সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ ও পরিবারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
২১ মে ২০২৪ ০৯:১৭
বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিতে জড়িত অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না।
গতকাল সোমবার (২০ মে) যুক্তরাষ্ট্রের পররাস্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এই বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ব্যাপক পরিমাণে দুর্নীতিতে জড়িত হওয়ার কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান অবসপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রাতিষ্ঠান এবং জনপ্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের বিশ্বাস অবমূল্যায়িত করতে তার (জেনারেল আজিজ) কর্মকাণ্ড ভূমিকা রেখেছে।
জেনারেল আজিজের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আজিজ আহমেদ বিভিন্ন সরকারি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তার ভাইকে ফৌজদারি অপরাধের জবাবদিহিতা এড়াতে সহায়তা করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি তার ভাইকে সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন কাজ অবৈধভাবে পাইয়ে দিতেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্ন সরকারি নিয়োগে ঘুষ গ্রহণ করেছেন।
এসব অভিযোগে ফরেন অপারেশনস, অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারায় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মন্ত্রণালয় বলছে, এই পদক্ষেপের ফলে তাৎক্ষণিকভাবে আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের যোগ্যতা হারিয়েছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রাতিষ্ঠানিকতা ও আইনের শাসনকে শক্তিশালী করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ— এই নিষেধাজ্ঞা সেটিই নিশ্চিত করছে। সরকারি সেবাকে আরও স্বচ্ছ ও সুলভ করতে সহায়তা করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় বাংলাদেশের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের পাশের রয়েছে। ব্যবসায়িক ও নীতিগত পরিবেশ এবং মানি লন্ডারিংসহ অন্যান্য আর্থিক অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়াতেও যুক্তরাষ্ট্র সার্বিক সহায়তা করছে।
জেনারেল আজিজ আহমেদ ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন চার বছর।
মঙ্গলবার (২১ মে) এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জেনারেল আজিজ বা বাংলাদেশ সরকারের প্রতিক্রিয়া জানতে পারেনি সারাবাংলা।
বাংলাদেশি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এই প্রথম নয়। এর আগে ২০২১ সালে, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র্যাব) বাহিনী এবং এর ছয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র জানায়, বাংলাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় র্যাবের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে, যা আইনের শাসন, মানবাধিকার, মৌলিক স্বাধীনতা ও বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে হেয় করার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলছে।
র্যাবের যে ছয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় তারা হলেন— র্যাবের ওই সময়কার মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক ডিজি বেনজীর আহমেদ, ওই সময়কার অতিরিক্ত ডিজি (অপারেশন) খান মোহাম্মদ আজাদ এবং সাবেক অতিরিক্ত ডিজি তোফায়েল মুস্তাফা সরওয়ার, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান।
সারাবাংলা/টিআর
আজিজ আহমেদ জেনারেল আজিজ মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ম্যাথিউ মিলার সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ