভাগ ৩৮ হাজার ৮০৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এদিকে সবচেয়ে কম বরাদ্দপ্রাপ্ত খাত হলো প্রতিরক্ষা। এখানে ধরা হয়েছে ৭১০ কোটি টাকা। প্রকল্প থাকছে এক হাজার ৭৩৭টি।
ব্রিফিং এ জানানো হয়, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তা মিলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরেও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন আছে ১৩ হাজার ২৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ধরলে নতুন এডিপির আকার দাঁড়াবে দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
এডিপির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ৪০ হাজার ৭৫১ কোটি ৮৬ লাখ এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে শিক্ষা খাত ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অন্যান্য খাতের বরাদ্দ হচ্ছে-গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি ২৪ হাজার ৮৬৮ কোটি ৩ লাখ, স্বাস্থ্যে ২০ হাজার ৬৮২ কোটি ৮৮ লাখ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৭ হাজার ৯৮৬ কোটি ২১ লাখ এবং কৃষি খাতে ১৩ হাজার ২১৯ কোটি টাকা। আরও আছে শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ছয় হাজার ৪৯২ কোটি ১৮ লাখ, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে চার হাজার ৭৮৬ কোটি ৯২ লাখ, ধর্ম-সংস্কৃতি ও বিনোদনে তিন হাজার ৪৯২ কোটি, সামাজিক সুরক্ষায় তিন হাজার ৩০৪ কোটি, জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষায় তিন হাজার ৩০৮ কোটি এবং সাধারণ সরকারি সেবা খাতে দেওয়া হচ্ছে দুই হাজার ১৩৩ কোটি টাকা।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ: আগামী অর্থবছরের এডিপিতে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয় হয়েছে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগকে ৩২ হাজার ৪২ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ বিভাগ ২৯ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৬ হাজার ১৩৫ কোটি, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ১৩ হাজার ৭৪১ কোটি, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১৩ হাজার ৭২৫ কোটি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। আরও আছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ১১ হাজার ৩৮৭ কোটি, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ১০ হাজার ৩৭৩ কোটি এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় আট হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫১ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি প্রকল্প, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। এছাড়া ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল লাইন-১, পাওয়ার গ্রিডের নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ, বিমানবন্দর থার্ড টার্মিনাল এবং পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প।
সারাবাংলা/জেজে/আইই