‘বৈষম্যমূলক’ পেনশন ব্যবস্থা প্রত্যাহারের দাবি বুয়েট শিক্ষকদের
১৯ মে ২০২৪ ১৪:১২
ঢাকা: সরকার ঘোষিত পেনশন সংক্রান্ত নতুন প্রজ্ঞাপনকে ‘বৈষম্যমূলক’ জানিয়ে অতিবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা বলছেন, নতুন এই পেনশন ব্যবস্থা শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উপযোগী নয়।
রোববার (১৯ মে) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এই দাবি জানান বুয়েটের শিক্ষকরা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আয়োজনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনের আগে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্ট ধরে মৌন মিছিল করেন তারা।
মানববন্ধনে বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে নতুন পেনশন ব্যবস্থা সংক্রান্ত যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো আমরাও সেট ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছি। এটির নাম ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম’। কিন্তু রাষ্ট্রের কিছু ব্যক্তিকে একধরনের, বাকিদের অন্যধরনের পেনশন ব্যবস্থার আনা কখনোই সর্বজনীন হয় না। সকলের ক্ষেত্রে যদি এই পেনশন ব্যবস্থা প্রযোজ্য হতো, সেক্ষেত্রে আমাদের কোনো অভিযোগ ছিল না।’
তিনি বলেন, কিন্তু প্রজাতন্ত্রের কিছু কর্মচারীদের সংবিধানসম্মত সুবিধা প্রদান করা হবে এবং অন্যদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হবে—সেটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আমরা মনে করি, এর মধ্য দিয়ে শিক্ষকসমাজের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। অনতিবিলম্বে এই পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপনটি প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি।’
কর্মসূচির সমন্বয়ক বুয়েটে ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ মাহিন মোবাররাত সারাবাংলাকে বলেন, ১৩ মার্চ সরকার প্রজ্ঞাপন জারির মধ্য দিয়ে নতুন পেনশন ব্যবস্থার কথা জানায়। সেখানে প্রত্যয় স্কিমের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পেনশন পাবেন। আমরা নতুন এই পেনশন ব্যবস্থা নয়; বরং পূর্বের পেনশন ব্যবস্থায় থাকতে চাই। কারণ, পূর্বের ব্যবস্থায় শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি অধিক নিরাপদ।
বুয়েটের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরাই শিক্ষকতা পেশায় আসেন। আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি না থাকলে সেক্ষেত্রে তারা এখানে আর থাকবেন না। এইদিকটা বিবেচনা করে হলেও নতুন স্কিমটি চাপিয়ে না দেওয়া উচিত।
এর আগে, পেনশন সংক্রান্ত জারি করা প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার চেয়ে একটি বিবৃতি প্রদান করে বুয়েট শিক্ষক সমিতি।
বিবৃতিতে বুয়েট শিক্ষকরা বলেন, শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পেনশন স্কিম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে প্রচলিত পেনশন ব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা অভ্যস্ত এবং আর্থিক বিষয়ে এক ধরণের নিরাপত্তা অনুভব করে। মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশাকে গ্রহণ করার জন্য এই পেনশন ব্যবস্থা একটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।’
নতুন পেনশন স্কিম শিক্ষকদের মধ্যে হীনমন্যতার সৃষ্টি করবে জানিয়ে তারা বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে বর্তমান পেনশন ব্যবস্থা বহাল রেখে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুবিধা কমানোর প্রচেষ্টার ফলে শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরনের হীনমন্যতা তৈরি হবে। এটা বিবেচনা করা অপরিহার্য যে, মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ এবং নতুন এই পেনশন স্কিম মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় আসার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করবে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মানের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে এবং ফলস্বরূপ, সমগ্র জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
সারাবাংলা/আরআইআর/ইআ