বাংলাদেশের একাংশ নিয়ে চক্রান্ত চলছে: প্রধানমন্ত্রী
২৩ মে ২০২৪ ২১:০৯
ঢাকা: ভূরাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে বাংলাদেশের একাংশ নিয়ে এখনো নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নাম উল্লেখ না করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, চক্রান্ত এখনো আছে, ফিলিস্তিনের মতো বাংলাদেশেও একটা অংশ নিয়ে…। চট্টগ্রামে খ্রিষ্টান স্টেট বানাবে, বে অব বেঙ্গলে ঘাঁটি বানাবে। তার কারণ, বে অব বেঙ্গল ও ভারত মহাসাগর। এখানে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। এই জায়গার ওপর অনেকের নজর, যেটি আমি হতে দিচ্ছি না। এটাই আমার একটা অপরাধ।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
বিগত সময়ে অগ্নিসন্ত্রাস ও হরতাল-অবরোধ করে বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচন ঠেকানোর প্রসঙ্গ তুলে ধরেন জোটপ্রধান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বলেন, ‘ইলেকশন ঠেকানোর চেষ্টা করল। ইলেকশন ঠেকানোর জন্য আরও অনেকের মদত ছিল, আমি জানি। কিন্তু ইলেকশন ঠেকাতে পারেনি। আমরা ইলেকশন করে আবার সরকারে ফিরে এসেছি।’
‘২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে এলো। কিন্তু মাঝপথে তারা সরে গেল। সবচেয়ে বড় কথা— তারা একেকটি সংসদীয় আসনের বিপরীতে দুই-তিনজন করে তাদের প্রার্থী রাখল। কারণ প্রার্থী একজন লন্ডন থেকে আসছে, প্রার্থী একজন পুরানা পল্টন থেকে গেছে, আরেকজন গেছে গুলশান থেকে। তিন জায়গা থেকে তারা প্রার্থী দিয়েছে। ফলে তখন থেকে তারা ইলেকশনের বিরুদ্ধে,’— বলেন শেখ হাসিনা।
নির্বাচন ঠেকানো ইস্যুতেও বৈশ্বিক এক পরাশক্তি চেষ্টা করেছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘এরপরের যে ষড়যন্ত্র, ইলেকশন হতে দেবে না। তবে দেবে, আমার ক্ষমতায় আসতেও অসুবিধা হবে না, যদি আমি বাংলাদেশে কারও এয়ারবেজ করতে দিই, ঘাঁটি করতে দিই। তাহলে আমার কোনো অসুবিধা নেই। কোনো এক সাদা চামড়ার প্রস্তাব!’
তিনি বলেন, ‘আমি একই জবাব দিয়েছি। স্পষ্ট বলেছি, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি। দেশের অংশ ভাড়া দিয়ে বা কারও হাতে তুলে দিয়ে আমি ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমার ক্ষমতার দরকার নাই। যদি জনগণ চায় ক্ষমতায় আসব, না হলে আসব না। কথাগুলো বললাম, কারণ সবার জানা থাকা উচিত।’
আমার যুদ্ধ ঘরে-বাইরে সব জায়গায়— এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ অবস্থায় আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে ছেড়ে দিলাম।’
বাংলাদেশে এয়ারবেজ তথা বিমান ঘাঁটি গড়ে তোলা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘কার ওপর হামলা করবে? একটা দেশকে দেখানো হয়। কিন্তু সেটি তো আমি জানি। আর কোথায় যাবে? যে কারণে আমাদের কিছু সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এবং হবে, সেটাও আমি জানি। কিন্তু আমি ওটা পাত্তা দেই না। সোজা কথা, দেশের মানুষ আমার শক্তি। মানুষ যদি ঠিক থাকে আমরা আছি। আর দেশটার যে উন্নতি হচ্ছে এটাও অনেকের পছন্দ না।’
স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে আরও সুসংগঠিত হয়ে জনগণকে দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করানোর লক্ষ্যে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান জোট নেত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমাদের সবসময় লক্ষ রাখতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ছাড়া দেশের মানুষের কোনো কল্যাণ হবে না। গ্রেনেড হামলাকারী, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি দুর্নীতিবাজ— আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, এরা বিদেশের মাটিতে বসে সেই সুযোগ নিয়ে সেখান থেকে সরকার উৎখাতসহ নানা রকম হুমকি-ধমকি দেয়! কিন্তু যতক্ষণ জনগণ আছে আমাদের সঙ্গে, ওসব কেয়ার করি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসংযোগ যেন করতে না পারে। এটি যারা করবে তাদের কোনো ছাড় নেই। যতই মুরব্বি ধরুক আর যাই করুক, তাদের আমরা ছাড়ব না। পরিষ্কার কথা, মানুষের ক্ষতি যারা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।’
বৈঠকে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/একে