চট্টগ্রাম নগর আ. লীগের সম্মেলনের রোডম্যাপ দিলেন হানিফ
১৯ মে ২০২৪ ২১:১৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো : কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী জুন-জুলাইয়ের মধ্যে মহানগরের আওতাধীন সকল সাংগঠনিক ইউনিট-ওয়ার্ড ও থানা এবং অক্টোবরে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সভায়। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নগর কমিটির সম্মেলনের সময় নির্ধারণ করবেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (১৯ মে) দুপুর পর্যন্ত নগরীর কাজির দেউড়িতে সেনা কল্যাণ কনভেনশন হলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন নগর কমিটির সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী।
সভা শেষে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আমি এখানে এসেছি। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা হয়েছে। তাদের টাইমফ্রেম দেওয়া হয়েছে, আগামী জুন এবং জুলাই মাসের মধ্যে সকল থানা, ওয়ার্ড এবং ইউনিটের সম্মেলন শেষ করতে হবে। এরপর আগামী অক্টোবর মাসে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। সভায় এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। ২২ মে মহানগর আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভায় বসবে। বসার পরে সম্মেলনের বিষয়ে যা যা পদক্ষেপ, সেগুলো চূড়ান্ত করা হবে।’
এরইমধ্যে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সম্মেলন নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে কেন্দ্রের অবস্থান জানতে চাইলে হানিফ বলেন, ‘যেগুলো নিয়ে কোনো সমস্যা নেই, সেগুলো নিয়ে তো আর কথা নেই। যেখানে সমস্যা আছে, সেগুলো বসে ঠিক করতে হবে। কোনো অভিযোগ যদি থাকে, সেগুলো অবশ্যই নিষ্পত্তি করা হবে।’
২০২১ সালের শেষদিকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সম্মেলন শুরু হয়। কিন্তু এ সম্মেলন নিয়ে নেতারা দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এর ফলে চট্টগ্রাম নগরীতে আওয়ামী লীগের ১৩২টি ইউনিট, ৪৪ ওয়ার্ড এবং ১৫টি সাংগঠনিক থানার মধ্যে শুধু কিছু ইউনিট এবং ওয়ার্ড ছাড়া আর কোথাও সম্মেলন সম্ভব হয়নি। তবে ওয়ার্ড-ইউনিটের সম্মেলনগুলো নিয়েও বিতর্ক আছে।
এ অবস্থায় দফায় দফায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও সেটি হয়নি। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালে ১ অক্টোবর, ৪ ডিসেম্বর ও ১৮ ডিসেম্বর এবং সর্বশেষ গত বছরের ৩১ জুলাই চার দফায় নগর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি।
এ অবস্থায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, সব সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের ঢাকায় ডেকে পাঠায় কেন্দ্র। গত ১২ মে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় নগর আওয়ামী লীগকে সম্মেলনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়। সভার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় যোগ দিতে আসেন মাহবুব উল আলম হানিফ।
২০০৫ সালে সর্বশেষ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিল। এতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও কাজী ইনামুল হক দানু।
দানু মারা যাওয়ার পর ২০১৩ সালে কেন্দ্র থেকে একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়, যেন মহিউদ্দিনকে সভাপতি ও আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর মহিউদ্দিনের মৃত্যুর পর প্রথম সহ সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। গতবছর তাকে ভারমুক্ত করা হয়।
‘সম্মেলনে ভোটাভুটি হলে কেনাবেচার সুযোগ থাকে’
এদিকে রোববার অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত যেসব ইউনিট, ওয়ার্ড, থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কমিটি গঠন হয়নি, জুলাই মাসের মধ্যেই সেগুলোর সম্মেলন ও কমিটি গঠন অবশ্যই করে ফেলতে হবে। আগস্ট মাস যেহেতু শোকের মাস, এসময় আওয়ামী লীগের কোনো স্তরের সম্মেলন ও কমিটি গঠনের অবকাশ নেই। সেপ্টেম্বর মাসকে প্রস্তুতি পর্ব হিসেবে ধরে নিয়ে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী অক্টোবর মাসে নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে আড়ম্বরপূর্ণভাবে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।’
‘সারাদেশে আওয়ামী লীগের জেলা স্তরের যে সাংগঠনিক কমিটিগুলো রয়েছে, তার মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ অন্যতম শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব বরাবরই তার সাংগঠনিক সক্ষমতা খিয়েছে এবং যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে দলের শক্তিশালী ভিত্তিকে সুদৃঢ় রেখেছে। এ ধারাবাহিকতা রক্ষায় নবীণ-প্রবীণের সমন্বয়ে সম্মেলনের প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করে দিতে হবে।’
হানিফ আরও বলেন, ‘নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যক্তির সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা ও দক্ষতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। ব্যক্তির পছন্দ ও অপছন্দের বিষয়টি কখনো মুখ্য হতে পারে না। নেতৃত্ব নির্বাচনে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতেই পারে। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা সাংগঠনিক শৃঙ্খলার মধ্যেই হওয়া উচিত। সবচেয়ে বড় কথা সংগঠনের বিভিন্ন ধাপ ও স্তরগুলোতে নেতৃত্ব যদি সমঝোতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে দলীয় ঐক্য, শৃঙ্খলা ও শক্তি বজায় থাকে। নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটাভুটির বিষয় থাকলে কেনা-বেচা হওয়ার সুযোগ থাকে এবং পারস্পরিক বিভক্তি সৃষ্টিরও আশঙ্কা দেখা দেয়।’
সভায় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন জানান, মহানগরের আওতাধীন ২৭টি ইউনিট ও ২৯টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন বাকি আছে। ১৫টি থানার মধ্যে একটির সম্মেলন হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ কখনো কোনো ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার বাইরে যায়নি। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী জুলাই মাসের মধ্যে অবশিষ্ট ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ করা হবে। অক্টোবর মাসের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্ধারিত তারিখ, সময় ও স্থানে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে।’
সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনও বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/আরডি/একে