গঙ্গাচড়ায় সব প্রার্থীই শক্তিশালী, রংপুর সদরে আ.লীগে বিভক্তি
২৮ মে ২০২৪ ১৩:২৮
রংপুর: উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ২৯ মে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। এরই ধারাবাহিকতায় রংপুরের সদর উপজেলা এবং গঙ্গাচড়া উপজেলার ভোটাররা আগামী ৫ বছরের জন্য উপজেলায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে মূল্যবান ভোট দিবেন। তবে এবারের নির্বাচনে শুধুমাত্র গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাচন বেশ জমজমাট, কারণ এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের জন্য আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। ইতিমধ্যে উপজেলায় নির্বাচনের প্রচারণা জমে উঠেছে। তবে সদর আসনে নেই তেমন কোনো নির্বাচনের আবহ।
গত প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে রংপুরের চারটি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছেন। এসব নির্বাচনে বিএনপি বা সমমনা দল অংশ না নেওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো আওয়ামী লীগ। কোনো দুশ্চিন্তা ছাড়াই অনায়াসেই উপজেলা দখলে নিতে পারে আওয়ামী লীগ।
তবে গঙ্গাচড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের জন্য আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় এবার লড়াই হবে ত্রিমুখী। তাই ভোটারদের মধ্যেও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে খানিকটা।
দলীয় প্রার্থী বাছাই নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা বিপাকে পড়েছেন। এই দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী দুজন ও বিএনপির দুজন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় কর্মী–সমর্থকেরা দ্বিধান্বিত। তবে জাতীয় পার্টির একজন প্রার্থী হওয়ায় দলীয়ভাবে তারা কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন মোট সাতজন। বাকি দু’জনের দলীয় পদ নেই।
এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন গঙ্গাচড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন (কাপ-পিরিচ) এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম (মোটরসাইকেল)।
আর বিএনপির উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সদস্য মোকাররম হোসেন (ঘোড়া) এবং উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুজ্জামান প্রামাণিক (আনারস)।
অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির নেতা মোস্তাফিজার রহমান এবং স্বতন্ত্র অন্য দুই প্রার্থী কামেল শেরাফী মাহবুব (চিংড়ি মাছ) ও সাইদুজ্জামান (হেলিকপ্টার)।
তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করায় বিভক্ত হয়ে পড়েছেন নেতা-কর্মীরা। এতে বেড়েছে দলের মধ্যে বিভক্তি ও নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ভোটের মাঠে বিরাজ করছে উত্তেজনা।
রুহুল আমিনের দাবি দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী তারই পক্ষেই কাজ করছেন। এখানে কোনো দলীয় বিভেদ কিংবা দলের ভোট ভাগাভাগি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এবারও তিনিই নির্বাচিত হবেন।
আওয়ামী লীগের মতই একই অবস্থা বিএনপিতেও। বিএনপির দুই নেতা প্রার্থী হওয়ায় ভেতরে-ভেতরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ভোটের কাজে অংশ নিলেওনেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এরপরও বিএনপির দুই প্রার্থীর থেকে একজন বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গঙ্গাচড়া উপজেলায় জাতীয় পার্টির অবস্থা তেমন ভালো না হলেও এবার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। উপজেলা নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমানের আশা জনগণ জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষেই থাকবে।
এদিকে সদর উপজেলায় ক্ষমতাসীন দলের পাঁচজন নেতা প্রার্থী হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন তারা। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন (হেলিকপ্টার); সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা কমিটির সদস্য ফিরোজ কবির চৌধুরী (দোয়াত কলম); জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম (টেলিফোন); জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আমিনুর রহমান (ঘোড়া) ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাব্বির আহমেদ (কাপ পিরিচ)।
ক্ষমতাসীন দলের পাঁচজন নেতা প্রার্থী হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে আছে চাপা ক্ষোভ। প্রকাশ্যে খুব একটা কিছু বলতে চাচ্ছেন না তৃণমূলের অনেকেই। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনের দাবি, এবার দলীয় প্রতীক না থাকায় কর্মীরা যাকে পছন্দ করবেন, তার পক্ষেই ভোট করতে পারবেন। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে একমাত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মাসুদ নবী হওয়ায় উপজেলাটিতে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। রংপুর সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সংসদীয় এলাকা। নিজেদের প্রার্থীকে জয়ী করতে মরিয়া সবাই।
জাতীয় পার্টি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘দলের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল হলেও আবার নতুন করে চাঙা হয়ে উঠেছে। এবার এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হবেন আশা রাখি।’
রংপুর সদর উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন ইকবাল হোসেন (আনারস) ও আবদুল কাউয়ুম (মোটরসাইকেল)। ভোটার টানতে নিজেদের মতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারাও।
রংপুর জেলার জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মোতাহসিম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ সুন্দর রয়েছে। কারও কোনো অভিযোগ নেই।’
তিনি জানান, তিনস্তরের নিরাপত্তার পাশাপাশি কেন্দ্রে কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পুলিশ ও আনসার বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং র্যাব ও বিজিবির টহল রয়েছে। যদি কেউ নির্বাচনের আচরণবিধি ভঙ্গ করেন তাহলে নির্বাচন কমিশন আইন অনুসারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/এমও
আওয়ামী লীগ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন গঙ্গাচড়া টপ নিউজ বিভক্তি শক্তিশালী