কখন-কোথায়-কত গতিবেগে আঘাত হানতে পারে ‘রেমাল’
২৫ মে ২০২৪ ২৩:৫১
ঢাকা: আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী রেমাল পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। যে কারণে সমুদ্রবন্দর থেকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত নামিয়ে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, রোববার মধ্যরাতের দিকে নিম্নচাপটি দেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, ঘূর্ণিঝড় রেমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এর পর এটি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, সাতক্ষীরাসহ ১৫টির জেলার দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করতে পারে। এ সময় পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুটের বেশি জলোচ্ছ্বাস নিয়ে আছড়ে পড়তে পারে।
আবহাওয়ার সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ১৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এ পরিণত হয়েছে।
এটি শনিবার (২৫ মে) সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মাদ আবুল কালাম মল্লিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি সর্বপ্রথম যেখানে আঘাত হানবে, সেখানের বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যখন সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা ২৬ দশমিক ৫ বা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকে, তখন ঘূর্ণিঝড়ের পরিবেশ তৈরি হয়।’
তিনি আর বলেন, “যদি কোনো নিম্নচাপ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার গতিবেগ অর্জন করে, তখন সেটাকে আঞ্চলিক ঝড় বলে মনে করা হয়। কিন্তু সেটি যদি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১৯ কিলোমিটার গতিবেগ অর্জন করে, তখন সেটিকে ‘সিভিয়ার সাইক্লোন’ বা ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। বাতাসের গতিবেগ যদি এর থেকেও বেশি হয়, তখন তা ‘ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোন’ বা ‘অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ রূপ নেয়। এর পরের ধাপ সুপার সাইক্লোন। যদিও রেমালের ক্ষেত্রে সে আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না।”
আবহাওয়া অধিদফতরের পর্যবেক্ষণ বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান এখন যেখানে তাতে এর কেন্দ্রটি বাংলাদেশের ওপর দিয়েই অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে সুন্দরবন এলাকা এবং বরিশালের পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলায় আঘাত হানতে পারে।
এ বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন আবহাওয়া মডেলের বরাত দিয়ে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমালের অগ্রভাগ রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।’
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় জোয়ারের সময় উপকূলে আঘাত হানলে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতা; ভাটার সময় আঘাত হানলে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এ সময় বাতাসের সম্ভব্য গড় গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার। বাতাসের সম্ভাব্য দমকা গতিবেগ থাকতে পারে ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
তিনি আরও জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী, ময়মনিসংহ, রংপুরে। এ ছাড়াও, বৃষ্টি হতে পারে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল, ভোলা, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, মাগুরা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, যশোর, ঝিনাইদহে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ থাকতে পারে ৪০০ থেকে ৬০০ মিলিমিটার পর্যন্ত।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে বৃষ্টিপাতের কথা বলেছে আবহাওয়া অধিদফতরও। সংস্থাটি তাদের পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আগামী তিন দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝড়-বৃষ্টি হবে। পাশাপাশি উপকূলীয় ১৫ জেলা প্লাবিত হওয়ার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। সেক্ষেত্রে ৫ ফুটের বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসের কথাও জানিয়েছে তারা। তবে ঘূর্ণিঝড়টি জোয়ারের সময়ে আঘাত হানলে জলোচ্ছ্বাস আর বেশি হবে। আর যেহেতু এটি ‘সিভিয়ার সাইক্লোন’ আকারে আঘাত করার আশঙ্কা রয়েছে, তাই বৃষ্টির পরিমাণও বেশি থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
সংস্থাটি তাদের বেশ কয়েকটি বিজ্ঞপ্তি ও পূর্বাভাসে জানিয়েছে, শনিবার সকাল থেকে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জেলায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জেলায় দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে রোববার সকালে দেশের সব বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম