প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ‘লোৎসে’ জয় করলেন বাবর আলী
২১ মে ২০২৪ ১১:১০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ পর্বতশৃঙ্গ লোৎসে জয় করেছেন চট্টগ্রামের সন্তান ডা. বাবর আলী, যিনি দু’দিন আগে এভারেস্ট চূড়ায় লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছেন।
মঙ্গলবার (২১ মে) নেপালের স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে তিনি ২৭ হাজার ৯৪০ ফুট উচ্চতার লোৎসে চূড়া স্পর্শ করেন।
বাবরের লোৎসে জয় দেশের পর্বতারোহণের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা বলে মন্তব্য করেছে তার সংগঠন ভার্টিক্যাল ড্রিমারস।
বাবরের অভিযান সমন্বয়ক ফরহান জামান সারাবাংলাকে জানান, রোববার (১৯ মে) ভোরে এভারেস্ট জয় করে বেইজ ক্যাম্প- ফোরে ফিরে আসেন বাবর। সময় লাগে প্রায় ১৪ ঘণ্টা। রাতেই লোৎসের উদ্দেশে যাত্রার কথা থাকলেও শরীর সায় দেয়নি। ধকল কাটিয়ে একদিন পর সোমবার মধ্যরাতে তিনি লোৎসে জয়ের পথে আগান।
এভারেস্টের মতো লোৎসে সামিটেও বাবরের সঙ্গে ছিলেন তার শেরপা সাথী বীর বাহাদুর তামাং। অভিযানের পরিচালক প্রতিষ্ঠান স্নোয়ি হরাইজনের স্বত্বাধিকারী বোধা রাজ বান্ডারি এবং বেসক্যাম্পের ধর্মা তামাং মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ফরহান জামানকে বাবরের সফল হওয়ার তথ্য দেন।
ফরহান জামান বলেন, ‘এখনো অভিযান শেষ হয়নি। বাবর নিরাপদে বেসক্যাম্পে ফিরে এলেই আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবো। আশা করছি বাবর ২৩ মে-র মধ্যে বেসক্যাম্পে নেমে আসবে এবং ৩ জুন দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।’
৩৩ বছর বয়সী বাবর আলীর বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বুড়িশ্চর গ্রামের নজু মিয়া হাট এলাকায়। বাবা লিয়াকত আলী কুয়েত প্রবাসী ছিলেন। ২০১৭ সালে দেশে ফিরে বর্তমানে অবসর জীবনযাপন করছেন। মা লুৎফুন্নাহার বেগম গৃহিণী। তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে বাবর দ্বিতীয়।
বাবর আলী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে এমফিল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিজিটি সম্পন্ন করেন।
ছোটবেলা থেকেই দূরন্ত প্রকৃতির বাবর কিছুদিন চিকিৎসা পেশায় থাকলেও পরিভ্রমণের নেশায় সেটা ছেড়ে দেন। ২০১৯ সালে পায়ে হেঁটে ও পরে সাইকেলে দেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেন। ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে সাইকেলযাত্রা শুরু করেছিলেন বাবর আলী। এক মাসের চেষ্টায় প্রায় চার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী গিয়ে থামেন তিনি।
এভারেস্ট জয়ের আগে আরও অনেক পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন বাবর। ৪ হাজার ৯৮৪ মিটার উচ্চতার সারগো রি থেকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার মাউন্ট আমা দাবলাম– অন্তঃত ৯টি পর্বতশৃঙ্গ জয়ের রেকর্ড আছে বাবরের ভাণ্ডারে।
গত ৩০ মার্চ চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলনে এসে বাবর আলী তার এভারেস্ট জয়ের স্বপ্নের কথা জানিয়েছিলেন। পরদিন ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয় তার এভারেস্ট জয়ের অভিযান। ৪ এপ্রিল নেপালের কাঠমান্ডু থেকে পৌঁছান লুকলাতে। ১০ এপ্রিল এভারেস্টের বেইজ ক্যাম্পে পৌঁছান তিনি। এরপর একমাস ধরে অপেক্ষার পালা। ১৪ মে শুরু হয় চূড়ান্ত অভিযান। ওইদিনই তিনি দ্বিতীয় ক্যাম্পে, ১৮ মে তৃতীয় ক্যাম্পে এবং ১৯ মে ভোরে ক্যাম্প ফোরে পৌঁছান। ১৯ মে সকালে তিনি ‘ডেথ জোন’ নামে পরিচিত ২৯ হাজার ৩১ ফুট উচ্চতায় শৃঙ্গে আরোহণ করে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে দেন।
বাবরের আগে আরও পাঁচজন এভারেস্ট জয় করেন। ২০১০ সালের ২৩ মে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্টের শীর্ষে ওঠেন মুসা ইব্রাহীম। ২০১১ ও ২০১২ সালে দু’বার এভারেস্ট জয় করেন এম এ মুহিত। প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২০১২ সালের ১৯ মে এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করেন নিশাত মজুমদার। একই মাসের ২৬ মে ওয়াসফিয়া নাজরীন জয় করেন এভারেস্ট।
২০১৩ সালের ২০ মে এভারেস্ট জয় করে নামার পথে মারা যান সজল খালেদ, যিনি পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে পর্বতজয় করেছিলেন। সেই অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর পর গত ১১ বছরে আর কোনো বাংলাদেশি এভারেস্টের পথ মাড়াননি।
৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ের এ অভিযানে বাবরের পাশে দাঁড়ায় ভিজ্যুয়াল নিটওয়্যার লিমিটেড। এছাড়া এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ঢাকা ডাইভার্স ক্লাব, বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ব্লু জে, চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনী, গিরি, ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সও বাবরের স্বপ্নপূরণের সহযাত্রী হয়েছে। আর দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠনের প্রতিনিধি, বন্ধু-স্বজনরাও গণতহবিল সংগ্রহ করে বাবরের পাশে দাঁড়ান।
সারাবাংলা/আরডি/এমও