শিক্ষক-প্রশাসন দ্বন্দ্বে অচলাবস্থা, সেশনজট শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা
২২ মে ২০২৪ ০৮:৩৬
কুমিল্লা: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শিক্ষক সমিতির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্বন্দ্বের জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে ক্যাম্পাস। এতে পাঁচটি বিভাগের অন্তত আটটি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। এ ছাড়া সাতটি বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রস্তাবিত রুটিন প্রকাশ স্থগিত হয়ে আছে। এ সব কারণে অনেকটা অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে অচলাবস্থা নিরসনে দুই পক্ষই আগ্রহের কথা বললেও কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেউই। এতে দিনদিন বাড়ছে সেশনজটের শঙ্কা।
‘শেষ বর্ষে এসে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। এতে করে একদিকে বাড়ছে মানসিক চাপ, অন্যদিকে ক্যারিয়ার নিয়েও আছি দুশ্চিন্তায়। বিশ্ববিদ্যালয় একদিন খুলবে সেটি আগে কিংবা পরে। কিন্তু আমাদের জীবন থেকে যে সময়টুকু চলে যাচ্ছে, তা কি আমরা কখনো ফিরে পাবে?’
গত ৩০ এপ্রিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য ও শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে অনির্দিষ্টকালের বন্ধের তিন সপ্তাহ পর সারাবাংলা’র কাছে এমনটিই বলছিলেন ইংরেজি বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার।
তিনি বলেন, ‘গ্র্যাজুয়েশন সময় মতো শেষ করতে না পারলে আমরা বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারব না। আমাদের ক্লাস-পরীক্ষাগুলো দ্রুত নিয়ে নেওয়া হোক। যেন আমাদের সেশনজটের মত ভয়ানক বেড়াজালে না পড়তে হয়।’
জানা যায়, গত মার্চ মাসে ৭ দফা দাবিতে ৩ বার ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেয় কুবি শিক্ষক সমিতি। পরে গত ২৮ এপ্রিল উপাচার্যের নেতৃত্বে শিক্ষকদের মারধরের ঘটনায় উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। পরবর্তী সময়ে শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেয় কুবি প্রশাসন। তবে ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া ও শিক্ষকদের মারধরের ঘটনার বিচার দাবিতে দফায় দফায় মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন থেকে দুইটি ভিন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও তদন্ত কমিটি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন শিক্ষক সমিতি। ফলে খুব সহসাই ক্যাম্পাস খুলছে না বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।
*তিন সপ্তাহ ধরে বন্ধ সকল কার্যক্রম
* পাঁচ বিভাগের আটটি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত
* পিছিয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা, বাড়ছে মানসিক চাপ
*ক্যাম্পাস বন্ধের ওপর ভিত্তি করে রিকোভারি প্ল্যান করা হবে: কুবি উপ-উপাচার্য
* ক্যাম্পাস খোলার দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়নি কেউই
এদিকে বিভিন্ন বিভাগের অন্তত আটটি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে বলে জানিয়েছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর। এ ছাড়াও অন্তত সাতটি বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রস্তাবিত রুটিন প্রকাশ স্থগিত রয়েছে বলে জানা গেছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, ‘আমাদের মাস্টার্স শেষ সেমিস্টার চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়। দুটি পরীক্ষা হয়েছে আর বাকি দুটি পরীক্ষা কবে হবে তা আমরা জানি না। সরাসরি আমাদের ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে। চাকরির বাজারে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি,আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। মূলত আমাদের যে পরিকল্পনা ছিল সেই পরিকল্পনা নষ্ট হচ্ছে।’
মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী পাবেল রানা বলেন, ‘গত ৬ মে হতে আমাদের অষ্টম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজও আমরা সেমিস্টারে বসতে পারিনি। শিক্ষক নাকি বাবার মতো। কোন বাবা কী তার সন্তানের খারাপ চাইতে পারে? এমনিতেই করোনার কারণে আমাদের ১ বছরেরও বেশি সময় নষ্ট হয়েছে। এখন যদি এভাবে আরও সময় অপচয় হতে থাকে তাহলে অনার্স, মাস্টার্স শেষ করতেই আমাদের বয়স হয়ে যাবে সাতাশ-আটাশ। চাকরি কবে করবো, পরিবারকে কখন সহযোগিতা করবো? প্রশাসনকে শিগগিরই ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
কুবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘শিক্ষকরা আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে দাঁড়িয়ে আছে। শিক্ষার্থীরাও অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার জন্য একাধিকবার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু উপাচার্য আমাদের কথা শুনছেন না। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষার্থীদের জট নিরসনে আমরা অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে হলেও পুষিয়ে দেব।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সমস্যা নিরসনে দুইটা তদন্ত কমিটি কাজ করছে। আশাকরি শিগগিরই ক্যাম্পাস খুলে যাবে। আর খোলার পরে কতদিন ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল তার উপর ভিত্তি করে আমরা রিকোভারি প্ল্যান করব।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈনের সাথে মুটোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সারাবাংলা/একে