Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খুলনায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত লোকালয়, পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৭ মে ২০২৪ ১৬:১২

খুলনা: ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে খুলনার কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলায় বাঁধ ভেঙে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলের ক্ষেত। ভেসে গেছে চিংড়ির ঘের, ভেঙে গেছে’ কাঁচা ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। উপকূলীয় উপজেলা কয়রার বেশ কিছু জায়গার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ ভেঙে অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার (২৬ মে) রাতে জোয়ারের তীব্র চাপে কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সিংহেরকোণা, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেলাল গাজীর বাড়ির সামনের বাঁধ ভেঙে গেছে। বাঁধের দুর্বল অংশের ওই ৩টি স্থানে প্রায় ১৫০ মিটার ভেঙে নদীর নোনা পানিতে প্লাবিত হয়েছে এলাকা। এছাড়া বাঁধের নিচু কয়েকটি জায়গা ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া পাইকগাছা উপজেলায় বাঁধ ভেঙে লতা, সোলাদানা, গড়াইখালী, চাঁদখালী, দেলুটি, রাড়ুলী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মানুষের ঘরবাড়ি উড়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। খাবার পানির উৎসগুলো তলিয়ে গেছে।

অপরদিকে রোববার রাতে দাকোপ উপজেলার শিবসা ও ঢাকী নদীর বাঁধ ভেঙে তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের কামিনীবাসিয়া গ্রামের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।

পাইকগাছা উপজেলার গড়াইখালী গ্রামের বাসিন্দা আজিজ শেখ বলেন, ‘বাঁধ ভাঙার কারণে বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বাঁধটি অনেক আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। সংস্কারকাজও চলছিল। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন হলে হয়তো বাঁধটি ভাঙত না।’

বিজ্ঞাপন

কয়রা উপজেলার মদিনাবাদ এলাকার নাইমুল ইসলাম বলেন, ‘দশালিয়া গ্রামের বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে গেছে। এ কারণে আমরা আতঙ্কে রয়েছি।’

দাকোপ উপজেলার তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ক্ষিতীশ গোলদার বলেন, ‘একই এলাকায় পাঁচটি পয়েন্ট ভেঙে এখন পানি ঢুকছে। কামিনীবাসিয়া গ্রামের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় পুরোটা লোনাপানি ঢুকে তলিয়ে গেছে।’

কয়রা উপজেলার মহারাজপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, ‘রোববার রাতের জোয়ারের চাপে ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় প্রায় ৫০ মিটার বাঁধ ভেঙে কপোতাক্ষ নদের পানি ঢুকে পড়েছে। এতে অন্তত দুটি গ্রাম ও কয়েক শ চিংড়িঘের তলিয়ে গেছে।’

একই উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছের আলী জানান, ‘ইউনিয়নের মাটিয়াভাঙ্গা এলাকায় রাতের জোয়ারে বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে বেশ কয়েকটি গ্রামে নদীর পানি প্রবেশ করেছে।’

পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহেরা নাজনীন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে পুরো উপজেলা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। কমপক্ষে ছয়টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। তবে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।’

কয়রার ইউএনও এবিএম তারিক উজ জামান বলেন, ‘কয়েকটি স্থানে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। এ ছাড়া ভারী বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার তাণ্ডবে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জেনেছি। তবে কোথাও কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ পাওয়া যায়নি।’

খুলনা আবহাওয়া অধিদফতরের ইনচার্জ আমিরুল আজাদ জানান, ‘সোমবার (২৭ মে) সকাল ৬টা পর্যন্ত ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। বর্তমানে জেলায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে, সঙ্গে হচ্ছে ভারি বৃষ্টি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমাল রোববার রাত সাড়ে ১০টায় খুলনাসহ উপকূলে আঘাত হানে। কয়রা উপকূলে ১০০ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগ রয়েছে। আর খুলনার অন্যান্য স্থানে ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে। সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে।’

খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, ‘জেলার সাইক্লোন শেল্টার গুলোতে লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের জন্য সেখানে শুকনো খাবার ও ওষুধের ব্যবস্থা রয়েছে।’

উল্লেখ্য, খুলনার উপকূলীয় এলাকায় ২০০৯ সালের ২৫ মে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আইলা। আইলার সেই ক্ষত কাটিয়ে ওঠার আগেই ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই কোমেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে মোরা, ২০১৯ সালের ৪ মে ফণী এবং ওই বছরের ১০ নভেম্বর আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। এ ছাড়াও ২০২০ সালের ২০ মে আম্ফান, ২০২১ সালের ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস, ২০২২ সালের ১২ মে আসনি, এরপর ওই বছরের ২৫ অক্টোবর সিত্রাং এবং সর্বশেষ ‘মোখা’ আঘাত হানে।

সারাবাংলা/একে

খুলনা জলোচ্ছ্বাস রেমাল

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর