উপকূলজুড়ে ক্ষতচিহ্ন, ঝড়ের পর এবার টিকে থাকার লড়াই
২৮ মে ২০২৪ ১৪:১৫
খুলনা: ঘূর্ণিঝড় রেমাল চলে গেলেও খুলনার উপকূলজুড়ে রেখে গেছে তার ক্ষতচিহ্ন। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে খুলনার কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলায় বাঁধ ভেঙে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। ভারি বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলের ক্ষেত। ভেসে গেছে চিংড়ির ঘের, ভেঙে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। ঘূর্ণিঝড় চলে গেলেও সামনে এবার টিকে থাকার লড়াই উপকূলবাসীর। এই অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ।
মঙ্গলবার (২৮ মে) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালে আক্রান্ত হয়েছে ১২ হাজার ৭১৫ হেক্টর জমির ফসল। ধান, পাট, সবজি ও তরমুজ আবাদ ছিল এসব জমিতে।
পাশাপাশি ভেসে গেছে আট হাজার ৮৭৫টি পুকুর ও মাছের ঘের। এতে মৎস্যজীবীদের ক্ষতি অন্তত ১৬৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
খুলনায় ৭৬ হাজার ৯০৪টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়নের ৫২টি ওয়ার্ড সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে খুলনা মহানগরীতেও অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৫২ হাজার ২০০ মানুষ।
উপকূলের যেসব এলাকায় বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলো সংস্কারের জন্য কাজ করছে স্থানীয় জনগণ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
স্থানীয়রা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে গেছে খুলনার উপকূলবাসীর জীবন। তাদের সামনে একটা দুর্যোগ কাটতে না কাটতেই আরেকটি দুর্যোগ এসে হাজির হয়। দুর্যোগ-দুর্বিপাকের সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছে এই জনপদের লাখো মানুষ। কিন্তু এত বেশি দুর্যোগ মোকাবিলা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তারা। পাউবো নির্মিত বেড়িবাঁধ বারবার ভেঙে গিয়ে লোনা পানি ঢুকে পড়ছে জনপদে। ঘরবাড়ি প্লাবিত হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে জমির ফসল।
খুলনার উপকূলীয় এলাকায় ২০০৯ সালের ২৫ মে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আইলা। আইলার সেই ক্ষত কাটিয়ে ওঠার আগেই ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই কোমেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে মোরা, ২০১৯ সালের ৪ মে ফণী এবং ওই বছরের ১০ নভেম্বর আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল।
এছাড়াও ২০২০ সালের ২০ মে আম্ফান, ২০২১ সালের ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস, ২০২২ সালের ১২ মে আসনি, এরপর ওই বছরের ২৫ অক্টোবর সিত্রাং এবং সর্বশেষ ‘মোখা’ আঘাত হানে।
কয়রা উপজেলার মদিনাবাদ এলাকার আসলাম শেখ বলেন, ‘দশালিয়া গ্রামের বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। আমাদের উপকূলবাসীর একটাই দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ।’
দাকোপ উপজেলার তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ক্ষিতীশ গোলদার বলেন, ‘একই এলাকায় পাঁচটি পয়েন্ট ভেঙে এখন পানি ঢুকছে। কামিনীবাসিয়া গ্রামের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় পুরোটা লোনাপানি ঢুকে তলিয়ে গেছে।’
কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছের আলী বলেন, ‘ইউনিয়নের মাটিয়াভাঙ্গা এলাকায় রাতের জোয়ারে বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে বেশ কয়েকটি গ্রামে নদীর পানি প্রবেশ করেছে। আমরা ত্রাণ নয়, টেকসই বাঁধ চাই। টেকসই বাঁধ হলেই আমরা বেঁচে থাকতে পারব।’
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে খুলনায় ১৮১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।’
দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, ‘উপজেলার কয়েকটি স্থানে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। তবে কোথাও কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ পাওয়া যায়নি।’
সারাবাংলা/এমও