প্রবৃদ্ধি ছাড় দিয়ে হলেও মূল্যস্ফীতি হ্রাসে ব্যবস্থা নিতে হবে
১৯ মে ২০২৪ ২২:৪৮
ঢাকা: ‘সামনে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এ সময়ে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাজেট মেনে নিতে হবে। বাজেটের আকার বিগত সময়ের তুলনায় ব্যতিক্রমী হবে বলে মনে হচ্ছে। কারণ, মূল্যস্ফীতিকে বিবেচনায় নিলে তা গতবছরের তুলনায় কম হতে পারে। প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও মূল্যস্ফীতি হ্রাসে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে। বাজেটের আকার যাই নির্ধারণ করা হোক না কেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- বাজেট কতটা দক্ষভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। বাজেট বাস্তবায়নে এবার দক্ষতা ও সুশাসন নিশ্চিত করে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুর্নস্থাপন সবচেয়ে বেশি জরুরি।’— সারাবাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এমনটিই বলেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। আসন্ন বাজেটকে সামনে রেখে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাজেটের আকার যাই নির্ধারণ করা হোক, সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো- বাজেট কতটা দক্ষভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। বাজেট বাস্তবায়নের ফলাফল তার উপরই নির্ভর করবে। তাই বাজেট বাস্তবায়নে দক্ষতা, সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। খাতওয়ারি বরাদ্দের ক্ষেত্রে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ আগ্রাধিকার দিতে হবে। নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে নির্বাচিত হতে হবে; সেটি বর্তমানে কতটুকু অগ্রাধিকার পাওয়ার দাবিদার সেটা বিবেচনায় নিতে হবে। রাজস্ব বাড়াতে এনবিআরকে আরও সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সাধারণ মানুষের উপর অপ্রতক্ষ্য করের বোঝা চাপিয়ে না দিয়ে প্রত্যক্ষ করের উপর প্রাধান্য দিতে হবে। এনবিআরকে ডিজিটালাইড করে কর ফাঁকি প্রতিরোধ করতে হবে।’
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘আইএমএফ’র প্রেসক্রিপশন আছে। কিন্তু, দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহাল থাকা কর অব্যাহতি উঠিয়ে নেওয়ার চাপ থাকবে। কিছু ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি উঠিয়ে নেওয়ার কথা বিবেচনায় নিতে হবে। তেমনি কিছু ক্ষেত্রে তা অব্যাহত রাখতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনী পণ্যের ক্ষেত্রে কর ছাড় রাখতে হবে, যেন সাধারণ মানুষের উপর বাড়তি বোঝা না হয়। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘টাকার অবনমন হয়েছে। আমদানি মূল্য বাড়বে। প্রত্যক্ষ কর আদায়ে সচেষ্ট হতে হবে। আমদানি শুল্কে কিছুটা ছাড় দিতে হবে। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি কাঠামো পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। কর অব্যাহতি কাঠামো এবং সামগ্রিকভাবে কর কাঠামো বিনিয়োগবান্ধব হতে হবে, নিম্ন আয়ের মানুষ বান্ধব হতে হবে। কর খেলাপী ও অবৈধ টাকা যারা নিয়েছে তাদের যেন কোনো ছাড় দেওয়া না হয়। তাদের ক্ষেত্রে শূন্য-সহিষ্ণুতা দেখাতে হবে।’
রাজস্ব আহরণকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরকে শক্তিশালী ও ডিজিটাল করতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘এনবিআরকে শক্তিশালী করতে হবে। এ প্রতিষ্ঠানে আরও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এনবিআরে বিনিয়োগ করলে আমদানি, ভ্যাট ও কাস্টমস পূর্ণ ডিজিটালাইজড করলে, বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে ইন্টার অপারেবিলিটি প্রতিষ্ঠা করলে, সরকারের রাজস্ব আহরণের গতি আরও ত্বরাণ্বিত হবে।’
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দেশে আয় বৈষম্য বাড়ছে। তাই প্রত্যক্ষ কর আদায়কে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বৈষম্য কমাতে হবে। কর কাঠামোর সংস্কার, কর আহরণে দক্ষতা বৃদ্ধি, সম্পদের সুষ্ঠ বণ্টন, বাজেট বাস্তবায়নে দক্ষতা- এগুলোতে বেশি মনযোগ দিতে হবে। প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা ছাড় দিয়ে, মূল্যস্ফীতি হ্রাসে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানকে প্রণোদিত করতে সরকারি সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’
রিজার্ভ কমে আসছে- কি করা যেতে পারে? এমন প্রশ্নের উত্তরে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এখন সবেচেয়ে বেশি প্রয়োজন- আমাদের যে রফতানি হচ্ছে, রেমিট্যান্স আসছে- তার সবটুকু দেশে নিয়ে আসা। রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স যেন দেশে ফেরত আসে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এখানকার সক্রিয় সিন্ডিকেট নির্মূল করতে হবে। রেমিট্যান্সের পুরো আয় যেন ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আসে তা নিশ্চিত করতে হবে। টাকার অবনমন হয়েছে। কিন্তু রফতানি ও রেমিট্যান্সে তা নতুন প্রণোদনা সৃষ্টি করেছে। সরকার এসব খাতে ভর্তুকি কমাতে পারে। এতে সরকারের ব্যয়ের বোঝা কিছুটা হলেও কমবে।’
সর্বোপরি, বাজেট বাস্তবায়নে দক্ষতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুর্নস্থাপনে সবচেয়ে বেশি জরুরি বলে মনে করেন মোস্তাফিজুর রহমান।
সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম