Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উপকূলে আতঙ্ক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৬ মে ২০২৪ ১৬:৪০

জেলেপাড়ার সবাই নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটছেন। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

খুলনা: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি আজ সন্ধ্যার পর চূড়ান্ত আঘাত আনতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আগের দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই নতুন করে দুশ্চিন্তায় রয়েছে খুলনার উপকূলবাসী। দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে তারা আতঙ্কে রয়েছে।

রোববার (২৬ মে) সকাল থেকে জেলায় মেঘলা আকাশ আবার কখনও রোদের ঝিলিক, দমকা হাওয়া কখনও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এতে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা বাড়ছে উপকূলীয় খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলার মানুষের মধ্যে।

বিজ্ঞাপন

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে সারাদেশে লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআইডব্লিউটিএ। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে খুলনা জেলার নদী বন্দরগুলোকে বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে খুলনার রূপসা ঘাটে ট্রলার গুলোতে মানুষ পারাপার হতে দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, খুলনার কয়রা উপজেলার সাত ইউনিয়নের মধ্যে এখন চারটির বেড়িবাঁধ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে কয়রা সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চঘাট থেকে গোবরা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার, হরিণখোলা-ঘাটাখালী এলাকায় এক কিলোমিটার, ৬ নম্বর কয়রা এলাকায় প্রায় ৬০০ মিটার বাঁধ ধসে সরু হয়ে গেছে। মহারাজপুর ইউনিয়নের কাশিয়াবাদ, মঠেরকোনা, মঠবাড়ি, দশহালিয়া এলাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার ঝুঁকিতে রয়েছে। উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কাটকাটা থেকে গণেশ মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার, কাশিরহাটখোলা থেকে কাটমারচর পর্যন্ত ৭০০ মিটার, পাথরখালী এলাকায় ৬০০ মিটার এবং মহেশ্বরীপুর, শেখেরকোনা, নয়ানি, শাপলা স্কুল এলাকা, তেঁতুলতলারচর ও চৌকুনি এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটারের মতো বাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি, লস্কর, সোলাদানা ও গড়ইখালী এলাকার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানলে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোনা পানিতে পুরো এলাকা ভেসে যাবে এমন আতংকে আছে এই এলাকার মানুষ।

বিজ্ঞাপন

খুলনার উপকূলীয় এলাকায় ২০০৯ সালের ২৫ মে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আইলা। আইলার সেই ক্ষত কাটিয়ে ওঠার আগেই ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই কোমেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে মোরা, ২০১৯ সালের ৪ মে ফণী এবং ওই বছরের ১০ নভেম্বর আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। এ ছাড়াও ২০২০ সালের ২০ মে আম্ফান, ২০২১ সালের ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস, ২০২২ সালের ১২ মে আসনি, এরপর ওই বছরের ২৫ অক্টোবর সিত্রাং এবং সর্বশেষ ‘মোখা’ আঘাত হানে।

খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবিলায় খুলনায় উপকূলীয় তিন উপজেলাসহ জেলার ৯টি উপজেলায় ৬০৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।। এছাড়া তিনটি মুজিব কিল্লা ও পাঁচ সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবকও প্রস্তুত রয়েছে। প্রস্তত রাখা হয়েছে ঢেউটিন ও নগদ টাকা, শুকনো খাবার ও ওষুধ। প্রস্তুত রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ড।

কয়রা উপজেলার মদিনাবাদ এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমাল আঘাত হানলে কপোতাক্ষ নদের পাশের গ্রামটির সামনের ছোট্ট নিচু বেড়িবাঁধটি উপচে কিংবা ভেঙে লোনাপানিতে পুরো এলাকা ভেসে যাবে। তলিয়ে যাবে মাছের ঘের। অনেকে গরু-ছাগল নিয়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যাচ্ছেন।’

কয়রা উপজেলা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি মো. খায়রুল বলেন, ‘এ পর্যন্ত যতগুলো দুর্যোগ এসেছে, তার বেশিরভাগই মে মাসে। এ জন্য মে মাস এলে আতঙ্কিত থাকে উপকূলের মানুষ। বছরের মে মাস এলেই পাউবো কর্তৃপক্ষ বাঁধ মেরামতের তোড়জোড় শুরু করে। অথচ শীত মৌসুমে কাজ করার অনেক সুবিধা। বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের সুযোগ সৃষ্টির জন্য পাউবোর লোকজন অসময়ে এসে কাজ ধরেন। কয়রায় পানি উন্নয়ন বোর্ড এক অদৃশ্য শক্তির অধিকারী। যে জন্য বেঁড়িবাঁধ না ভাঙা পর্যন্ত তারা উপকূলে বেড়িবাঁধের দিকে তাকায়ও না।’

পাউবো খুলনা-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘সময়ের কাজ অসময়ে এসে করা হয়, এটা ঠিক না। আমরা ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের তালিকা করে বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠাই। সেটি অনুমোদনে সময় লাগে। আমার এরিয়ার মধ্যে ৬৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ১০ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এছাড়া তাৎক্ষণিক কোনো সমস্যা হলে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।’

খুলনার কয়রা দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছে আলী মোড়ল জানান, ‘ইউনিয়নের ঘড়িলাল থেকে চরামুখা খেয়াঘাট, খেয়াঘাট থেকে হলদিবুনিয়া পর্যন্ত বেশি ঝুঁর্কিপূর্ণ এলাকা। নদ-নদীতে পানির চাপ বাড়লে নড়বড়ে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) বিএম তারিক-উজ-জামান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আগে থেকে সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, ‘খুলনায় ১০ নম্বর মহাবিপৎ সংকেত দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বইছে দমকা হাওয়া। সন্ধ্যায় উপকূলে আঘাত হানবে রেমাল। এসময় বৃষ্টি আরও বাড়বে। বাতাসের গতিবেগ ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যেতে পারে।’

জলোচ্ছ্বাস। প্রতীকী ছবি

খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ৬০৪ সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ লোকজন যেন আশ্রয় নিতে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব সাইক্লোন শেল্টারে মোট ৩ লাখ ১৫ হাজার ১৮০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এছাড়া তিনটি মুজিব কিল্লায় ৪৩০ জনকে আশ্রয় ও ৫৬০টি গবাদি পশু রাখা যাবে। কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনার উপপরিচালক মামুন মাহমুদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের ৩০টি টিম গতকাল শনিবার সকাল ৬টা থেকে কাজ শুরু করেছে। ফায়ার সার্ভিসের মনিটরিং সেল, বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সারাক্ষণ সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত থাকবে। যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে সেবা গ্রহণের জন্য ফায়ার সার্ভিসের নিকটবর্তী ফায়ার স্টেশন, বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হটলাইন নম্বর ১৬১৬৩ অথবা খুলনা বিভাগীয় মনিটরিং সেল-এর জরুরি মোবাইল নম্বর ০১৭৩৩০৬২২০৯-এ ফোন করার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া জরুরি প্রয়োজনে ১০২ এবং ৯৯৯ হটলাইনে কল করে তথ্য জানানো যাবে।’

সারাবাংলা/একে

আতঙ্ক উপকূল খুলনা উপকূল ঘূর্ণিঝড় রেমাল

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর