বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারের হিডেন চার্জ বন্ধে লিগ্যাল নোটিশ
২২ মে ২০২৪ ১৬:২১
ঢাকা: বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারে অতিরিক্ত চার্জ, গোপন চার্জ বন্ধ করা, জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুতের বিলিং অনুশীলন পর্যালোচনা ও নিরীক্ষা করা এবং অতিরিক্ত চার্জ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
রেজিস্ট্রি ডাক এবং ই-মেইলযোগে জালানি ও বিদ্যুৎ সচিব, পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড, বাংলাদেশ রুরাল ডেভেলপমেন্ট বোর্ড, ডেসকো, ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি ও ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষসহ নয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বরাবরে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ এম জামিউল হক ফয়সাল, কামরুল হাসান রিগ্যান ও জাকির হায়দারের পক্ষে আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল হাদী গতকাল (২১ মে) এ নোটিশ পাঠিয়েছেন।
নোটিশ প্রদানকারী আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল বলেন, প্রিপেইড বৈদ্যুতিক মিটার চালু সত্ত্বেও, ভোক্তারা অতিরিক্ত চার্জ, গোপন চার্জ এবং স্বচ্ছতার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে গ্রাহকেরা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। সমস্যাগুলি গ্রাহকদের জন্য ব্যাপক অসন্তোষ ও আর্থিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। গণমাধ্যমে এ বিষয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে বিলিং প্র্যাকটিস পর্যালোচনা ও নিরীক্ষা, স্বচ্ছতা, অতিরিক্ত চার্জের রিফান্ড, জনসাধারণের সঙ্গে যোগাযোগ এবং নীতি সংস্কারের দাবিতে নোটিশটি পাঠানো হয়েছে।
আগামী ২৬ মে এর মধ্যে এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। এর ব্যত্যয় হলে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
নোটিশে বলা হয়েছে, বিদ্যুতের সিস্টেম লস ও চুরি কমাতে এবং ভোক্তাদের মধ্যে জ্বালানি-সংরক্ষণের অভ্যাসের কারণে প্রিপেইড মিটারের সুবিধা থাকা সত্ত্বেও, এই মিটারগুলি অর্জনের ক্ষেত্রে গ্রাহকেরা নানা সমস্যায় পড়ছেন। এই ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলি খোলা বাজারে পাওয়া যায় না বলে বিদ্যুতের গ্রাহকেরা একচেটিয়াভাবে অনুমোদিত সংস্থা এবং সংস্থাগুলি থেকে মিটার কিনতে বাধ্য হন। অধিকন্তু সীমিত প্রাপ্যতার কারণে প্রিপেইড রিচার্জ কার্ড কেনার চেষ্টা করার সময় গ্রাহকদের অসুবিধা এবং হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়৷ এবং ভোক্তাদের অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয়। যেমন- একক-ফেজ প্রিপেইড মিটারের জন্য প্রতি মাসে ৪০ বা তার বেশি টাকা এবং থ্রি-ফেজ মিটারের জন্য ২৫০ বা তার বেশি টাকা, এনার্জি বিল, ডিমান্ড চার্জ, ভ্যাট এবং অন্যান্য বাবদ ফি দিতে হয়।
এ ছাড়া প্রতিস্থাপিত মিটারের খরচ সম্পর্কে প্রায়ই তাদের জানানো হয় না; তাদের মাসিক বিলে কিস্তিতে মোট খরচ যোগ করা হয় না, সেটিও জানানো হয় না। এতে গ্রাহকদের বাড়তি ও গোপন চার্জের বোঝা সহ্য করতে হয়। এই চার্জ আরোপে নাগরিকদের আর্থিক কষ্টে পড়তে হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। এই ধরনের অনুশীলন পাবলিক ইউটিলিটি পরিসেবাগুলি প্রত্যাশিত মৌলিক আস্থা এবং ইক্যুইটি নষ্ট করছে।
নোটিশে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারের এ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়। এবং সমস্যা সমাধানে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা এবং বিলিং অনুশীলনের স্বাধীন নিরীক্ষার দাবি জানানো হয়। যাতে অতিরিক্ত এবং গোপন চার্জের বিষয়টি সংশোধন করা যায়।
নোটিশে আরও বলা হয়, বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারীর জন্য স্বচ্ছতা এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য স্বচ্ছ বিলিং অনুশীলন প্রয়োগ করতে হবে, কোন লুকানো ফি আরোপ করা যাবে না। পাশাপাশি প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারীদের ওপর অন্যায্যভাবে আরোপিত অতিরিক্ত চার্জের জন্য নেওয়া অর্থ তাৎক্ষণিক ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া লুকানো চার্জের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে এবং ভবিষ্যতে সকল নাগরিকের জন্য ন্যায়সঙ্গত আচরণ নিশ্চিত করতে শক্তিশালী নীতি সংস্কার প্রয়োজন।
আগামী ২৬ মে এর মধ্যে এসব বিষয় সমাধান করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হলে নোটিশ গ্রহিতাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ফোরামে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এনইউ