নির্বাচন ঘিরে পালটাপালটিতে ‘সরগরম’ চট্টগ্রাম শিল্পকলা
১৯ মে ২০২৪ ০৯:২৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: শিল্পকলা একাডেমির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পালটাপালটি অভিযোগে সরগরম হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের সংস্কৃতি অঙ্গন। গত নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে অংশ নিয়ে পরাজিত হওয়া আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান বার্ষিক সাধারণ সভা না করা, সদস্যপদ নবায়নের পর্যাপ্ত সময় না দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে নির্বাচন আয়োজনের বিরোধিতা করছেন। অন্যদিকে একই নির্বাচনে বিজয়ী সাধারণ সম্পাদক নাট্যজন সাইফুল আলম বাবু ও তার পক্ষের সংস্কৃতিকর্মীরা একে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা বলে উল্লেখ করছেন।
জ্যেষ্ঠ সংস্কৃতিকর্মীরা পালটাপালটি অবস্থানের বিরোধিতা করে বলছেন, এ বিরোধ চট্টগ্রামের সংস্কৃতি অঙ্গনের জন্য শুভ ফল বয়ে আনবে না। নির্বাচন ঝুলে যাবে, এমন কোনো পদক্ষেপ কাম্য নয় বলছেন তারা। সাধারণ সদস্যদের অনেকেও বিরোধ-বিভক্তির ঊর্ধ্বে উঠে একটি সুন্দর নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন হয়েছিল ২০১৮ সালে। তিন বছর মেয়াদের ওই কমিটি ছয় বছর পার করার পর সেটি বিলুপ্ত করে সম্প্রতি এডহক কমিটি গঠন করা হয়, যার মেয়াদ শেষ হচ্ছে জুনে। এ অবস্থায় গত ২ মে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. সাদি উর রহমান জাদিদ নির্বাচনী উপ-কমিটির রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। এতে ৮ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়।
নির্বাচন আয়োজনের তোড়জোড়ের মধ্যে আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান গত ১৪ মে জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি স্মারকলিপি দেন। জেলা প্রশাসক পদাধিকার বলে শিল্পকলা একাডেমির কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি। স্মারকলিপিতে তিনি বিভিন্ন অভিযোগ তুলে পুনঃতফসিল ঘোষণার দাবি জানান।
জানতে চাইলে রাশেদ হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্রে বার্ষিক সাধারণ সভার কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু গত ছয় বছরে সাধারণ সদস্যদের নিয়ে একটি সভাও করা হয়নি। নির্বাচনের পর সহ-সভাপতি রণজিৎ রক্ষিত মারা গেছেন। শূন্যপদ পূরণ করা হয়নি। গঠনতন্ত্রে বলা আছে, তিনবছর পর কমিটি অটো বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সেই কমিটি যে আরও তিন বছর তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করল, সেটা তো অবৈধ। ছয় বছরে সদস্যদের একবারও চাঁদা পরিশোধের জন্য বলা হয়নি। অথচ গঠনতন্ত্রে বলা আছে, দুইবছর চাঁদা পরিশোধ না করলে তার সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে।’
‘ছয়বছর পর এতে গত ৪ এপ্রিল মেসেজ পেলাম, ২২ এপ্রিলের মধ্যে বার্ষিক চাঁদা পরিশোধ করে সদস্যপদ নবায়ন করতে হবে। চাঁদা পরিশোধের সময় দিল ৪ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল। তখন ঈদুল ফিতর, পহেলা বৈশাখের বন্ধের সময়। অনেক সদস্য চাঁদা জমা দিতে পারেননি। মোট সদস্য ছিল ৬৭১ জন। যতদূর খবর পেয়েছি, নবায়ন করেছে ৫৪৩ জন। ১৫-২০ জনের মতো মারা গেছেন। তাহলে আরও একশ’রও বেশি সদস্য তাদের সদস্যপদ নবায়ন করতে পারেননি।’
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সাধারণ সদস্যদের মতামত নেওয়া হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে বলা হল ৮ জুন নির্বাচন। কোরবানির ঈদের মাত্র আটদিন আগে, তার ওপর হজের সময়, উপজেলা নির্বাচন চলছে, এটি কি শিল্পকলার নির্বাচন করার উপযুক্ত সময় হলো? এটা হীরক রাজার দেশ নাকি? নির্বাচন দেবেন আর সদস্যদের সঙ্গে কোনো আলাপ করবেন না? সদস্যদের এত অমর্যাদা কেন করছেন ?’
কমিটির আর্থিক কর্মকাণ্ডে কোনো স্বচ্ছতা ছিল না অভিযোগ করে রাশেদ হাসান বলেন, ‘করোনার সময় শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে অনেক সদস্যকে সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়েছে, এটি আমরা দেখেছি। কিন্তু কাকে কত টাকা দেওয়া হয়েছে, কত টাকা এসেছে, কিভাবে বিলিবণ্টন হয়েছে এর কোনো স্বচ্ছতা নেই। গত ছয় বছরে শিল্পকলা একাডেমি বরাদ্দ করা অর্থ কীভাবে খরচ করেছে, সেটিও সদস্যদের জানানো হয়নি।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্যবিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু সারাবাংলাকে বলেন, ‘বার্ষিক সাধারণ সভা হয়নি, এটি অসত্য তথ্য। প্রথমবার সাধারণ সভা হয়েছে। এরপর করোনার কারণে দুই বছর করতে পারিনি। বর্তমান জেলা প্রশাসক দায়িত্ব নেয়ার পর কমিটি বিলুপ্ত করে এডহক কমিটি গঠন করে দেন। সেই কমিটির মেয়াদ জুন পর্যন্ত। স্বাভাবিকভাবেই এডহক কমিটিকে জুনের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিতে হবে।’
‘অর্থনৈতিক কার্যক্রমের বিষয় বলা হচ্ছে। এখানে তো সাধারণ সম্পাদকের কোনো এখতিয়ার নেই। শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার পদাধিকার বলে কমিটির অর্থ সম্পাদক আর জেলা প্রশাসক সভাপতি। খরচের কোনো বিল-ভাউচার কিংবা চেকে সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর কিংবা মতামত নেওয়ার কোনো গঠনতান্ত্রিক বিধান নেই।’
কিছু সদস্যপদ নবায়ন করতে না পারার অভিযোগের বিষয়ে বাবু বলেন, ‘সদস্যপদ নবায়নের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে, ফেসবুকে শিল্পকলা একাডমির পেইজে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। আমরাও নিজেরা নবায়নের অনুরোধ করে নিজেদের টাইমলাইনে পোস্ট করেছি, প্রত্যেক সদস্যকে মেসেজ দেওয়া হয়েছে। এরপরও অবহিত না করার যে বিষয় বলা হচ্ছে, সেটা একান্তই তাদের ব্যক্তিগত। আর কীভাবে বললে অবগত হতেন সেটা আমার জানা নেই।’
সদ্যবিলুপ্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আবৃত্তিশিল্পী অঞ্চল চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় শিল্পকলা একাডেমি বার্ষিক অনুষ্ঠানের একটা প্ল্যান দেশের সব জেলায় পাঠিয়ে দেয়। সে অনুযায়ী সভা-অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বার্ষিক সাধারণ সভার তো কোনো নিয়ম এখানে উল্লেখ নেই। এখানে জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া তো কোনো সভা ডাকা যায় না। নবায়নের বিষয়ে যা বলা হচ্ছে সেগুলোও বিভ্রান্তিকর। ৫৪৩ জন সদস্য যদি তাদের সদস্যপদ নবায়ন করতে পারেন, তাহলে শুধু ২০-৩০ জন পারলেন না?’
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, গত ৯ মে থেকে মনোনয়ন পত্র বিতরণ শুরু হয়। ১৫ মে ছিল মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষদিন। রোববার (১৯ মে) মনোনয়নপত্র বাছাই হবে। ২৬ মে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন। বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ২৩ জন মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন বলে জানা গেছে।
যুগ্ম সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বী কংকন দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচন সংক্রান্ত কিংবা জেলা শিল্পকলা একাডেমির যে কোনো বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ জাতীয় শিল্পকলা একাডেমি, জেলা প্রশাসক এবং এডহক কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী যদি নির্বাচন হয়, তাহলে অবশ্যই অংশগ্রহণ করবো। যদি পুনঃতফসিল হয়, তাহলে সে অনুযায়ী অংশ নেব। আমরা এখন সাধারণ সদস্য মাত্র। এখানে আমাদের সিদ্ধান্তের কোনো বিষয় নেই।’
জানা গেছে, পুনঃতফসিলের দাবি জানানো রাশেদ হাসান প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি। কংকন দাশ একই সংগঠনের সহ-সভাপতি। সেই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ পাল সদস্য পদে নির্বাচন করছেন। রাশেদ হাসানের সঙ্গে স্মারকলিপি জমা দেয়া আবৃত্তিশিল্পী সেলিম রেজা সাগরও সদস্য পদে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সাইফুল আলম বাবু প্রশ্ন তুলেছেন, বার্ষিক সাধারণ সভা কিংবা আর্থিক বিষয়াদি নিয়ে অভিযোগ গত চার বছরে কেন তোলা হয়নি।
‘শিল্পকলা একাডেমি একটি সরকারি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, এটি নাচ-গানের কোনো ক্লাব নয়। গত নির্বাচনের সময়ও এ ধরনের নানা অভিযোগ তোলা হয়েছিল। বলা হচ্ছে, চার বছর ধরে সাধারণ সভা হয়নি, অনিয়ম হয়েছে। তাহলে চার বছরে একজন সদস্যও কেন বিষয়টি বললেন না। ৪ এপ্রিল সদস্যপদ নবায়নের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এরপর ২২ এপ্রিল পর্যন্ত সময় ছিল। কেউ তো এসে বললেন না যে, সময় বাড়াতে হবে। কেউ বললেন না আপনারা মিটিং ডাকুন।’
বাবু আরও বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়ে অভিযোগ করার দরকার ছিল না, বিষয়টা তো বসেই সমাধান করা যেত। বাইরে বাইরে কথা না বলে, আমরা তো সবাই বন্ধুবান্ধব, সংস্কৃতিকর্মী, আমরা তো একসঙ্গে বসে কথা বলতে পারতাম। এভাবে আলোচনার মাধ্যমে তো বৃহৎ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানটিকে ছোট করা হচ্ছে, সংস্কৃতিকর্মীদের ছোট করা হচ্ছে, যে ৫৪৩ জন তাদের সদস্যপদ নবায়ন করেছেন, তাদেরও ছোট করা হচ্ছে।’
সহ-সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘গত নির্বাচনের আগেও আমরা অনেক অভিযোগ দেখেছি। অনিয়মের কথা বলা হচ্ছে, আমরা অনিয়ম দেখলে কী চুপ করে থাকতাম ! আমি সংস্কৃতিকর্মী। যাবতীয় অন্যায়ের প্রতিবাদ করি আর শিল্পকলা একাডেমিতে অনিয়ম হবে, সেটা কি আমরা মেনে নেব ? আসলে যারা অভিযোগ করছেন, তারাই জানেন কেন, কী কারণে অভিযোগ করছেন।’
সাইফুল আলম বাবু বলেন, ‘আসলে আমি গত ছয় বছর ধরে মাঠে ছিলাম, করোনার সময় সংস্কৃতিকর্মীদের পাশে ছিলাম। এর ফলে আমার যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে, সেটা ক্ষুন্ন করার জন্য কেউ কেউ মরিয়া হয়ে উঠেছেন। যারা সকালে ডিসি অফিসে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন, বিকেলে তাদের কেউ কেউ আবার নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এতে বোঝা যায়, একটা পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য এটা করা হচ্ছে। নির্বাচন বানচালের পরিস্থিতি।’
জানতে চাইলে রাশেদ হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনেকে বলছেন- এতদিন পর কথাগুলো কেন বলছেন? কখন বলব? ছয়বছরে একটা সাধারণ সভা হয়নি, কোথায় বলব? কেউ কেউ বলছেন- শেষ মুহূর্তে এসে কেন বলছেন? আমি বললাম- শিল্পকলার মেম্বার কী আমি একজন? আপনারা পাবলিকলি বলেননি কেন? শিল্পকলার সদস্যদের কাজ কি শুধু নির্বাচনে ভোট দেওয়া? ’
‘আমি আমার প্রতিবাদটা জানিয়ে রাখলাম। নতুন তফসিল ঘোষণার দাবি করেছি এবং বিদ্যমান তফসিলে নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি। এরপরও যদি নির্বাচন জোরপূর্বক করে ফেলে, তাহলে করবে। আমি তো আর রাজনৈতিক দলের কর্মী না যে, মারামারি করবো। নির্বাচন হয়ে গেলে হয়ে যাবে। শিল্পকলার সেক্রেটারি হওয়া না হওয়া আমার জন্য বড় বিষয় নয়, আমি তো রাজনৈতিক দলের সদস্য নই, আমার মূল পরিচয় আমি একজন শিল্পী।’
আইনি প্রক্রিয়ায় যাবেন কি না – জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেউ বলছেন আইনগত পদক্ষেপ নিতে, আবার কেউ নিষেধ করছেন। আমি এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।’
আবৃত্তিশিল্পী শামীমা শিলা সারাবাংলাকে বলেন, ‘পক্ষে-বিপক্ষে সবাই আমরা সংস্কৃতিকর্মী, একই পরিবারের সদস্য। পরিবারের মধ্যে যাতে কোনো বিভেদ না হয়, সবাই মিলেমিশে যাতে সুন্দরভাবে নির্বাচনটা হয়, সেটাই সাধারণ সদস্য হিসেবে আমাদের কাম্য।’
সংস্কৃতিকর্মী ইউসুফ সোহেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে, এটা খুবই স্বাভাবিক। দায়িত্বে থাকলে এমন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। কিন্তু এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করা উচিৎ নয় যাতে সংস্কৃতি অঙ্গন বিভক্ত হয়ে পড়ে। নির্বাচনটা যাতে একটি সুস্থ, গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতা হিসেবে থাকে, এটিই কাম্য। যথাসময়ে একটি সুন্দর নির্বাচন হোক এবং এরপর নির্বাচিতদের কাছ থেকে জবাবদিহিতা চাওয়ার একটা পরিবেশ যেন বজায় থাকে, এটিই প্রত্যাশা।’
সঙ্গীতশিল্পী অনামিকা তালুকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনের একটা সংস্কৃতি যে চালু হয়েছে, সেটা অব্যাহত রাখা দরকার। এমনিতেই নির্ধারিত মেয়াদের পর আরও তিনবছর পার হয়ে গেছে, সুতরাং তফসিল যখন ঘোষণা হয়েছে, নির্বাচনটা হয়ে যাক। নির্বাচন মানে তো শুধু ভোট দেয়া নয়, সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে মিলনমেলা তৈরি হয়, পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ-হৃদ্যতাটা বাড়ে। আমি চাই, নির্বাচনটা হোক, নতুন যে নেতৃত্ব আসবে তারা যেন সাধারণ সদস্য অর্থাৎ শিল্পীদের নিয়ে শিল্পকলার কর্মকাণ্ডকে বিস্তৃত পরিসরে নিয়ে যায়।’
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিল্পকলার নির্বাচন নিয়ে কিছু কিছু কথাবার্তা হচ্ছে শুনেছি। কেন, ঠিক কী কারণে সমস্যা, সেটা বলতে পারছি না। দুয়েকটি অনলাইন পত্রিকায় কিছু নিউজ দেখেছি। সেখানে বার্ষিক সাধারণ সভা না হওয়া, আর্থিক কিছু বিষয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে। অভিযোগগুলো যৌক্তিক, তবে যার বা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে, তাদেরও বক্তব্য থাকতে পারে, সেটা দেখলাম না। যার কারণে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে।’
‘কেউ ক্ষমতায় গেল বা কোনো পোস্টে বসলো মানেই সব দায়দায়িত্ব তার, বিষয়টা এমন নয়। আমারও তো দায়দায়িত্ব আছে। দিনশেষে ক্ষমতায় যাওয়া ব্যক্তি যেমন শিল্পকলার একজন সাধারণ সদস্য, আমিও একজন সাধারণ সদস্য। আবার দিনশেষে আমরা সবাই সংস্কৃতিকর্মী। সুতরাং সমস্যা থাকলে, সেটা আমরা বসে ঠিক করে ফেলতে পারতাম। কারণ শিল্পীদের জন্যই শিল্পকলা।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। সুন্দরভাবে নির্বাচন হয়ে যাওয়াটাই কাম্য। তবে তিন বছরের নির্বাচন ছয় বছরে হওয়া কাম্য নয়। সাংবাদিকদের নির্বাচন, আইনজীবীদের নির্বাচন যদি মেয়াদের মধ্যে হতে পারে, সংস্কৃতিকর্মীদেরটা হতে পারবে না কেন? নির্বাচন যদি সঠিক সময়ে হয়ে যেত, তাহলে এসব জটিলতা তৈরি হতো না। সার্বিকভাবে বলতে পারি যে, একটা ঐক্যমত্যে পৌঁছে সুন্দরভাবে নির্বাচনটা হওয়া অসম্ভব কিছু নয়, এটার জন্য এত অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের প্রয়োজন ছিল না।’
বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত নাট্যজন রবিউল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটা নির্বাচন যেহেতু হচ্ছে, এখানে পক্ষে-বিপক্ষে কথা আসবেই। এটাকে খুব বড়ো করে দেখার কিছু নেই বলে আমি মনে করি। দেশের অনেক শিল্পকলা একাডেমিতে তো নির্বাচনই হয় না। খোদ ঢাকাতেও হয় না। সুতরাং নির্বাচন হলে যে শিল্পকলায় খুব বড়কিছু হয়ে যাবে আর না হলে শিল্পকলা ধ্বংস হয়ে যাবে, সেটা আমি মনে করি না। গত ছয় বছর তো একটা কমিটি ছিল। তাদের তো খুব বেশি কর্মকাণ্ড আমি দেখিনি জাতীয় দিবসে ফুল দেয়া ছাড়া। সেক্রেটারি খুবই একটিভ ছিলেন, উনি ক্যারিশমেটিক লোক। বলতে গেলে, উনি একাই পুরো কমিটিকে ধরে রেখেছিলেন। একটা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিল্পকলার সৌন্দর্য নষ্ট করা উচিত হবে না।’
সারাবাংলা/আরডি/একে
চট্টগ্রাম নির্বাচন শিল্পকলা শিল্পকলা একাডেমি শিল্পকলা একাডেমির নির্বাচন