Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফারাক্কা বাধ ভারতেরও ক্ষতি ডেকে এনেছে: গোলাম মোস্তফা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৭ মে ২০২৪ ০৮:৩৩

ভিসিসি আয়োজিত ‘ফারাক্কা সমস্যা ও বাংলাদেশ-ভারত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন গোলাম মোস্তফা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ভয়েস অব কনশাস সিটিজেনের (ভিসিসি) চেয়ারপারসন এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেছেন, বাংলাদেশের জন্য ফারাক্কা বাধ অভিশাপ, এটা বহু পুরোনো খবর। ফারাক্কা বাধের কারণে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। এখন ভারতও সেই ফারাক্কা ব্যারেজের ‘কুয়া’য় পড়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবসের ৪৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে ভয়েস অব কনশাস সিটিজেন (ভিসিসি), রংপুর আয়োজিত ‘ফারাক্কা সমস্যা ও বাংলাদেশ-ভারত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ঢাকা থেকে টেলিকনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, বাংলাদেশের পানির অধিকার নিয়ে গত পাঁচ দশকে ফারাক্কা নিয়ে ভারতের অনড় অবস্থানে বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। তবে ফারাক্কার কারণে বাংলাদেশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হচ্ছে, ভারতও এখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে ভারতেও ফারাক্কার বিরুদ্ধে জনমত জোরালো হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘কলকাতা বন্দরের নাব্য ঠিক রাখা এবং ভাগীরথী ও গঙ্গা নদীর পানির প্রবাহ যেন জাহাজ চলাচলে বাধা তৈরি করতে না পারে, সে লক্ষ্যে ১৯৬১ সালে ফারাক্কা ব্যারেজ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় ভারত সরকার। ব্যারেজ চালুর পর থেকে মালদহ ও মুর্শিদাবাদে নদীভাঙনের মাত্রা জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে। আশির দশকের ছোটখাটো ভাঙন নব্বইয়ের দশকে এসে মারাত্মক রূপ নিতে থাকে। ১৯৯০-০১ সালের মাঝামাঝি সময়ে বেশ কিছু ইউনিয়ন নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।’

গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘বহুদিন ধরেই মালদহ-মুর্শিদাবাদ জেলার গঙ্গা তীরবর্তী দুর্ভোগ ও বিপর্যয়কবলিত মানুষ ফারাক্কা ব্যারেজের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের জন্যও ফারাক্কা ব্যারেজ বড় ধরনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী বিহারও ফারাক্কার কারণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিহার রাজ্য সরকারের দাবি, ফারাক্কার কারণেই এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং প্রায় প্রতিবছরই রাজ্য বন্যা ও নদীভাঙনের শিকার হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ২০১৬ সালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তো ফারাক্কা ব্যারেজ ভেঙে ফেলার প্রস্তাব দিয়েছেন। মেধা পাটকরের মতো অ্যাক্টিভিস্টসহ বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, ভারতেও ফারাক্কা এখন সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি ঘটাচ্ছে-কাজেই এটি অবিলম্বে ‘ডি-কমিশন’ করা দরকার। বিহারের প্রতি বছরের ভয়াবহ বন্যার জন্য ফারাক্কাকেই দায়ী করা হয়। যে কলকাতা বন্দরের নাব্য ঠিক রাখতে এই ফারাক্কা নির্মাণ, সেটাও আজ ভয়াবহ হুমকির মুখে। তাই ভারতীয় বিশেজ্ঞরা মনে করছেন, ফারাক্কা বাধের প্রভাব খুবই ধ্বংসাত্মক। ফলে এই বাধ ভেঙে ফেলা উচিত।

গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, ‘ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবের এই বিষয়টি মওলানা ভাসানী তখনই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। আর এই কারণেই তিনি জাতীয় স্বার্থে ৪৮ বৎসর আগেই ফারাক্কার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। মওলানা ভাসানীর আগে কোনো রাজনৈতিক নেতা বা কোনো পরিবেশ বিজ্ঞানী আমাদের জাতীয় জীবনে ফারাক্কা বাধের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগ সম্পর্কে আলোকপাত করেননি। মজলুম জননেতার ফারাক্কা লংমার্চের ৪৮ বছর পরও আমাদের শাসকগোষ্ঠী ফারাক্কা সমস্যা সমাধান ও পানির অধিকার আদায় করতে পারেনি। জাতীয় জীবনে এমন একটা সংকট, এত বড় অন্যায় আমাদের রাজনৈতিক নেতা–শাসকগোষ্ঠী চোখ বুঝে সহ্য করে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারগুলো সবসময়ই পানি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে উদাসীন। ভারত বাংলাদেশকে কখনো পানির ন্যায্য হিস্যা দেবে না— এ কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশকে তার পানি ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করতে হবে। এ বিষয়ে উদাসীন থাকলে দেশ বিপদের সম্মুখীন হবে। মনে রাখতে হবে আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়েই অধিকার আদায় করতে হয়, সে পথ আমাদের দেখিয়ে গেছেন চিরপ্রতিবাদী মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী।’

ভিসিসি রংপুর চ্যাপ্টারের কো-অর্ডিনেটর আবদুস সালাম তালুকদের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ ন্যাপ রংপুর রিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রেজাউল করিম রীবন, সাবেক কাউন্সিলর আমিনুর রহমান, একরামুল হক, খোরশেদ আলম, হায়দার চৌধুরী, শেখ ইমতিয়াজ সিদ্দিকী, মো. নুর আলম, মো. আব্দুর রউফসহ অন্যরা।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

গোলাম মোস্তফা ফারাক্কা বাঁধ ফারাক্কা ব্যারেজ ভয়েস অব কনশাস সিটিজেন ভিসিসি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর