‘দেশে আবারও বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে’
২৩ মে ২০২৪ ১৩:৫০
ঢাকা: দেশে আবারও বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সকাল সাড়ে ১১ টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, ‘আবার ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ, দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারী দলের সন্ত্রাসীদের ন্যাক্কারজনক হামলা, নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, ফরমায়েশি রায়ে সাজা গ্রেফতারসহ বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। বাংলাদেশ যেন এখন কারবালার প্রান্তর।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আন্দোলনের গতিকে স্তিমিত করার জন্যই তাকে কারাগারে পাঠানোসহ দেশব্যাপী গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে। ডামি সরকার আবু আন্দোলনকে ভয় পায় বলেই নিপীড়ন-নির্যাতন ও গ্রেফতারের অব্যাহত রেখেছে।’
রিজভী বলেন, ‘ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ঝলককে শিল্পকলা একাডেমির সামনে ছাত্রলীগের গুন্ডারা বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে চাপাতি, হকিস্টিক ও রামদা দিয়ে রক্তাক্ত করেছে। সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির ওপর ক্যাম্পাসে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের গুন্ডারা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবির আখ্যা দিয়ে সবুজ বিশ্বাস নামে এক হিন্দু ছাত্রকে ছাত্রলীগের ক্যাডারর ব্যাপক মারধর করে হলছাড়া করেছে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ এখন মূর্তিমান আতঙ্ক। নারী ও শিশু নির্যাতন থেকে শুরু করে সব ধরনের অপকর্মের সঙ্গে এখন জড়িত তারা। এদের হাতে মানুষের জীবন অনিরাপদ। শেখ হাসিনার মগের মুল্লুকে এরা যেন ‘মগ দস্যু’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অপহরণ ও শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে এরা মানবতার শত্রুতে পরিণত হয়েছে।
রিজভী বলেন, ‘দেশে চলছে এক অর্থনৈতিক নৈরাজ্য। ব্যাংকগুলো টাকার জন্য হাহাকার করছে। ব্যাংক ঋণ বিতরণ করছে আমানতকারীদের অর্থ থেকে্। আবার ঐ ঋণের অর্থ ক্ষমতাঘনিষ্ঠ লুটেরারা ফেরত দিচ্ছে না। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, আবার চরম ডলার সংকটে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানীর জন্য এলসি খুলতে পারছে না।’
‘অন্যদিকে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ২৬১টি ষ্পোর্টস ইউটিলিটি ভেইকেল কেনার জন্য প্রধানমন্ত্রী মত দিয়েছেন। যার প্রতিটির মূল্য ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। গত ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচনের আগেই কেনার কথা ছিল; যা উৎকোচ হিসেবেই মানুষ বিবেচনা করেছে। সেই সময় এই ক্রয়ের বিষয়টি স্থগিত রেখে ডামি নির্বাচনে কর্মকর্তাদের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতাস্বরুপ এখন তাদের তা দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশ ও জনগণ অপাঙক্তেয়, শুধুমাত্র ক্ষমতাই আরাধ্য। সরকারের এই নীতি কতৃর্ত্ববাদী শাসনের এক চরম দৃষ্টান্ত’— বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্টের পররাষ্ট্র দফতরের দেওয়া স্যাংশনে সরকার বিমূঢ় ও স্তম্ভিত। যে সেনাপ্রধান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, ‘বিজিবির সবই লিথ্যাল অস্ত্র। কেউ আক্রমণ করলে জীবন বাঁচাতে গুলি করতে পারে।’ অর্থাৎ তিনি আন্দোলনরত নেতা-কর্মীদের ওপর গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন। পৃথিবীর সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে কোনো আধা সামরিক বাহিনীর প্রধান এ ধরনের বক্তব্য রেখেছেন কিনা, তা আমাদের জানা নেই।’
রিজভী বলেন, ‘যেকোনো দাবির প্রশ্নে জনগণের উত্তাল আন্দোলনে অংশগ্রহণরত শ্রেণি-পেশার মানুষ সবসময় ‘ইমিউনিটি অব নন-কমব্যাটেন্ট’। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ধৈর্যের সঙ্গে সেটি মোকাবেলা করেন। কারণ, আন্দোলনকারীরা সবাই নিরস্ত্র। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলমান ছাত্র আন্দোলন তার একটি উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। সেখানে অনেককে গ্রেফতার করা হলেও কাউকে গুলি করা হয়নি। জেনারেল আজিজের অপকর্মের দায় শেখ হাসিনাসহ ডামি আওয়ামী সরকারের। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ ও সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীররা আওয়ামী ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় গেষ্টাপো বাহিনীর ন্যায় ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণেও ভূমিকা রেখেছে তারা।’
সারাবাংলা/এজেড/এনইউ