স্ত্রী দিলেন তালাক, প্রতিশোধ নিতে শ্বশুরের দোকানে আগুন
১৭ মে ২০২৪ ১০:৫৯
চুয়াডাঙ্গা: মধ্যরাতে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা শহরের বাস স্ট্যান্ডসংলগ্ন কাঠপট্টিতে আগুনে পুড়েছিল ছয়টি দোকান। শেষ পর্যন্ত জানা গেল, সে আগুন নিছক দুর্ঘটনা ছিল না, ছিল নাশকতা। স্ত্রী তালাক দিলে সেটি মেনে না নিতে পেরে স্বামী আগুন দিয়েছিলেন শ্বশুরের দোকানে। সে আগুনেই পুড়ে ছাই হয়েছে ওই বাজারের আসবাবপত্রের ছয়টি দোকান।
কাঠপট্টিতে অগ্নিসংযোগের ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি সোনা মিয়াকে সহযোগীসহ আটক করেছে পুলিশ। বুধবার (১৫ মে) দিবাগত রাতে ওই অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সোনা মিয়ার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও পুলিশ জব্দ করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে একই উপজেলার শিয়ালমারী পশুহাট থেকে আটক করা হয় সোনা মিয়া ও তার সহযোগীকে। পরে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানান।
আটক দুজন হলেন— জীববনগর উপজেলার একতারপুর গ্রামের রমজান আলীর ছেলে সোনা মিয়া (২৫) ও একই উপজেলা বসতীপাড়ার খেজমত আলীর ছেলে শামীম হোসেন (২৯)।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জীবননগর উপজেলা শহরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পাড়ায় ফার্নিচার ব্যবসায়ী খোরশেদ আলমের মেয়ে খুশি খাতুনের সঙ্গে উপজেলার উথলী ইউনিয়নের একতাপুর গ্রামের রমজান আলীর ছেলে সোনা মিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। চার বছর আগে তারা বিয়ে করেন। খুশি খাতুন পেশায় মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট। অন্যদিকে সোনা মিয়া বেকার। এ নিয়ে বিয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলছিল। ৯ মাস আগে খুশি খাতুন তার বাবার বাড়ি চলে যান।
পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার চার দিন আগে সোনা মিয়াকে তালাক দেন খুশি খাতুন। কিন্তু সোনা মিয়া তালাক মেনে নিতে পারছিলেন না। তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে জীবননগর উপজেলা শহরের বাস স্ট্যান্ডে অবস্থিত কাঠপট্টিতে মোটরসাইকেলে করে যান। সেখানে নিজের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল থেকে পেট্রোল বের করে সেখানে থাকা কাপড়ে লাগিয়ে শ্বশুর খোরশেদ আলমের কাঠের ফার্নিচারের দোকানে আগুন লাগিয়ে দেন।
আগুন লাগার খবর পেয়ে জীবননগর, দর্শনা ও পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিন ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এর আগেই আগুনে ছয়টি ছোট-বড় কাঠের ফার্নিচারের দোকান পুড়ে যায়। আগুনে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় কোটি টাকা।
পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় জীবননগর উপজেলার আঁশতলাপাড়ার মরহুম ওসমান গনির ছেলে শহিদ (৪০) জীবননগর থানায় মামলা করেন। পরে জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান, ওসি (তদন্ত) একরামুল হোসাইন ও এসআই দিপু মন্ডলসহ জীবননগর থানার পুলিশ টিম ঘটনার পরপরই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। সেগুলো পর্যালোচনা করে আগুন দেওয়ায় জড়িতদের গ্রেফতারে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। শেষ পর্যন্ত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শিয়ালমারী পশুহাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান বলেন, আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আগুন দেওয়ায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এর আগে তিনি তার শ্বশুর খোরশেদ আলমের বাড়ির রান্নাঘরেও আগুন দিয়েছিলেন।
সারাবাংলা/টিআর
অগ্নিনাশকতা চুয়াডাঙ্গা তালাকের প্রতিশোধ শ্বশুরের দোকানে আগুন